আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় স্থাপিত আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সরবরাহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে আসা ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হয়।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে বাংলাদেশ গ্রিডের সঙ্গে সিংক্রোনাইজ করে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য পিজিসিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী মনাকষা থেকে রহনপুর হয়ে বগুড়া পর্যন্ত ১৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং বগুড়ায় ৪০০/২৩০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফরের ২ মাসের মাথায় ১১ আগস্ট আদানি পাওয়ারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে পিডিবি। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ভেতরেই একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার প্রস্তাব ছিল আদানির। কিন্তু সমঝোতার ২ বছর পর ২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে কাজ শুরু হয়।
এদিকে, সরকারি তথ্য বলছে, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই ঝাড়খন্ডে স্থাপিত আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির জন্য এই কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে।
আগামী ২৫ বছর এই কেন্দ্র থেকে অন্য কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে না। কেন্দ্রের একক উৎস থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ আন্তঃদেশীয় গ্রিডের মাধ্যমে যোগ হবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। ফলে অনেকাংশে কমবে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি।
এক্ষেত্রে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করে ভারতের ওড়িশায় আদানির নিজস্ব বন্দরে খালাসের পর রেল ওয়াগনে সেই কয়লা পৌঁছাবে গড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজির মাধ্যমে কয়লা পুড়িয়েই উৎপাদিত বিদ্যুৎ আসবে বাংলাদেশে।
ঝাড়খন্ডের গড্ডা থেকে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে শুরু করে বগুড়া পর্যন্ত পাওয়া যাবে এই বিদ্যুৎ। তবে এর জন্য নির্মাণ করতে হয়েছে ২৪৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন। যার ৯৫ কিলোমিটার পড়েছে ভারতে। বাকি ১৫০ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশ অংশে।
সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। ফলে এ বিদ্যুৎ যখন আসবে, তখন ব্যয়বহুল তেলচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা কমবে। এতে ভর্তুকিও কমবে।
বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, ‘তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎ সস্তা। ফলে এই বিদ্যুৎ আমদানি দেশের জন্য লাভজনক। আদানির বিদ্যুৎ এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন কমবে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে থাকা বিদ্যুতের যে ঘাটতি হয়, তা থেকেও পরিত্রাণ মিলবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি ও লো-ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান মিলবে।’
এদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লার দাম বেশি না ধরা এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানানো হয় পিডিবির পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ২৩ ফেব্রুয়ারি পিডিবির প্রতিনিধি ও চেয়ারম্যানের আলোচনা হয়। পিডিবির দাবি নিয়ে আলোচনা চলবে এবং সাশ্রয়ী ও প্রতিযোগিতামূলক দামেই বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা জানান আদানি গ্রুপের প্রতিনিধিরা।
-এটি