সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

দ্বিনের জন্য নারী মুহাদ্দিসের অসামান্য আত্মত্যাগ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: প্রখ্যাত তাবেয়ি ও নারী মুহাদ্দিস উম্মুস সহবা মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ আদাবিয়্যাহ (রহ.) হিজরি ১৩ সনের আগে জন্মগ্রহণ এবং ৮৩ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। তাঁর এই ৭০ বছরের জীবন জ্ঞান সাধনা, ইসলামের জন্য আত্মত্যাগ ও আল্লাহ প্রেমের মহিমায় উদ্ভাসিত। তিনি দীর্ঘ জীবন পর্যন্ত সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং একাধিক সাহাবি থেকে হাদিস বর্ণনা করেন। যার মধ্যে আলী ইবনে আবি তালিব, আয়েশা সিদ্দিকা ও হিশাম ইবনে আমের আনসারি (রা.) অন্যতম।

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমসহ হাদিস শাস্ত্রের বিশুদ্ধ ছয় গ্রন্থের একাধিক গ্রন্থে তাঁর হাদিস স্থান পেয়েছে। তৎকালীন যুগের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসদের মধ্যে আবু কিলাবা জারমি, ইয়াজিদ আর-রিশক, আসেম আ-আহওয়াল, আইয়ুব, ওমর ইবনু জার, ইসহাক ইবনে সুওয়াইদ (রহ.) প্রমুখ তাঁর থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। আল্লামা ইবনে হিব্বান ও ইবনু মুয়িন (রহ.) তার ‘সিকাহ’ বা গ্রহণযোগ্য হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইলমে হাদিসের পাশাপাশি তিনি ইলমুল ফিকহেও (ইসলামী আইনশাস্ত্র) পারদর্শী ছিলেন।

মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) যেমন জ্ঞানে-গুণে বড় ছিলেন, তেমনি আধ্যাত্মিক সাধনায়ও অগ্রগামী ছিলেন। তিনি রাত জেগে ইবাদত করতেন। তিনি বলতেন, আমি সেই চোখের কথা ভেবে আশ্চর্য হই, যা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। অথচ সে জানে কবরের অন্ধকারে তাকে দীর্ঘকাল অতিক্রম করতে হবে। আল্লাহর সিদ্ধান্তে তাঁর সন্তুষ্টি ও তাঁর প্রতি আস্থা বিশ্বাসের জায়গাতেও মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ ছিলেন অতুলনীয় একজন নারী। কোনো এক যুদ্ধে স্বামী ও সন্তানরা শহীদ হলে নারীরা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে উপস্থিত হয়।

তিনি তাদের বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে সুসংবাদ জানাতে আসেন তাহলে আপনাদেরও অভিনন্দন। আর যদি ভিন্ন উদ্দেশ্যে আসেন তবে আপনারা ফিরে যান। ’ তাই বলে স্বামী-সন্তানের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি বেঁচে থাকতে চাই যেন আমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। যেন তিনি জান্নাতে আমার, আমার সন্তান ও সন্তানের বাবাকে একত্র করে দেন। ’ তাঁর সেবিকা বলেন, তিনি রাত জেগে ইবাদত করতেন। যখন তাঁর ঘুম আসত তিনি ঘরে পায়চারি করতেন। তিনি বলতেন, হে আমার মন! ঘুম তোমার সামনে অপেক্ষা করছে। যদি তুমি যাও, তবে তুমি কবরে দীর্ঘকাল আনন্দে ও আক্ষেপের সঙ্গে থাকবে। এভাবেই সকাল হয়ে যেত।

মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ (রহ.) তাকওয়া বা আল্লাহভীতির জীবন যাপন করতেন এবং তিনি তাঁর সন্তানদেরও এভাবে জীবন যাপন করতে উৎসাহিত করতেন। উম্মুল আসওয়াদ বিনতে জায়েদকে তিনি স্তন্যদান করেন। তিনি তাঁকে বলেন, হারাম খেয়ে তুমি আমার দুধের পবিত্রতা নষ্ট কোরো না। কেননা তোমাকে দুধ পান করানোর সময় আমি হালাল খাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। তুমিও হালাল খাওয়ার চেষ্টা করবে। আশা করা যায়, আল্লাহ তোমাকে তাওফিক দান করবেন।

মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ (রহ.)-এর স্বামী সিলা বিন আশয়াম (রহ.) ছিলেন নেতৃস্থানীয় একজন তাবেয়ি, যিনি ৬২ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। হাসান বসরি, হুমাইদ বিন হেলাল (রহ.) প্রমুখ মুহাদ্দিস তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। সিলা বিন আশয়াম (রহ.) ছিলেন রাতের সাধক ও দ্বিনের যোদ্ধা। মুয়াজা বিনতে আবদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘সিলা তাঁর বাড়ির মসজিদ থেকে (ইবাদত করতে করতে) ক্লান্ত না হলে বিছানায় আসতেন না। ঘরেও তিনি দীর্ঘ সময় নামাজ আদায় করতেন। ’ নিজের সম্পর্কে সিলা বিন আশয়াম (রহ.) বলেন, ‘আমি পার্থিব জীবনের যা প্রার্থনা করেছি তা হালাল হওয়ার কারণে করেছি এবং পার্থিব জীবনের সামান্যই গ্রহণ করেছি। ’

ইমাম বায়হাকি (রহ.) বলেন, ‘সিলা বিন আশয়াম (রহ.) ছিলেন কারামাতপ্রাপ্ত (অলৌকিকত্ব) ব্যক্তি। ঐতিহাসিকরা বর্ণনা করেছেন, তিনি বাঘের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করার পর আল্লাহ তাঁর হারিয়ে যাওয়া পশু ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে ধারণাতীত জীবিকা দান করেছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্ষীপ্র গতিসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ। আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে মুসলিম বাহিনীকে বিজয়ী করেছেন। ’ ইয়াজিদ বিন জিয়াদের নেতৃত্বে তিনি ও তাঁর ছেলে সিজিস্তানে মোঙ্গলীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন এবং তাঁরা উভয়ে শহীদ হয়ে যান।

তথ্যসূত্র : মাউসুয়াতু রুয়াতুল হাদিস

-এসআর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ