হাছিব আহমদ ।।
শিক্ষার্থী -মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আমরা জানি বাঙালি জাতিসত্তার এক অনন্য পরিচায়ক বাংলা ভাষা, ইতিহাসের পাতায় রক্তকালির আঁচড়ে লেখা রয়েছে আমাদের ভাষার প্রতি বিশেষ অনুরক্তি। আজ দীর্ঘ সময় স্রোত অতিক্রম করেছি, দিনে দিনে পেরিয়েছে ৭০ বছর।
ভাষার জন্য আত্মদান পৃথিবীর কাল পরিক্রমায় বিরল এক দৃষ্টান্ত, বিস্ময়ের সাথে তাবত দুনিয়াবাসী জ্ঞাত; বাঙালির সাহস-আত্মত্যাগের গাঁথায়। আমাদের পূর্বসূরিদের বীরত্বগাঁথায় আমরা গর্বিত, কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থান উপলব্ধি করলে দেখা যায় 'বাংলা ভাষা' নিয়ে জাতিগতভাবে আমাদের যে আত্মত্যাগ সেই অনুযায়ী তার ফলাফল খুব-একটা যুৎসই হয়নি এমনকি তার বাস্তব চিত্র আমাদের মাঝে অনুপস্থিত, শিক্ষা ব্যবস্থায় থেকে শুরু করে দাপ্তরিক পর্যায়ে বাংলাভাষার প্রাধান্য যথাযথ ভাবে প্রতিষ্ঠা হয়নি।
বড় আক্ষেপের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে বা ৫২'র আজ ৭০ বছর পাড় হওয়ার পরেও সময়ের তুলনায় বাংলা ভাষায় সেই অর্থে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষনায় বাংলা ভাষার প্রসার নেই বললেই চলে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশসমূহে তে বটেই বাংলাদেশের সমসাময়িক দেশ গুলোতে তাদের নিজেদের মাতৃভাষায় দর্শন, বিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, প্রকৌশলবিদ্যার মতো বিষয়গুলো পড়ানো হয়।
গবেষণার ক্ষেত্রে তো বাংলা ভাষা এক রকম অঘোষিত ভাবে গ্রহণযোগ্য এই নয় এমন দশা, বলা হয়ে থাকে বাংলাতে বিষয়বস্তুর উৎসের অভাব নেই বললেই চলে; উৎস থাকবেই বা কেন সেই অর্থে তো চর্চায় হয়নি; নানামুখী জ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলোর তো অনুবাদই হয়নি।
অমর একুশের আত্মত্যাগী শহীদদের আত্মদান বাংলা ভাষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই তা সার্থক হবে, অন্যথায় এই মহান শহীদদের আত্মদানের মহৎ উদ্দেশ্য সাধন হবেনা। তাই আমাদের প্রাণের ভাষা-মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার পূর্ণ মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সর্বক্ষেত্রে মাতৃভাষার চর্চা ও প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তা করা গেলেই মূলত আত্মত্যাগী বীরদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্ণতা পাবে।
ছোট্ট স্বপ্ন পরিবারও এমনি আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। ভাবতে অবাক লাগে যে ভাষার প্রতি কতটা আবেগ ও ভালবাসা থাকলে নিজের শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ছিনিয়ে আনতে পারে তার প্রমাণ বায়ান্নর ভাষা শহীদরা।আমাদের রফিক, সালাম,বরকত ও শফিকরা।
আমাদের দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষা সচেতনতার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। নতুন প্রজন্ম বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি সব ভাষা একত্রে বলছে ও লিখে কোনো ভাষাতেই সুনির্দিষ্ট ভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না,নির্দিষ্ট ভাবে ধারনা নিতে পারছেনা তাই বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সবার প্রতি সচেতনতা তৈরির বিকল্প কিছু হতে পারে না।
একুশের চেতনায়, ভাষা আন্দোলনের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে আমাদের তরুন প্রজন্মকে। আমরা মাতৃভাষা ছিনিয়ে আনতে পারলেও এখনো সম্পূর্ণ মর্যাদা দিতে পারিনি। ভাষার মাসে একটাই প্রত্যাশা মাতৃভাষাকে যথার্থ সম্মান দিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। তাই আমাদের উচিত মাতৃভাষা বাংলাকে শ্রদ্ধা করা এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা।
হোক বক্তৃতা হোক ডিবেট হোক সংলাপ চাই প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে যাক বাংলা ভাষার দক্ষতার সঠিক প্রয়োগ তাহলেই বর্তমানের তরুন লেখক ও প্রজন্ন বাংলা ভাষাকে নিয়ে পৃথিবীর মাঝে গর্বের সাথে মাথা উচু করে দাড়াতে শিখবে তাই বর্তমান তরুণ ছাত্রসমাজের উচিত বাংলা ভাষার সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানা ও পৃথিবীর সর্বত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা, সম্মান ও প্রয়োগের প্রতিষ্ঠিত করা। সর্বোপরি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা উচিৎ। চাই ভাষা হোক উন্মুক্ত, হোক প্রতিবাদের ধ্বনি।
-এটি