হাফেজ মাওলানা আব্দুল মাজীদ মামুন রাহমানী
সৃষ্টিকর্তা মুমিন বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, যা দেখা আমি হারাম করেছি তা থেকে নিজেদের দৃষ্টিকে সংযত রাখ । পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَیَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ অর্থাৎ (হে রাসূল!) মুমিন পুরুষদের বলুন, তাঁরা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য শুদ্ধতর। তাঁরা যা-কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত। সূরা নূর আয়াত নং- ৩০।
এই আয়াতে শুধু পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী আয়াতে মহিলাদেরকেও নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখার ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে । এরশাদ হচ্ছে وَقُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَیَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ অর্থাৎ আর মুমিন নারীদেরকও বলে দিন, তাঁরা যেন তাঁদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। সূরা নূর, আয়াত নং- ৩১।
এমনিভাবে প্রিয় নবী সা.ও দৃষ্টি অবনত রাখার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে
عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِعَلِيٍّ " يَا عَلِيُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ " .
অর্থাৎ ইবনে বুরাইদাহ রা. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন, রাসূল সা. আলী রা. কে বললেন, “হে ‘আলী! কোন নারীকে (নিজের স্ত্রী ও যাদের দেখা জায়েয তারা ব্যতীত) একবার দেখার পর দ্বিতীয়বার দেখবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথমবার দেখার অনুমতি আছে, কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখা জায়েয নয়। আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৪৯; তিরমিযি, হাঃ নং- ২৭৭৭।
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِيَّاكُمْ وَالْجُلُوسَ عَلَى الطُّرُقَاتِ ". فَقَالُوا مَا لَنَا بُدٌّ، إِنَّمَا هِيَ مَجَالِسُنَا نَتَحَدَّثُ فِيهَا. قَالَ " فَإِذَا أَبَيْتُمْ إِلاَّ الْمَجَالِسَ فَأَعْطُوا الطَّرِيقَ حَقَّهَا " قَالُوا وَمَا حَقُّ الطَّرِيقِ قَالَ " غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوفِ، وَنَهْىٌ عَنِ الْمُنْكَرِ ".
অর্থাৎ আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী সা. বলেন, তোমরা রাস্তার উপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোন পথ নেই। কেননা, এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নবী সা. বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি অবনত রাখা, কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ করা এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা। বুখারি, হাদিস নং- ২৪৬৫।
আর এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিকে যে নির্দেশ দেন তা নিরেট সৃষ্টির কল্যাণার্থেই দিয়ে থাকেন। এমনিভাবে রহমতের নবী সা.ও উম্মতের কল্যাণেই কোন বিষয়ের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। তথাপিও এখানে দৃষ্টি সংযত রাখার কয়েকটি উপকারিতা বর্ণনা করবো। যা আমাদেরকে মহান স্রষ্টা ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ পালনে সহযোগিতা করবে ইনশাআল্লাহ।
১. জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজত করলে রাসূল সা. তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। আর লজ্জাস্থানের হেফাজত তখনই হবে যখন দৃষ্টিকে হারাম বস্তু দেখা থেকে সংযত রাখবে।
হাদিস শরিফে এরশাদ হচ্ছেعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم " مَنْ يَتَكَفَّلُ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ " . অর্থাৎ সাহল ইবনে সা'দ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দুই ঠোঁটের মাঝখানের বস্তু (জিহ্বা) ও দুই পায়ের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থানের) যামিন হবে (অপব্যবহার হতে সংযত রাখবে), আমি তার জন্য জান্নাতের যামিন হবো। বুখারি, হাঃ নং-৬৪৭৪ ; তিরমিযি, হাঃ নং- ২৪০৮; মুআত্তা ইমাম মালেক,হাঃ নং-১৭৯৫।
২. কোন নারীর সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিকে সরিয়ে নিলে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য এমন একটি ইবাদত করার সুযোগ দান করবেন, যার স্বাদ সে লাভ করবে।
হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে...
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: "مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ إِلَى مَحَاسِنِ امْرَأَةٍ [أَوَّلَ مَرّة] ثُمَّ يَغُضّ بَصَرَهُ، إِلَّا أَخْلَفَ اللَّهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا"
অর্থাৎ হযরত আবু ওমামা রা.নবী সা.থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যে মুসলমান কোন নারীর সৌন্দর্যের দিকে (প্রথমবার) দৃষ্টিপাত করে। অতঃপর স্বীয় দৃষ্টিকে অবনত করে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য এমন একটি ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করে দিবেন যার স্বাদ সে লাভ করবে। মুসনাদে আহমাদ, ৫/২৬৪।
৩. অন্তরে ঈমানের স্বাদ লাভ করবে। হাদিস শরিফে এরশাদ হচ্ছে
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: "إِنَّ النَّظَرَ سَهْمٌ مِنْ سِهَامِ إِبْلِيسَ مَسْمُومٌ، مَنْ تَرَكَهُ مَخَافَتِي، أَبْدَلْتُهُ إِيمَانًا يَجِدُ حَلَاوَتَهُ فِي قَلْبِهِ"
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সা. এরশাদ করেন,(আল্লাহ তা'আলা বলেন) দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি আমার ভয়ে তা পরিত্যাগ করবে, এর পরিবর্তে আমি তাকে এমন ঈমান দান করবো যার স্বাদ সে অন্তরে লাভ করবে। আলমু'জামুল কাবীর লিত্তবরানী,১০/২১৪ ; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৮/৬৩
আর হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে গেলে শরীয়তের নির্দেশনা হলো, তাৎক্ষণিক দৃষ্টিকে হারাম বস্তুর দর্শণ থেকে ফিরিয়ে নেয়া। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে
عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه
وسلم عَنْ نَظَرِ الْفُجَاءَةِ فَأَمَرَنِي أَنْ أَصْرِفَ بَصَرِي .
অর্থাৎ জারির ইবনে ‘আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সা. এর নিকট আচমকা নজর পড়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে আদেশ করলেন, যেন আমি আমার দৃষ্টি দ্রুত ফিরিয়ে নেই। মুসলিম, হাদিস নং- ৫৫৩৭।
লেখক।। ফাযেল জামিয়া রাহমানিয়া আযিযিয়া, মোহাম্মদপুর, ঢাকা, মুতাখাচ্ছিছ ফি উলূমিল হাদিস মারকাযুদ দিরাসা আল-ইসলামিয়া, মিরপুর, ঢাকা
-এটি