সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে জীবন নতুনভাবে নবায়িত হয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আহসানুল ইসলাম রাকিব।।

তওবা করলে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে জীবন নতুনভাবে নবায়িত হয়। তওবা শব্দটিই যেন একটি মহান শব্দ। যার অর্থ ফিরে আসা। তওবার দহনেই পাপে কলুষিত আত্মা মনিবের সঙ্গে নবরূপে মিলিত হয়। মহান আল্লাহ চান তার বান্দারাও যেন গুনাহ করার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেয়।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করে মানুষকে দিয়েছেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদা। দিয়েছেন মহামূল্যবান বিবেক। আসমান জমিনের সমস্ত মাখলুকাতের ওপর দিয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব।

যদিও ফেরেশতারা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন রয়েছেন। তাদের যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তারা প্রতিনিয়ত সে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ফেরেশতাদের আল্লাহ তায়ালা অবাধ্য হওয়ার ক্ষমতাই দেননি। আর আল্লাহ মানুষকে বিবেক দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাদের প্রতি ওহী নাজিল করে সঠিক পথের দিশা দিয়েছেন। ভালো-মন্দ দুটি পথের মধ্যে যেকোনো একটি পথ বেছে নেয়ার এখতিয়ার দিয়েছেন। এখানেই ফেরেশতাসহ সকল মাখলুকাতের ওপর মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মানুষকে ভুল করার এখতিয়ার দিয়ে আবার তাওবা করার সুযোগ প্রদান করা হয়েছে।

বান্দার তাওবা আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। কেননা তাওবা শব্দের অর্থ হলো- ফিরে আসা। কখনো কখনো আমরা হেদায়াতের আলোর পথ থেকে দূরে সরে গিয়ে পাপাচারের অন্ধকারে নিজেদের নিমজ্জিত করি। কোনো কোনো পাপে সাময়িক সুখ অনুভূত হলেও পাপের পীড়া কামড় দেয় বারবার। ফলে মানসিক বিষাদ অনুভব হতে থাকে।

অতঃপর আমরা তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে চাই। কিন্তু আমাদের জীবনে এমন কিছু পাপ থাকে, যে কারণে আমরা ভীষণ লজ্জিত, অনুতপ্ত। অনেক পাপ এমনও রয়েছে যা আমাদের জীবনচর্যায় পরিনত হয়েছে।

সব কিছু সত্যেও আমরা যদি আল্লাহর দিকে এক বিঘৎ অগ্রসর হই, তবে আল্লাহ আমাদের দিকে এক হাত অগ্রসর হবেন। আর আমরা যদি আল্লাহএ দিকে একহাত অগ্রসর হই, তবে আল্লাহ আপনার দিকে দুই হাত অগ্রসর হবেন। অর্থাৎ বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসলে আল্লাহ বান্দার দিকে ফিরে আসেন।

রাসুল সা. বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহান নাসু তুবু ইলাল্লাহ’ অর্থাৎ হে মানবজাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো—এর অর্থ হলো- আল্লাহর নিকট ফিরে আসো, প্রত্যাবর্তন করো। (মুসলিম, হাদিস নং: ৭০৩৪)

রব্বে কারিম ইরশাদ করছেন- اِنَّمَا التَّوۡبَۃُ عَلَی اللّٰهِ لِلَّذِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ السُّوۡٓءَ بِجَهَالَۃٍ ثُمَّ یَتُوۡبُوۡنَ مِنۡ قَرِیۡبٍ فَاُولٰٓئِکَ یَتُوۡبُ اللّٰهُ عَلَیۡهِمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا

আল্লাহ অবশ্যই সেই সব লোকের তাওবা কবুল করেন যারা অজ্ঞতাবশত কোনও গুনাহ করে ফেলে, তারপর জলদি তাওবা করে নেয়। সুতরাং আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত, প্রজ্ঞাময়। ( সূরা -নিসা, আয়াত ১৭)

উক্ত আয়াতে সু এর অর্থ অত্যন্ত কুৎসিত ঘৃণ্য জঘন্য মন্দ কাজকে বুঝানো হয়েছে। আর, বি যাহালাতিন অর্থাৎ অপ্রতিরোধ্য আবেগের বশবর্তি হয়ে যে পাপকাজ করা হয়। যেমন কুকর্মে প্ররোচনায়, রাগের বশবর্তী হয়ে, হতাশার আগুনে পুড়ে অথবা এমন কোন মানবিক অনুভূতি ওই মুহূর্তে আপনার উপর বিজয় হয়েছিল, তারপর আপনি ওই কাজে লিপ্ত হয়েছিলেন এটা হচ্ছে "জাহালাত"।

আমাদের অলসতাও এক ধরনের "জাহালাত" যখন আমরা ফজর নামাজ ছেড়ে দিচ্ছি, শুধুমাত্র অলসতার কারণে। আমাদের ক্রোধ এক ধরনের জাহালাত যখন আমরা অকারণে কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করি অথবা ক্রোধের বশবর্তী হয়ে অযথাই কারো উপর জুলুম করি। মোবাইলের স্ক্রিনে কোন খারাপ ছবি আসার পরেও আমরা যদি তা অ্যাভোয়েড করতে না পারি সেটাই "জাহালাত"।

আল্লাহ তায়ালা বলেন বান্দা যখন নফসের কুমন্ত্রণায় পড়ে কোন কুৎসিত পাপ কাজ করে, ছুম্মা ইয়া তুবুনা মিন করিব অর্থাৎ তাৎক্ষণিক আবার তওবা করে নেয় তখন আল্লাহ তাআলা বান্দার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন।

তাওবা করার অর্থ এই নয় যে আমরা পাপ করার পরে হতাশার ঘোরে হারিয়ে যাবো, মনে মনে কল্পনা করবো, আল্লাহ হয়তো আমাকে ক্ষমা করবেন না, এবং নিরাশ হয়ে পরবো, এটা তাওবা নয়।

বরং তাওবা হচ্ছে, আমরা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে ফিরে আসবো, এবং বলবো, হে প্রিয় প্রভু! আমি সজ্ঞানে আর কখনো আপনার বিধান লংঘন করবো না এবং নিয়োমিত অনিয়ম গুলোকে শুধরে নিব। তবে আমরা যেহেতু মানুষ , ভুল করাটা আমাদের মানবীয় গুণ, কিন্তু মুমিন হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে ভুল করার সাথে সাথেই আমরা আবার রবের নৈকট্যে ফিরে আসবো এবং তাওবা করে নিবো।

রব্বে কারিম ইরশাদ করছেন আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনা সমূহ ক্ষমা করবে! (সুরা আল-ইমরান, আয়াত-১৩৫) অর্থাৎ সঠিকভাবে তওবা করলে আল্লাহ অবশ্যই বান্দার গুনাহ ক্ষমা করবেন।

তাওবা জান্নাত প্রাপ্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও ভালোবাসা লাভের একটি বড় সুযোগ ও উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি বেশি তাওবাকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২২২)

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো- যে গোনাহ করে এবং তাওবা করে, আবার পুনরায় গোনাহ করে। আবার তাওবা করে আবার গোনাহ করে। আবার গোনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তাওবা-ইস্তিগফার করে। (জানতে চাওয়া হয়) এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কী অবস্থা হবে?

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তাওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যায়। শয়তান বলে, এ ব্যক্তিকে গোনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।

সুতরাং বুঝা যায় যে, বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবা-ইস্তিগফারের সুযোগদান এক মহা নিয়ামাত স্বরূপ। তাঁর এ নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করা বিশ্ব মুসলিমের জন্য একান্ত অপরিহার্য বিষয়।

পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনাকারী বান্দাকে আল্লাহ কতটা ভালোবাসেন তার বর্ণনা করতে গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন –সেইমহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম)।

রব্বে কারিম আমাদের সবাইকে তাওবার মাধ্যমে তার রহমের চাদরে আবৃত হওয়ার তাওফিক দান করুন। এবং জান্নাতে তার হাবিবের সান্নিধ্য দান করুন। আমিন।

লেখক: ছাত্র, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ