হাফেজ মাওলানা ছানাউল্লাহ জমিরী: রমযানুল মুবারক। শ্রেষ্ঠত্ব মহিমা ও অফুরন্ত ফযীলতে উদ্ভাসিত একটি মাস। মুমিনের বহুল প্রতীক্ষিত এই পবিত্র রমযানুল মুবারক আগমন করে রহমত বরকত ও মাগফিরাতের সওগাত নিয়ে। বার্তা দিয়ে যায় সৌহার্দ সম্প্রীতি ও ভালবাসার। গোটা রমযানজুড়ে বয়ে যায় মুমিন জীবনে ঈমানী বসন্তের অবারিত সমীরণ। এ মাসকে ঘিরে সে সঞ্চয় করে গোটা বছরের ঈমানী আমলী ও রূহানী পাথেয়। অর্জন করে তাকওয়া ও খোদবীরুতার বৈশিষ্ট্য। ধন্য হয় মহান রবের নৈকট্য ও ভালবাসায় সিক্ত হয়ে। কিন্তু কিভাবে? আজ আমরা সে বিষয়েই কিঞ্চিৎ আলোচনা করার প্রয়াস চালাব- ইনশাআল্লাহ
রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। খায়ের ও বরকতের মাস। তাকওয়া অর্জন ও আমলে আগ্রগামী হওয়ার মাস। নেকী অর্জনের মাস। গুনাহ বর্জন এবং ক্ষমা লাভের মাস। প্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরার এবং সংযম সাধনার মাস। ভ্রাতৃত্ব চর্চার মাস। দয়া ও সহানুভূতির মাস। দেহমন শুদ্ধ ও পবিত্র করার মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আল্লাহ পাকের রহমত ও করণা বান্দার প্রতি অধিক নিবিষ্ট হয়, নেক ও কল্যাণের দিকে ধাবিত হওয়া সহজ হয়। জাহান্নামের কপাটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এ মাসে। গুনাহের তাড়না দমিত হয়। শয়তান এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে। এ মাসে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্ত করে থাকেন জাহান্নামের আগুন থেকে।
অতএব এ মাস আল্লহমুখী হওয়া,তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়া,তাকওয়া অর্জন করা এবং গুনাহ থেকে পাক-ছাফ হয়ে তাঁর নৈকট্য অর্জনের মোক্ষম সময়।কীভাবে বেশি থেকে আমলের মাধ্যমে নিজের ঈমানী যিন্দেগী দ্যুতিময় করে তোলা যায় এ মাস হল সেই চর্চা ও প্রচষ্টার উপযুক্ত মুহূর্ত। আর তাই তো রমযানের চাঁদ উঠতেই ঘোষণা হতে থাকে।
ওহে কল্যাণ অন্বেষী, তুমি সুসংবাদ গ্রহন কর,নেকীর পথে তুমি আরো অধিক অগ্রগতি হও। জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২
মাহে রমযানে যেকোনো ধরনের নেক ও কল্যাণের প্রতি ধাবিত হওয়ার রয়েছে বিশেষ ফযীলত। তবে আমরা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বিশেষ কিছু আমলের কথা উল্লেখ করব,যা এ মাসের কারণে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।
এক-
ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হচ্ছে রমযান মাসে রোজা রাখা। রোজা রাখা এ মাসের মূল আমল। আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর রমযানে মাসব্যাপী রোযা রাখা ফরয করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার। সূরা বাকারা ১৮৩
তো দেখা যাচ্ছে, রোযার মূল উদ্দেশ্যেই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। তাই আমার রোযা যেন আমার তাকওয়া অর্জনের উপলক্ষ হয়।-- এজন্য খুব গুরুত্বের সাথে রোযা রাখতে হবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমান এবং ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং সাওয়াবের প্রত্যাশা রেখে রমযান মাসে রোযা রাখবে,তার পূর্বপর গুনাহগুলো মাফ করেনদেওয়া হবে। সহীহ বুখারী,হাদীস ৩৮
ঈমান ও ইহতিসাবের উপলব্ধি জাগ্রত রেখে রোযা রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল এবং বান্দসর গুনাহ মাফের একটা বড় মাধ্যম।
দুই-
রমযানুল মুবারকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে, কিয়ামুল লাইল তথা ইবাদতের মাধ্যমে রমযানের রাতকেপ্রাণবন্ত রাখা। রমযান মাসের রাতের সকল ইবাদত বন্দেগী, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ যিকির, তিলাওয়াত, দুআ, দরূদ ইত্যাদি আমল গুরুত্বের সাথে আদায় করা। যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব তথা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও সাওয়াবের প্রত্যাশা রেখে কিয়ামুল লাইল করবে তার বিগত গুনাহসমূহ ক্ষমা করপ দেওয়া হবে। সহিহ বুখারী হাদীস ২০০৯, সহীহ মুসলিম ৭৫৯
তিন-
রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। অতএব এ মাসে কুরআনের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় ও নিবিড় করার মাস। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনিতেই নেক ও কল্যাণের ক্ষেত্রে উদার এবং অগ্রগামী ছিলেন। রমযান মাসে এক্ষেত্রে নবীজী আরো অগ্রগামী হতেন।
চার-
দুনিয়াবী অন্যান্য ঝামেলা কমিয়ে এ মাসে আমলের প্রতি যিকির আযকার ও তাওবা ইস্তিগফারের প্রতি মনোযোগী হওয়া। বিশেষভাবে কুরআন নিশে মশগুল থাকা এ মাসের অন্যতম আমল। এছাড়াও রমযানে প্রত্যেকটা ভালো কাজের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব ও সাওয়াব।
দয়াময় মালিক আমাদের সকলকে পবিত্র মাহে রামযানের যথাযথ মর্যাদা রক্ষা করে তাকওয়া,আত্মশুদ্ধি এবং তাঁর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দান করুন।আমিন
লেখক: মুতাখাস্সিস ফিল ফিকহিল ইসলামী, শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
কেএল/