|| মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম ||
অধুনাকালের এই সময়ে পৃথিবীর সর্বত্রই অশান্তিময়তার ধকল। অরাজকতা, নৃশংসতা ও সাম্যহীনতার ভয়াল থাবায় আক্রান্ত পৃথিবীর নীলাকাশ। নাফরমানি ও খোদাদ্রোহিতার দিকে দৃঢ় লয়ে ছুটছে মানুষ। মানবতা হারিয়েছে, হারিয়েছে মানুষ পারস্পরিক হৃদ্যতা, ভালোবাসা ও সহমর্মিতা।
মুসলিম যুবক-যুবতীদের আখলাকী সংকট চরমে পৌঁছেছে। চারিত্রিক অধঃপতনতায় মনুষ্যত্ব, বড়কে শ্রদ্ধাবোধ, ছোটর প্রতি স্নেহার্দ্র আচরণ শূণ্যে হারিয়েছে।
চলমান সময়ের শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই নেশায় মত্ত।হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। সারাক্ষণ নাচ-গান অশ্লীল সিনেমা চোখ খুইয়ে দেখছে। অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছে চারিত্রিক নিস্কলুষতা। হয়ে ওঠছে মানুষরুপি শয়তান।
যে যুবক খুব পরিপাটি হয়ে মসজিদের কাতারে নামাজরত থাকার কথা ছিলো, আজকে তাকে রাত বারোটার পর রাস্তার মোড়ে,ফুটপাতে মদের বোতল হাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। চারিত্রিক নিস্কলুষতা ও আদর্শিক চেতনায় আজকের মুসলিম যুবক চরম অধঃপতিত।
এমন দুঃসময়ে আমাদের যা করা উচিত;
পৃথিবীতে চারিত্রিক উৎকর্ষতায় একমাত্র অনন্য ব্যাক্তি বিশ্বনবী, আরবের দুলাল হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে, নবীজি সা. বলেছেন; আমি প্রেরিত হয়েছি মাকারিমে আখলাককে পরিপূর্ণতা দেওয়ার জন্যে।
চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধন, সুন্দর ও আলোকিত মানুষ গড়নে সিরাত চর্চা ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।
সিরাত কী জিনিস?
সিরাত মানে—সিরাতুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ নবীজি সা. এর চিন্তা-চেতনা, আদর্শ, তাঁর সমাজব্যবস্থা, আমল-আখলাক, উপদেশমালা ইত্যাদি—মোটমাট নবীজির পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাই হলো সিরাত।
সিরাতুন্নবী সা. মুসলমানদের জীবনাচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদি কোন মানুষ তাঁর জীবনের ধাপে ধাপে সিরাতের সুরভিত পাঠের পূর্ণাঙ্গ অনুকরণ-অনুস্বরণ করতে পারে—তবে সে জীবন ফুলের মতো সুরভিত হয়ে ওঠবে।
কিন্তু দুর্ভাগ্য মুসলমানদের। তাঁরা তাদের নবীর সিরাত-আখলাকিয়্যাতকে ছেড়ে ইহুদি-খৃষ্টানদের কৃষ্টিকালচার সাদরে বরণ করে নিয়েছে। এবং এটাকেই আধুনিকতা ও সভ্যতা ভেবে আপন আদর্শ বলে স্বীকারোক্তি দিচ্ছে।
পবিত্র রবিউল আউয়াল মাস চলছে। এই পবিত্র মাসেই ধরাধামে আগমন করেন সর্বোত্তম মহা-মানব মুহাম্মদ সা.। এই পবিত্র মাসে আপন আদর্শ ভুলে যাওয়া মুসলমানদের ব্যাপক সিরাত চর্চা ও বাস্তবায়নে আত্ম-মনোযোগি হওয়া উচিত।
তাই আসুন আমরা সিরাত চর্চায় অভিনিবিষ্ট হই। নিজেরা সিরাত চর্চা করি, অন্যকে উৎসাহিত করি।
চারিত্রিকতায় শালীনতা ফিরিয়ে আনি। সিরাতের রঙে বাঙুক আমাদের জীবন।
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া উত্তরা, ঢাকা।
কেএল/