আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতের রাজধানী লাসায় অবস্থিত হিবালিন মসজিদটি পৃথিবীর অন্যতম উঁচু স্থানে অবস্থিত মসজিদ। এটি ‘গ্রেট মসক অব লাসা’ নামেও পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬৫০ মিটার উঁচুতে এর অবস্থান। হিবালিন মসজিদের প্রথম নির্মাণ ১৭১৬ খ্রিস্টাব্দে। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতীয় বিদ্রোহের সময় মসজিদে অগ্নি সংযোগ করা হয়। চীনের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মসজিদ কমিটি অফিস ও কৃষি সহযোগিতা অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমরা পুনরায় এই মসজিদে নামাজ আদায়ের সুযোগ লাভ করে। মসজিদের বর্তমান কাঠামোটি সে সময়েই নির্মিত হয়।
লাসা গ্রেট মসক বা হিবালিন মসজিদের প্রবেশপথ তিনটি। মসজিদের মোট আয়তন দুই হাজার ৬০০ বর্গমিটার। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ বর্গমিটার মসজিদের ভেতরে অবস্থিত। বাকিটা মসজিদ প্রাঙ্গণে। মসজিদ ভবনের মধ্যে একটি প্রার্থনা কক্ষ, পাই ভবন, বাংকার ভবন, অজুখানা, গোসলখানা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা আছে। মূল প্রার্থনা কক্ষের আয়তন ২৮৫ বর্গমিটার।
তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী জ্যাং স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ভবনে স্থানীয় ও ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। তিব্বতের ঐতিহ্যবাহী বৃত্তাকার খিলানের ওপর ইসলামী রীতিতে ফুল-লতা-পাতার নকশা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের খেলাফতকালে (৭১৭-৭২০) চীন ও তিব্বতে ধর্ম প্রচারের জন্য একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুরোধ পান। তাই তিনি সালিত বিন আবদুল্লাহ আল-হানাফিকে তিব্বতে প্রেরণ করেন। তিনি সেখানকার মানুষের মধ্যে দ্বিনের দাওয়াত প্রচার করেন।
মুসলিম শাসক মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ সালে সিন্ধু বিজয় করলে তিব্বতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়। আব্বাসীয় মুসলিম শাসনামলে তিব্বত ও ইসলামী বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহাল ছিল। অষ্টম শতাব্দী থেকে তিব্বতের স্বর্ণ মুসলিম বিশ্বে রপ্তানি হতো। দশম শতাব্দীতে ফারসিতে লিখিত ‘হুদুদ আল-আলম’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, তিব্বতের কেন্দ্রীয় শহর ‘লাসাতে’ একটি মসজিদ ছিল। যদিও এই শহরে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল খুবই কম।
তিব্বতি মুসলমানদের বংশধারা মিশ্রিত। তাদের পূর্বপুরুষরা কাশ্মীর, লাখাদ ও মধ্য এশিয়া থেকে তিব্বতে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। তারা সেখানকার তিব্বতি মহিলাদের বিয়ে করে। এভাবে মুসলমানরা তিব্বতের সমাজের অংশে পরিণত হয়। তিব্বতের বৌদ্ধ নেতারা সাধারণত সহিষ্ণু।
সেখানকার মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির প্রতি বৌদ্ধ নেতারা উদার মনোভাব পোষণ করেন। পঞ্চম দালাই লামার (১৬১৭-১৬৮২) শাসনামলে মুসলমানরা ধর্মীয়, আইনগত, শিক্ষা, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক অধিকার ভোগ করতেন। পঞ্চম দালাই লামা একটি মসজিদ ও গোরস্তানের জন্য মুসলমানদের কিছু জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন।
মুসলমানরা তাদের ধর্মীয়, আইনগত ও শিক্ষা-সংস্কৃতি বিষয় ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে পারত। মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ বিবাদ-কলহ বা বিরোধ-মীমাংসার জন্য তারা নিজস্ব ইসলামী আইনের প্রয়োগ করতে পারত। তারা সরকারের পক্ষ থেকে কর অবকাশও লাভ করেছিল। সূত্র:কালের কণ্ঠ
-এসআর