আদিয়াত হাসান: ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার শাইখুল হাদীস ও প্রধান মুফতি, প্রবীণ আলেম, ফকিহুদ্দীন মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ অসুস্থ৷
জানা যায়, প্রবীণ এ আলেম বার্ধক্যজনিত নানা রোগসহ বুকের ব্যাথায় ভোগছেন। গত কয়েকদিন ধরে তার এ বুকের ব্যাথা বেড়ে গেছে। আসতে পারছেন না মাদরাসায়ও। মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহর সুস্থতা কামনায় দোয়া চেয়েছেন তার পরিবার।
মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ একাধারে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতি ও শায়খে সানী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি, ইসলামিক ফিকহ বোর্ড বাংলাদেশের পৃৃৃৃষ্ঠপোষক এবং চট্টগ্রামের সেচ্ছাসেবী দ্বীনি সংগঠন সালসাবিলের প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি ১৯৪১ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার নাইখাইন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম মুহাম্মদ ইসা। তার নানা মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ হাসান রহ. ছিলেন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিতা।
তিনি ধার্মিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় শৈশবকালেই নিজ পরিবার থেকে ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। ৭ বছর বয়সে পিতার কাছে কুরআন শরীফের নাজেরা শেষ করেন। ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে ১০ বছর বয়সে কুরআন শরীফের হেফজ সমাপ্ত করে কিতাব বিভাগে অধ্যায়ন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে ২১ বছর বয়সে তিনি অত্র জামিয়া হতে দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করেন। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি পাকিস্তান গমন করে জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোরে ভর্তি হন। সেখানে দাওরায়ে হাদীসের কিতাবাদি আবারও অধ্যায়ন করেন। এখানে তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভি রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা রাসূল খান রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা ফয়েজ আলী শাহ রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা জামিল আহমদ থানভী রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা আবদুর রহমান আম্রছড়ি রাহিমাহুল্লাহ, মাওলানা উবায়দুল্লাহ আম্রছড়ি রাহিমাহুল্লাহসহ প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তি।
তারপর তিনি পাকিস্তানের মুলতান শহরে চলে যান। এখানের প্রসিদ্ধ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় খাইরুল মাদারেসে ভর্তি হয়ে ওস্তাজুল মাকুলাত মাওলানা মুহাম্মদ শরীফ কাশ্মীরি রাহিমাহুল্লাহ’র তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর পরবর্তী কিতাবাদি অধ্যায়ন শুরু করেন। সমাপনী পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য তার শিক্ষক তাকে “বাঙ্গাল কা খরকে আদত” (বাঙালি ছাত্রদের বিরল প্রতিভা) উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর দারুল উলুম করাচীতে মুফতি শফী উসমানীর তত্ত্বাবধানে ফতোয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এখানে মুহাম্মদ তাকি উসমানী তার সহপাঠী ছিলেন।
১৯৬৮ সালে দেশে প্রত্যাবর্তন করে তিনি আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরিতে অধ্যাপনা শুরু করেন। দীর্ঘ ২৩ বছর অধ্যাপনা করার পর হাজী মুহাম্মদ ইউনুস রাহিমাহুল্লাহ’র অনুরোধে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামিক ফিকহ একাডেমি বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষক, সালসাবিল সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা এবং কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের সহ-সভাপতি।
তিনি তার নানা চট্টগ্রামের জিরি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠিতা শাহ আহমদ হাসান রাহিমাহুল্লাহর অসমাপ্ত কাজ ‘মাশায়েখে চাটগামী’ সমাপ্ত করেছেন, যা ২ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তার রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে, ১.যুগোপযোগী দশ মাসায়েল (আরবি), অনুবাদঃ হুমায়ুন খবির খালভী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ২.মাযহাব ও মাযহাবের প্রয়োজনীয়তা, ৩.তাসকীনুল খাওয়াতীর ( ব্যাখ্যাগ্রন্থ), ৪.মহিমান্বিত রমজান, ৫.মাসায়েলে রমজান, ৬.নাফহাতুল আহমদিয়া ফি খুতুবাতিল মিম্বারিয়া (আরবি), অনুবাদঃ মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ইত্যাদি। তার সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘গায়রে মুকাল্লিদের ইন্টারভিউ-১।’ সূত্র: কওমি পিডিয়া
কেএল/