আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে একজন মানুষের শরীরে নানা রকম জটিলতা তৈরি হতে পারে। তবে শুরু থেকেই সতর্ক থাকলে এ জটিলতা বিশেষ করে মৃত্যুঝুঁকি কমে যায়। এজন্য যেকোনো ধরণের জ্বরকে অবহেলা না করে বাড়িতেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।
কিভাবে বুঝবেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে বর্ষাকালে যেকোনো জ্বরে এলেই ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ১০২ থেকে ১০৫ ফারেনহাইটের মধ্যে হয়ে থাকে। জ্বরের সাথে সাথে আরও কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয়। সেগুলো হলো- তীব্র শরীরব্যথা, পিঠে এবং মাংসে ব্যথা, চোখের চারপাশে এবং পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাদের পরিবর্তন এবং গায়ে লালচে ভাব। এ অবস্থায় জ্বরে আক্রান্ত হলে দেরি না করে কালক্ষেপণ প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন সিবিসি, এসজিপিটি, এসজিওটি টেস্ট করা। কারণ, এবার একটু দ্রুতই কিছু বুঝে ওঠার আগেই জটিলতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
করণীয়
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বাড়িতেই প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু করতে হবে। অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। আরও যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলো হলো-
১. জ্বর কমানোর উপায়: ডেঙ্গুর উচ্চমাত্রার জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামলজাতীয় ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করবেন না। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের অবস্থা বুঝে ব্যবহার করা যাবে। দিনে ৮ থেকে ১০টি ট্যাবলেটের (সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম) বেশি ব্যবহৃত হলে লিভারের ক্ষতিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জ্বর কমাতে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক এনএসএইড গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধ ছাড়াও জ্বর কমাতে মাথায় পানি ঢালা, শরীর মুছে দেওয়া অথবা রোগীকে গোসল করাতে পারেন।
২. পানি পান: প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে ডেঙ্গু রোগীকে। এর প্রধান চিকিৎসা হলো ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্ট বা তরল ব্যবস্থাপনা। তাই পানির সাথে খেতে পারেন ওরস্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের শরবত, ভাতের মাড়, দুধ ইত্যাদি।
৩. বিশ্রাম: বিশ্রাম ডেঙ্গু রোগীদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসময় রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে অত্যাধিক। উপসর্গের ৭ থেকে ১০ দিন ভারী কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। তবে ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করবেন আর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবেন।
৪. অন্যান্য ওষুধ: জ্বরের পাশাপাশি অনেকের বমি ভাব, ডায়রিয়া থেকে থাকে। এসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই।
৫. সতর্ক সংকেত: রোগীর কিছু সতর্কসংকেত জেনে রাখতে হবে এবং এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে অথবা হাসপাতালে চলে যেতে হবে। সেগুলো হলো অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ, রক্তবমি।
ডেঙ্গু জ্বরে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকেন যারা
অনূর্ধ্ব ১ বছর অথবা ৬৫ বছরের ওপরে, গর্ভবতী নারী, দৈহিক স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, ডায়ালাইসিসের রোগীরা ডেঙ্গু জ্বরে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকেন। এসব রোগীকে বাড়িতে না রেখে শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
-এএ