রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

জর্জিয়ান মুসলমানদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হচ্ছে অপরূপ কাঠের মসজিদ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: জর্জিয়ান গ্রাম দঘভানির ছোট্ট কাঠের স্থাপত্য। দেখলে মসজিদের চেয়ে বাড়ি বলেই প্রবল ধারণা হয়। তবে এটি মসজিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম জর্জিয়ার অন্যান্য মসজিদের মতোই এটিও ঐতিহ্যবাহী কাঠের দোতলা বাড়ির আদলেই তৈরি।

কিন্তু অভ্যন্তরীণ কারুকাজের বিবেচনায় এটাকে প্রাচীনকালের কোনো গুহার সঙ্গে তুলনা করা যায়। বাহ্যত যা সাধারণ গুহা, কিন্তু অভ্যন্তর ভাগ অপরূপ করুকাজ ও অলংকরণে সমৃদ্ধ। মূল প্রার্থনা কক্ষের ওপর ঝুলে আছে ফুল-পাতা শোভিত গম্বুজ। সোনালি বুননে অপরূপ তার বারান্দা। আর মিহরাব, যেখানে ইমাম অবস্থান করেন সেখানে নীল গাছে ফোটে হলুদ ফুল। তুরস্কের সীমান্তঘেষা কৃষ্ণ সাগরের তীরবর্তী অ্যাডজারা অঞ্চলে এমন গুপ্তধনগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

কিছু কিছু কাঠের মসজিদ এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। আর কিছু ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অত্র অঞ্চলে এমন প্রায় ৫০টি মসজিদ পাওয়া যায়। দুঃখের বিষয় হলো, জর্জিয়ান সমাজ ও প্রশাসন ঐতিহাসিক মসজিদগুলোকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করে না।

আগারার মসজিদগুলোর অভ্যন্তরভাগে আছে সমুদ্র সৈকতের ছাপ। যেমন নীল দেয়ালে পাম ও লেবু গাছের প্রতিলিপি থাকা। দুই শ বছরের প্রাচীন অনন্য এই স্থাপনাগুলো অন্যসব ইসলামী ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মতোই আক্ষরিক অর্থে জর্জিয়ান সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। মুসলিমরা সংখ্যালঘু হওয়ায় জর্জিয়ায় ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্য অবহেলিত। অ্যাডজারার একটি মুসলিম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সমন্বয়ক জাজা মিকেলাজ বলেন, আপনি মসজিদগুলোকে স্থানীয় পৌরসভার ওয়েবসাইট বা পর্যটন মানচিত্রে খুঁজে পাবেন না। জর্জিয়ার মুসলিম সংস্কৃতির অংশগুলো এখান থেকে বাদ পড়েছে। তারা মসজিদগুলোকে ভিন্নদেশি প্রভাব হিসেবেই দেখাতে চায়। অথচ অ্যাডজারার বেশির ভাগ কাঠের মসজিদ জর্জিয়ান নকশা ও শৈলীতে তৈরি। সর্বোতভাবে তা স্থানীয় সংস্কৃতিরই ধারক। ১৮১৮ সালে নির্মিত অ্যাডজারার সর্বপ্রাচীন মসজিদটিও এর ব্যতিক্রম নয়।

জর্জিয়ার বেশির ভাগ কাঠের মসজিদ উসমানীয় আমলে তৈরি। তবে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংঘাতে এই বহুবার এই অঞ্চলের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন হয়েছে।

ঐতিহাসিকরা বলেন, উসমানীয় আমলে জর্জিয়ার বহুসংখ্যক মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। রুশ সাম্রাজ্য জর্জিয়া দখল করার পর খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাব বাড়তে থাকে। আর সোভিয়েত আমলে সব ধর্মকে একত্রে দমন করা হয়। সোভিয়েত আমলে অসংখ্য মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তার কোনো কোনোটি গুদাম হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। মাদরাসা শিক্ষা ও মুসলি ধর্মীয় অনুশাসন নিষিদ্ধ করা হয়। সোভিয়েত সরকারের নিয়ন্ত্রণে জর্জিয়ার মুসলিম সম্প্রদায় ও ইসলামী সংস্কৃতি ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে। স্বাধীনতা লাভের পর জর্জিয়া একটি পূর্ণাঙ্গ খ্রিস্টান রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।

জাজা মিকেলাজ বলেন, অ্যাডজারার কাঠের মসজিদগুলো জর্জিয়ানরা জর্জিয়ানদের জন্য তৈরি করেছে। স্থানীয় ‘লাজ’ কারিগররাই অভ্যন্তরীণ নকশা, কারুকাজ ও সাজ-সজ্জার কাজ করেছে। এমনকি কাঠের মসজিদে ব্যবহৃত আঙুর গাছের অলংকরণ জর্জিয়ান গির্জাগুলোতেও দেখা যায়।

মিকেলাজের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঐতিহাসিক মসজিদগুলো রক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে সেগুলোর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জর্জিয়ান মুসলিমরাও যে সমাজের মূলধারার অংশ সেটা প্রমাণ করাও তাদের সামনে একটি বড় লক্ষ্য। যেমনটি বলেন মিকেলাজ, অ্যাডজারার মসজিদগুলো জর্জিয়ান সংস্কৃতির সমৃদ্ধ অংশ। আর বর্ণিল বিশ্বাস ও সম্প্রদায়ের মানুষের সমন্বয়ে জর্জিয়ান সমাজ আরো বেশি সমৃদ্ধ।

সূত্র : ইউরোশিয়ানেট ডটঅর্গ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ