আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন না দিলে দুটি প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শাহবাজ শরিফের সরকার তার দাবিতে এখনও পর্যন্ত আমল না দেওয়ায় এবার ‘চরম পদক্ষেপ’ নেওয়ার হুমকি দিলেন তিনি।
অব্যাহত রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই দুটি প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। একদিকে দেশটির ক্ষমতাসীন জোট ও অন্যদিকে ইমরান খানের দ্বান্দ্বিক অবস্থানে দেশটির রাজনৈতিক উত্তেজনা যেন ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।
আগামী শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খান। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) লাহোরে নিজ বাসভবন থেকে এক ভিডিও বার্তায় কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ইমরান খান বলেন, দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে দুটি প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা ত্যাগ করছেন তারা। তিনি আরও বলেন, দুটি প্রদেশে নির্বাচনের অর্থ হবে পাকিস্তানের ৬৬ শতাংশেরও বেশি এলাকায় ভোটগ্রহণ, তাই সরকার সাধারণ নির্বাচনও আয়োজন করতে পারে।
এদিন ইমরান পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) কামার জাভেদ বাজওয়াকে তার দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার জন্য দায়ী করেন। তিনি অভিযোগ করেন, জেনারেল বাজওয়াই পিটিআই সরকারের পতনের জন্য একমাত্র দায়ী ব্যক্তি।
ইমরান খানের দাবি,পাকিস্তানের সাধারণ একজন নাগরিকের মতো, তিনি তার সম্পদের বিষয়ে আদালতে সমস্ত বিবরণ দাখিল করেছেন। যারা জনসাধারণের অর্থ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে এটা তাদের থেকে ভিন্ন। ক্ষমতাসীন পাকিস্তান ডেমোক্রেপিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নেতাদের সব টাকা, ব্যবসা ও সন্তানরা বিদেশে। তারা দেশের জনগণের টাকা চুরি করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।
পাঞ্জাব প্রদেশটি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নিয়ন্ত্রিত। পাঞ্জাব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ। এমনকি, দেশটির ২২ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই এ প্রদেশে বসবাস করে। তাই প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্তির ফলে পাকিস্তানে নতুন করে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারে।
পাকিস্তানের চারটি প্রাদেশিক পরিষদের মধ্যে দুটি নিয়ন্ত্রণ করে ইমরান খানের দল। অন্য দুটি নিয়ন্ত্রণ করে তার বিরোধী জোট। এছাড়া বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের অধীনে কেন্দ্রীয় সরকারও নিয়ন্ত্রণ করছেন বিরোধীরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ তৈরি করে আগাম সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করাতে নির্ধারিত সময়ের আগেই দুটি প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দিচ্ছেন ইমরান খান। কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, ২০২৩ সালের নভেম্বরে নির্ধারিত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচনের আয়োজন করা হবে না।
পাকিস্তানের নিয়মানুযায়ী, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একই সময়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যদি ওই দুটি প্রাদেশিক পরিষদ আগেই ভেঙে দেওয়া হয়, তাহলে ৯০ দিনের মধ্যে তাদের জন্য আলাদা নির্বাচন করতে হবে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রাদেষিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার কারণও জানিয়ে ইমরান বলেছেন, ‘প্রাদেশিক পরিষদ ভেঙে দেওয়ার পরই আমরা এই দু’টি প্রদেশে নতুন করে নির্বাচনে যাব।’ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ থেকে পিটিআইয়ের ১২৫ জন সদস্য পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন আগেই। কিন্তু স্পিকার তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে চাননি। এ প্রসঙ্গে ইমরান জানিয়েছেন, স্পিকারকে পদত্যাগপত্র গ্রহণের জন্য তারা ফের আবেদন জানাবেন।
ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর জোট সরকার পরাজয়ের ভয় থেকেই নির্বাচনে যেতে চাইছে না বলেও দাবি ইমরানের। ভোটেই মানুষ তাদের উচিত জবাব দেবে বলেও জানিয়েছেন পিটিআই প্রধান।
-এটি