মুফতি জিয়াউর রহমান ।।
জানাযার নামাজে সূরা ফাতিহা। মসজিদে নববির লাইব্রেরিতে দেখলাম ইমাম কুদুরী রাহ. লিখিত আরেকটি অনবদ্য কিতাব- التجريد موسوعة القواعد الفقهية المقارنة ইমাম আবুল হুসাইন কুদুরী রাহ. লিখিত মুখতাসারুল-কুদুরী কিতাব ছাড়াও আরেকটি চমৎকার ও উপকারী কিতাব যে আছে, তা জানা ছিলো না৷ এর আগে শুনে থাকলেও স্মরণ নেই৷ যাক 'আত-তাজরীদ' নামক কিতাবটির সঙ্গে দেখা হলো মসজিদে নববির লাইব্রেরিতে৷ এখানেও মুআয ভাইর সম্পূর্ণ কৃতিত্ব৷
আমরা যারা ফিকহে হানাফী অনুযায়ী আমল করি, এখানে একটি মাসআলার মুখোমুখি হতেই হবে৷ সেটি হচ্ছে- জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার মাসআলা৷
যেহেতু হানাফী মাযহাবে জানাযার নামাযে কিরাত নেই, তাই সূরা ফাতিহা পড়াও নেই৷ অথচ হারামাইনে জানাযায় নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া হয়৷ মাইকের সাউন্ড বেশি হওয়ায় ইমাম সাহেব অনুচ্চ আওয়াজে পড়লেও শুনা যায়৷
মসজিদে নববিতে যে কদিন ছিলাম, একদিনের ইশার নামায ছাড়া সব ওয়াক্তের নামাযের পরই জানাযা ছিলো৷ যারা হারামাইনে সালাত আদায় করবেন, সালাত পরবর্তী জানাযায় শরিক হতে ভুলবেন না৷ খুব সহজেই বড় সওয়াবের অংশিদার হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেও সমীচীন হবে না৷
আত-তাজরীদ কিতাব খুলতেই জানাযা অধ্যায় বের হলো৷ এই মাসআলাটিও সামনে চলে এলো৷ ইমাম কুদুরী পরিষ্কারভাবে লিখেছেন, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া যেমন ওয়াজিব নয়৷ কেউ পড়ে নিলে মাকরুহও হবে না৷
হ্যাঁ অন্যান্য কিতাবে আরো ব্যাখ্যাসহ বলা হয়েছে যে, কিরাত হিসেবে নয়, আল্লাহ তাআলার হামদ, সানা ও দুআ হিসেবে সূরা ফাতিহা পড়া যাবে৷ কেননা জানাযার নামায হচ্ছে, দুআ৷ দুআতে কিরাত পড়া হয় না, এটাই নিয়ম৷
তাহলে বোঝা গেলো, আমাদের দেশে হানাফী মাযহাব ও আহলে হাদীস মাযহাবের মধ্যকার জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া না পড়া নিয়ে যে ঝগড়া হয়, তা সম্পূর্ণই نزاع لفظي তথা শাব্দিক দ্বন্দ্ব বৈ কিছু নয়৷ তারা কিরাত হিসেবে পড়েন৷ আমরা বলি- পড়লে অসুবিধা নেই৷ কেননা দুআ ও সানা হিসেবে তো পড়া যায়৷
এক সালামে জানাযার নামায হানাফী এবং শাফেঈ মাযহাবে জানাযার নামায দুই সালামে শেষ করতে হবে৷ অপরদিকে মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবে এক সালাম৷ তবে দুই সালাম দিলেও সমস্যা নেই৷ হারামাইনের ইমাম সাহেবান হাম্বলী ফিকহ ফলো করেন হিসেবে একদিকে সালাম ফিরিয়েই নামায শেষ করেন৷ আমরা যারা হানাফী, দুদিকেই সালাম ফেরাব৷
কেননা আমাদের মাযহাবের দলিল তাদের চেয়ে শক্তিশালী৷ তাছাড়া যুক্তির বিচারেও দুদিকে সালাম ফেরানোই উচিত৷ ইশার পর মুআয ভাই নিয়ে গেলেন মদিনার সুপ্রসিদ্ধ রেস্টুরেন্ট 'মাত'আম মেহরান'-এ৷ আলীশান খাবার হলো৷ ভাত নয়, রুটি-গোশত ও আনুষঙ্গিক আইটেম৷ মদিনায় প্রায় ৬দিন অবস্থান করেছি৷ ভাত খেয়েছি মাত্র তিনবেলা৷ বাকি নাস্তার উপর চলেছে৷ সফরে ভাত কম খেয়ে থাকতে পারলে ভালো৷ শরীর হালকা-পাতলা থাকে৷ চলাফেরা ও কাজকর্ম সহজ হয়৷
সূত্র: মুফতি জিয়াউর রহমানের টাইমলাইন থেকে। যিয়ারতে হারামাইনের কারগুজারি পর্ব-১৩
-এটি