আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ব্যবসা-বাণিজ্য এক অনন্য বরকতময় জীবিকা। স্বয়ং নবীজি (সা.) ব্যবসা করেছেন। উম্মতকে ব্যবসা করতে উৎসাহিত করেছেন।
ব্যবসায়ীদের দিয়েছেন বিস্তর দিকনির্দেশনা। তাদের সততা, সত্যতা ও বিশ্বস্ততা অবলম্বন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ধোকা-প্রতারণা, ঠকবাজি, মিথ্যা ও পণ্যে ভেজাল মেশাতে নিষেধ করেছেন। তারই বাতলানো পন্থায় সাহাবায়ে কেরাম ব্যবসা করেছেন এবং ব্যবসায়ী বেশে সাহাবা, তাবেঈন, তাবে তাবেঈনরা আমাদের ভারত উপমহাদেশসহ পৃথিবীর বহু দেশে ইসলামের বাণী পৌঁছিয়েছেন।
সেসব আদর্শ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মানুষ ইসলামের সৌন্দর্য অবলোকন করেছে। লেনদেনের স্বচ্ছতা স্বচক্ষে দেখেছে। তাদের অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে। তাদের চরিত্রের সৌরভে সুবাসিত হয়েছে। ফলে তারা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
কিন্তু আজ মুসলিম ব্যবসায়ীরা সে সব পূর্বসূরী মহামনীষীদের দেখানো পথ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছে। ধোকা- প্রতারণা,মিথ্যা, মাপে কম দেওয়া ও মালে ভেজাল মেশানো যেন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। কাস্টমারকে ঠকিয়ে একটু বেশি মুনাফা অর্জন করতে পারলেই যেন তারা মহাখুশি।
কষ্টের সীমা থাকে না যখন কোন কোন দোকানে লেখা থাকে ‘বিক্রীত মাল ফেরত নেওয়া হয় না’। এরূপ ফেস্টুন ঝুলিয়ে রাখা একজন আদর্শ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যবসায়ীর নীতি হতে পারে না।
এসব ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের নিজেদের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য কৃত্রিম অমায়িক ব্যবহার করে। সুন্দর সম্ভাষণে ডেকে আনে। ছলে বলে কৌশলে পণ্য বিক্রি করতে হাজারও চেষ্টা করে। আর বিক্রি করতে পারলেই যেন তারা মহারাজা। ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তাদের হাবভাব দেখে মনে হয় যে, তারা কাস্টমারকে চিনেই না। কোনদিন তার সঙ্গে দেখাই হয়নি। কোন কাস্টমার কোন কারণে ক্রয়কৃত মাল ফেরত দিতে গেলে তাদের ভ্রুকুচিত চেহারা দেখে ক্রেতার হতাশা ছাড়া কিছুই থাকে না।
অনেক ব্যবসায়ী তো পণ্য ফেরত নেয়ই না বরং উল্টো হাজারটা কথা বলে ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেয়। আর অনেকে ফেরত নেয় তবে অন্য পণ্য নেয়ার শর্তে। খুশি মনে বিক্রিত মাল ফেরত নেয় এমন ব্যবসায়ী যেন সোনার হরিণ। অথচ ইসলাম বিক্রীত মাল ফেরত সন্তুষ্ট চিত্তে ফেরত নেওয়ার প্রতি উৎসাহিত করেছে। এর জন্য পরকালে মহাপুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা করেছে।
রাসুলে কারীম (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অনুতপ্ত হয়ে কোন মুসলিম কাস্টমার থেকে তার বিক্রীত মাল ফেরত গ্রহণ করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিবসে তার ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমা করে দেবেন। (সুনানে আবু দাউদ-৩৪৬০)
তিনি আরও বলেন, সত্যবাদী আমানতদার ব্যবসায়ীর হাশর হবে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে। (সুনানে তিরমিজি-১২০৯)
প্রিয় নবী (সা.) ব্যবসায়ীদের অসাধু পন্থা অবলম্বন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এরশাদ হয়েছে ব্যবসায়ীদের কিয়ামতের দিবসে পাপাচারী ও অপরাধী হিসেবে উঠানো হবে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে সততা অবলম্বন করে তারা নয়। (সুনানে তিরমিজি-১২১০)
তিনি আরও বলেন, যে ধোঁকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম-১০২)
তাই আসুন, আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যে আমাদের প্রিয় নবীর আদর্শ বাস্তবায়ন করি এবং দোকানগুলোতে ‘বিক্রীত মাল ফেরত নেয়া হয়’ লিখে সৎ সাহস দেখাই। এতে প্রিয় নবীর প্রিয় সুন্নত জিন্দা করার অশেষ নেকি অর্জন করতে পারব।
এই মহৎ কাজ যে সবার আগে করবে সে তার অনুসরণকারীদের সওয়াব লাভ করবে। সর্বোপরি সর্বক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ দিক নির্দেশনা মেনে চলি। রাসুলের আদর্শকে আঁকড়ে ধরি।
তাহলেই আমরা তার সুপারিশ লাভে ধন্য হতে পারব। তার সঙ্গে আমাদের হাশর হবে। পার্থিব জীবনে আমাদের সমাজে, আমাদের দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি হবে।
রাব্বে কারীমের তরফ থেকে অফুরন্ত রহমত ও বরকত পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস, শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।
-এটি