হুসাইন আহমাদ খান: দিবস উদযাপনকে উৎসাহিত করে না ইসলাম । বরং ক্ষেত্রবিশেষ অনুৎসাহিত ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। অনুৎসাহিত করে এজন্য যে, সাধারণত দিবস উদযাপনের মধ্যে দীনী বা দুনিয়াবী কোন উপকার বা কল্যাণ থাকে না। কেননা এতে সাধারণত নিছক আনন্দ-উল্লাস ও অর্নথক কথা ও কাজ হয়ে থাকে, যা ইসলাম অনুমোদন করে না।
কুরআনে কারীমে এসেছে- ‘আর যখন তারা(মুমিনগণ) অর্নথক কাজের সম্মুখীন হয় তখন তারা তা সতর্কতার সাথে পরিহার করে চলে।’(সূরা ফুরকান: ৭২) একইভাবে হাদিসে এসেছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির ইসালামের সৌন্দর্য হলো, অর্নথক কথা ও কাজ পরিত্যাগ করা।( ইবনে মাজাহ:৩৯৭৬) আর দিবস উদযাপনকে নিষিদ্ধ করার অন্যতম কারণ হলো, এতে সংঘটিত হারাম কর্মকাণ্ড।যেমন নাচ-গান, অশ্লীলতা-বেহায়পনা ও বেপর্দা ইত্যাদি।
আমাদের দেশে যে দিবসগুলো ঘটা করে পালন করা হয় সেগুলোর অন্যতম হলো, থার্টিফার্স্ট নাইট। প্রতি ইংরেজি-বর্ষের সূচনালগ্নে পালিত হয় এ দিবসটি। সন্দেহ নেই, থার্টিফার্স্ট নাইট একটি বিজাতীয় সংস্কৃতি। আর বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন ও তা মনেপ্রাণে গ্রহণ করা ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসালামে বরং বিজাতীয়দের বিপরীত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ইয়াহূদীদের বিপরীত করো।’(আবু দাউদ:৬৫২) সুতরাং বিজাতীয়রা যেহেতু এটা পালন করে থাকে তাই আমাদের জন্য তা পালন করা কোনভাবেই জায়েয হবে না।
অপর এক হাদিসে বিধর্মীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা সম্পর্কে চরম হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে সে তাদেরই দলভূক্ত গণ্য হবে’(আবু দাউদ: ৪০৩১) অর্থাৎ এমন করার দ্বারা সে যেন ইসলামের গণ্ডি থেকেই বেরিয়ে যায়! সুতরাং এদিক থেকেও এটা উদযাপন করা নিষিদ্ধ সাব্যস্ত হয়।
উপরন্তু এই দিবসকে ঘিরে যা যা করা হয় তার প্রায় সবই ইসলামে নিষিদ্ধ- একজন মুসলমানের জন্য সেগুলো করা কোনভাবেই জায়েয নয়।যেমন পটকা ফাটানো, নাচ-গান, নারী-পুরুষ অবাধ মেলামেশা, বেহয়াপনা ও অশ্লীলতা ইত্যাদি। এমনকি ইভটিজিং ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটার কথাও শোনা যায়। অথচ ইসলামে এগুলোর কোনটাই বৈধ নয়।
কুরআনে কারীমে এসেছে, ‘আর তোমরা যিনা ও ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না।’(সূরা বনী ইসরাইল:৩২)
এরই ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘চোখের যিনা হলো(হারাম জিনিস) দেখা, কানের যিনা হলো,(অশ্লীল কথাবার্তা) শোনা, জিহ্বার যিনা হলো, (অশ্লীল কথাবার্তা) বলা, হাতের যিনা হলো, (অবৈধ জিনিস) ধরা আর পায়ের যিনা হলো, (অবৈধ স্থানে) গমন করা।’(বুখারী:৬২৪৩)
একইভাবে গানবাদ্য হারাম হওয়া সম্পর্কে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘অচিরেই শেষযুগে ভূমিধস, পাথরবর্ষণ ও বিকৃতি দেখা দেবে। জিজ্ঞেস করা হলো, কখন হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকা অধিকহারে প্রকাশ পাবে।’(ইবনে মাজাহ:১৩৫০)
তাই প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য অপরিহার্য হলো, থার্টিফার্স্ট নাইটসহ এ জাতীয় সকল দিবস উদযাপন করা থেকে বিরত থাকা এবং অপর মুসলিম ভাইকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া।
কেএল/