আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: জেদ্দা থেকে মক্কা চলার পথে দেখা মেলে দ্য গেট অব মক্কা (Makkah Gate) বা বাওওয়াবাত মক্কা। কাঠের রেহালের ওপর খোলা কোরআনের মতো হওয়ায় তা ‘কোরআন গেট’ নামেও বেশ পরিচিত। সড়কপথে এই গেট দিয়েই সবাই পবিত্র মক্কা নগরীতে প্রবেশ ও প্রস্থান করে। পবিত্র মসজিদুল হারাম থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা পর্যটক ও হজ-ওমরাহ পালনকারীদের মধ্যে তৈরি করে অন্য রকম অনুভূতি।
কারণ তা পবিত্র মক্কা আল-মুকাররমা নগরীর হারাম শরিফের সীমারেখা হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামী শরিয়ত মতে, এর ভেতরে প্রবেশে রয়েছে বিধি-নিষেধ।
রাজধানী জেদ্দা থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মক্কা-জেদ্দা মহাসড়কে গেটটি অবস্থিত। ১৪০৫ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৯ সালে এর নকশা করেন সৌদি প্লাস্টিক শিল্পী জিয়া আজিজ জাহিদ ও স্থাপত্য প্রকৌশলী সামির আল-আবদ। তৎকালীন সময়ে চার হাজার ৭১২ বর্গ মিটার পরিধির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ৪৬ মিলিয়ন রিয়াল। মক্কার তৎকালীন মেয়র উসামা বিনি ফজল আল-বার বাওয়াবাত মক্কা কম্পানির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর মক্কার বিখ্যাত এই স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ শুরু করেছে সৌদির রাজধানী কর্তৃপক্ষ।
১৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩১ মিটার প্রস্থের দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনাটি রিইনফোর্সড কংক্রিট, প্লাস্টিক, কাচ, কাঠসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে নির্মাণ করা হয়। চারলেন সড়কের দুই পাশে ৩০–৪৮ মিটার প্রস্থ ও তিন মিটার উঁচু দুটি স্তম্ভ রয়েছে। দুই স্তম্ভের ওপর রয়েছে ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৮–১৮ মিটার প্রস্থের দুটি ডানা, যা সড়কের ওপর ২৩ মিটার উচ্চতায় মিলিত হয়েছে। তাতে খোলা কোরআনের ওপর ১৬.৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৬ মিটার প্রস্থের দুটি পৃষ্ঠার আকৃতি রয়েছে। রাতের অন্ধকারে দর্শনার্থীদের মুগ্ধতা বাড়ায় গেটের দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। গেটের দুই পাশের দেয়ালে রয়েছে নীল ও সবুজ কাচের জানালা। মক্কা গেট প্রকল্পের আওতায় রাস্তার দুই পাশে রয়েছে ছোট-বড় ঝোপঝাড়সহ অসংখ্য খেজুরগাছ।
৪২ বছর আগের স্মৃতিচারণা করে মক্কা গেটের নকশাকার জিয়া আজিজ বলেন, ‘রাজধানী কর্তৃপক্ষ যখন মক্কা মুকাররমার প্রধান গেট তৈরির ঘোষণা দেয় তখন তিনি তৎকালীন দায়িত্বশীল প্রয়াত প্রকৌশলী আল-শরিফ শারফ আল-আবাদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আমি পূণ্যভূমি মক্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করি। এরপর আমি মহানবী (সা.)-এর জন্মস্থান এবং ওহি ও কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি খুঁজে পাই। অতঃপর আমি কাঠের রেহালের নকশা করি, মসজিদে যার ওপর রাখা হয় পবিত্র কোরআন। ওই সময় আমার উপলব্ধি হয় যে এটাই সেই নকশা, যা আমি খুঁজছি। ’
-এসআর