আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের ষষ্ঠ মাস হলো জমাদিউস সানি। এই জোড়া মাস দুটিকে বলা হয় জুমাদাল উলা ও জুমাদাস সানিয়াহ বা প্রথম শীত ও দ্বিতীয় শীত; অর্থাৎ শীতকালের প্রথম মাস ও শীতকালের দ্বিতীয় মাস।
আরবে তৎকালে এই দুই মাস ছিল শীতকাল। তাই মাস দুটির নামকরণ এভাবেই হয়েছে। আরবিতে ‘জুমাদাস সানিয়াহকে ‘জুমাদাল উখরাও বলা হয়। আমাদের উপমহাদেশে মাস দুটি ‘জমাদিউল আউয়াল’ ও ‘জমাদিউস সানি’ নামে সমধিক পরিচিত। (আল মুনজিদ) ইসলামে অন্যান্য মাসের মতো এই মাসেও নেক আমল তথা নফল ইবাদত, নফল রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার, দোয়া-দরুদের অনেক মূল্য রয়েছে।
যেসব দিবসের ও যেসব মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সেই দিন ও মাসগুলোতে সাধারণত সবাই ইবাদত করে থাকেন, এটাই স্বাভাবিক। যেসব দিন ও মাসের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য কোরআন–হাদিসে উল্লেখ করা হয়নি, তাতে অধিক হারে নেক আমল করলে আমলকারী অবশ্যই অগ্রগামী হবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নেক আমলের প্রতিযোগিতা করো।’ (সুরা বাকারা: ১৪৮)
তাই জমাদিউস সানি মাসে পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল নামাজ তথা তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত ইত্যাদি নফল নামাজ আদায় করা, কাজা রোজা থাকলে তা পুরা করা; মান্নত রোজা থাকলে তা আদায় করা; মাসের ১, ১০, ২৯ ও ৩০ তারিখে রোজা রাখা এবং চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’–এর সুন্নত রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
জমাদিউস সানিকে মূল্যহীন বিবেচনা করে হেলায় কাটিয়ে দেওয়া কখনও উচিত হবে না। এমনটি যাদের অভ্যাস, হাশরের কঠিন দিনে তাদের সময়ের অপচয়ের জন্য অনুতাপ ও অনুশোচনা করতে হবে। মানুষের জীবন আসলে কিছু দিনের সমষ্টি মাত্র। একটি দিন চলে যাওয়ার অর্থ জীবনের একটি অংশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।
অসংখ্য হাদিসে সময়কে মূল্য দেওয়ার এবং জীবনের গুরুত্ব প্রদানের তাগিদ রয়েছে। এক হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘পাঁচটি বিষয়কে পাঁচটি বিষয়ের আগমনের আগে গনিমত মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, দরিদ্রতার আগে সচ্ছলতাকে, কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৩৫৪৬০)
এমনকি জান্নাতের অনন্ত সুখের জায়গায় গিয়েও মানুষ অবহেলায় হারিয়ে ফেলা সময়ের কারণে আফসোস করবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘জান্নাতের অধিবাসীগণ দুনিয়ার কোনো কিছুর জন্য আফসোস করবে না। শুধু সেই সময়গুলোর জন্য আফসোস করবে, যা আল্লাহর জিকির ছাড়া অতিবাহিত হয়েছে।’ (তাবারানি: ২০/৯৩; তারগিব: ২/৩৭৫)
তাছাড়া শীত ও গরমের মৌসুমে বিশেষ ইবাদত প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেহেতু কোরাইশদের আসক্তি আছে, তাদের আসক্তি শীত ও গ্রীষ্মে ভ্রমণের। অতএব তারা এই (কাবা) গৃহের প্রভুর ইবাদত করুক। যিনি তাদের ক্ষুধায় অন্ন দিয়েছেন এবং শঙ্কায় নিরাপত্তা দান করেছেন।’(সুরা কুরাইশ: ১-৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সময়ের মূল্য দেওয়ার তাওফিক দান করুন। অন্যান্য মাসের মতো জমাদিউস সানি মাসও ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
-এসআর