আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইউরোপের উত্তর-পশ্চিমের একটি দেশ ডেনমার্ক। দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কোপেনহেগেন। ঐতিহ্যগত দিক থেকে ডেনমার্ক স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ। স্কটল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমের ১৮টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ফারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়গুলো ডেনমার্ক নিয়ন্ত্রণ করে। এর রাষ্ট্রীয় ভাষা ‘ড্যানিশ’।
সিআইয়ের তথ্য অনুসারে ৪৩ হাজার ৯৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে ৫৯ লাখ ২০ হাজার ৭৬৭ জনের বেশি লোক বসবাস করে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি লুথারীয় খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী। মুসলিমরা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। দেশটিতে সাড়ে তিন লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার ৫.৫ শতাংশ।
মূলত ক্রুসেডের (ধর্মযুদ্ধ) সময় (১০৯৫-১২৯১) থেকে মুসলিমদের সঙ্গে ডেনমার্কের সংযোগ তৈরি হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে দেশটিতে মুসলিমদের যাতায়াত শুরু হয়। গত শতাব্দীর ৫০-এর দশক থেকে এখানে অভিবাসী মুসলিমদের আগমন ঘটে। ১৯৬৭ সালে কোপেনহেগেনের হাভিডোভরে তৈরি হয় প্রথম মসজিদ। বিভিন্ন শহরে ছোট ছোট মসজিদ থাকলেও মুসলিমদের সংখ্যা অনুসারে বড় মসজিদের ব্যাপক চাহিদা ছিল।
ডেনমার্কের সর্ববৃহৎ মসজিদ : ডেনমার্কের সর্ববৃহৎ ও প্রথম মিনারবিশিষ্ট মসজিদ হলো কোপেনহেগেন গ্র্যান্ড মসজিদ, যা হামাদ বিন খলিফা সিভিলাইজেশন সেন্টার (এইচবিকেসিসি) নামে পরিচিত। মসজিদটি ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদগুলোর একটি। কাতারের সাবেক আমির হামাদ বিন খলিফা আল-থানির ২৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানে মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। ২০১৪ সালের ১৯ জুন বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ড্যানিশ ইসলামিক কাউন্সিল মসজিদটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে।
মসজিদের আয়তন : কোপেনহেগেন গ্র্যান্ড মসজিদ কমপ্লেক্সের মোট আয়তন ছয় হাজার সাত শ বর্গমিটার (প্রায় ৭২ হাজার ১১৮ বর্গফুট)। মসজিদটি তিন হাজার মুসল্লি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন। বাইরের আঙিনায় আরো দেড় হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। এর নকশা করেন ড্যানিশ স্থপতি জ্যান ওয়েনজেল ও লার্স টাক্সেন। মসজিদের পাশাপাশি এখানে রয়েছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, টেলিভিশন স্টুডিও, রেস্তোরাঁ, ক্লাসরুম, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ব্যায়ামাগারসহ অফিস, মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার। মসজিদের সামনে রয়েছে ২০ মিটার উচ্চতার একটি মিনার। বর্তমানে মসজিদের তত্ত্বাবধান করছে ড্যানিশ ইসলামিক কাউন্সিল (ডিআইআর)।
মসজিদের উদ্বোধনকালে কাতার সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশ নেন। মসজিদটি সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংযোগ স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেছিলেন কাতারের আওকাফ ও ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী গাইস বিন মুবারক আল-কুওয়ারি।
তিনি বলেছিলেন, ‘এই প্রকল্প পারস্পরিক বিশ্বাস গড়ার সেতুবন্ধ হবে এবং ডেনমার্ক ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে একটি বাতিঘর হিসেবে ভূমিকা রাখবে।’
ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লিনা কোহলি জানিয়েছেন, ২০০৬ সালে দেশটিতে ১১৫টি মসজিদ ছিল। এক দশক পর ২০১৭ সালে দেশটিতে মসজিদের সংখ্যা বেড়ে ১৭০টি হয়। এর মধ্যে তুরস্কের দিয়ানাত ওয়াকফ বিভাগ ২৯টি মসজিদের তত্ত্বাবধান করছে। ২০১৫ সালে ইমাম আলী মসজিদ ইরানের অর্থায়নে তৈরি হয়। ক্রমবর্ধমান মুসলিমদের সংখ্যাকে মসজিদের বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মনে করা হয়। অবশ্য দীর্ঘদিন যাবৎ মসজিদ নির্মাণে বিদেশি অর্থায়নের বিরোধিতা করছে ড্যানিশ পিপলস পার্টিসহ দেশটির কট্টরপন্থী রাজনৈতিক দল।
-এসআর