মুহা.আব্দুল্লাহ ইমরান।।
প্রতি বছরই রবিউল আউয়াল মাসের সূচনা লগ্ন থেকে মুসলিমদের হৃদয়ের পাতায় ভেসে আসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম ও মৃত্যুর স্মৃতি কথা। এমাসে বিশ্বনবী আলোকবর্তিকা হয়ে ধরার বুকে গমন করায় তা অতীশয় আহ্লাদের। আবার এমাসেই তিনি পরলোকগমন করায় তা সীমাহীন দুঃখ বেদনার।
তাই এমাসে বিশ্বনবীর স্মরণে ওয়াজ, মাহফিল ও সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যেখানে বিশ্বনবীর অনুপম প্রশংসিত গুণাবলী সমূহ আলোচনা করা হয়। এটা করা খুবই প্রয়োজন এবং তাৎপর্যবহ। তাঁর জীবনের এমন কোনো অধ্যায় নেই যেখান কেউ কলঙ্কের কালি বসাতে পারবে।তাঁর সম্পর্কে জানা এবং মানা প্রতিটি শান্তি প্রিয় মানুষের জন্য অপরিহার্য।
দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, কিছু মানুষ শুধুমাত্র রবিউল আউয়াল মাস আসলেই বিশ্বনবীর প্রেম ভালোবাসায় আত্মহারা হয়ে উঠেন। অথচ রাসূল সা. এর আদর্শ তাদের বাস্তব জীবনে খুবই বিরল। রাসূল সা. আদর্শ ব্যতীত অন্য আদর্শ যেন তাদের মনঃপূত।
রাসূল সা. কে অনুকরণের জন্য আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা. এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের জানিয়ে দেন: আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:(হে রাসূল) আপনি বলুন "তোমারা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। সূরা আল-ইমরান, আয়াত : ৩১
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন: নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সা. এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ২১
রাসূল সা. এর চরিত্র সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন: নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। সূরা আল- ক্বালাম, আয়াত: ৪। সুতারাং, সে আদর্শই অনুকরণীয় যার সার্টিফিকেট আল্লাহ তায়ালা নিজেই দিচ্ছেন। ইহার মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত। আর তাকে অনুকরণই তাঁর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ বহন করে।
পৃথিবীতে যখন কেউ কারো প্রেম ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়। তখন সে চায় তার ভালোবাসার মানুষের রঙে রঙিন হতে। প্রেমিক যে খাবার পছন্দ করে , সেও নিজের অজান্তেই সে খাবার পছন্দ করে ফেলে। প্রেমিক যে পোষাক পছন্দ করে, সেও সে পোষাক পছন্দকরে।প্রেমিক যে গুণে গুণ্বান্বিত, সেও সেগুণ অর্জনের জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে। সে তার প্রেমিকের আদর্শের প্রতিচ্ছবি হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে যায়।
রাসূল সা. কে ভালোবাসি, এটা শুধু মুখে বললেই আশেক হওয়া যায় না। বরং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক সকল ক্ষেত্রেই রাসূল সা. এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই হচ্ছে প্রকৃত আশেকে রাসূলের পরিচয়। যেমনি ভাবে, রাসূল সা. কুরআনের আলোকে তাঁর অতুলনীয় প্রশংসিত আদর্শের মাধ্যমে জাহিলিয়াতের মানুষকে আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন। অনুরূপ ভাবে, তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ মাধ্যমে আদর্শবান হয়ে ব্যক্তিগত আমলের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজ পরিবর্তন করা'ই হচ্ছে রবিউল আউয়ালের দাবি।
সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আদর্শ অতুলনীয়।তিনি সকল ধর্মের বর্ণের মানুষদের সমান দৃষ্টিতে দেখতেন। সকলের অধিকার রক্ষায় তিনি সর্বদা অটুট ছিলেন। তাঁকে অনুকরণের মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বিরাজমান। রবিউল আউয়াল শুধুমাত্র মাস হিসেবেই আসেনি। বরং রবিউল আওয়াল আমাদেরকে রাসূল সা. অনুসরণ, অনুকরণের বার্তা নিয়ে এসেছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা।
-এটি