আ.স.ম আল আমিন: স্বামী-স্ত্রী এমন একটি পবিত্র সম্পর্ক। যদি উভয়ের মাঝে সম্পর্ক ভালো থাকে, তাহলে তাদের দাম্পত্য জীবনে জান্নাতের সুখ নেমে আসে। বিপরীত হলে নেমে আসে ‘জাহান্নামে’র অশান্তি। পবিত্র কুরআন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ‘পোশাক’ বলেছেন।
দাম্পত্য জীবন সুখময় করে তুলতে ইসলাম স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের ওপর কিছু অধিকার আরোপ করেছে। সেগুলো মেনে চলতে পারলে আক্ষরিক অর্থেই তাদের জীবনে ‘জান্নাতি’ সুখ নেমে আসবে। স্বামীর অধিকারগুলো হলো-
১. স্বামীর উচিত বিবাহের পর যত দ্রুত সম্ভব স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা, কারণ এটি তার মৌলিক অধিকার। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ৪) তবে বিবাহের ক্ষেত্রে মোহর শর্ত ও রুকন নয় বরং এটি স্ত্রীর অধিকার।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের কোনো অপরাধ নেই যদি তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও এমন অবস্থায় যে, তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করনি কিংবা তাদের জন্য কোনো মোহর নির্ধারণ করনি। আর উত্তমভাবে তাদেরকে ভোগ-উপকরণ দিয়ে দাও, ধনীর ওপর তার সাধ্যানুসারে এবং সংকটাপন্নের ওপর তার সাধ্যানুসারে। সুকর্মশীলদের ওপর এটি আবশ্যক।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৩৬)
২. স্ত্রীর জন্য খরচ করা। তাদের যাবতীয় খরচ বহন করা স্বামীর ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত, সে আল্লাহ যা তাকে দান করেছেন তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন তদপেক্ষা গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপিয়ে দেন না। আল্লাহ কষ্টের পর দেবেন স্বস্তি। (সূরা ত্বলাক্ব, আয়াত :৭)
রাসূল সা: বলেছেন, ‘তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা এমন কাউকে তোমাদের বিছানা মাড়াতে দেবে না, যাকে তোমরা অপছন্দ করো। এমন করলে তাদেরকে হালকাভাবে প্রহার করো। আর প্রচলিত নিয়মে তাদের খাওয়া-পরার দায়িত্ব তোমাদের ওপর। (সহিহ মুসলিম : ৩০০৯)
৩. স্ত্রীকে বাসস্থান দেয়া। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেখানে তোমরা বসবাস করো, সেখানে তাদেরকেও বাস করতে দাও, তাদেরকে সঙ্কটে ফেলার জন্য কষ্ট দিয়ো না।’ (সূরা ত্বালাক্ব, আয়াত : ৬)
৪. স্ত্রীর সাথে ভালো ব্যবহার করা। আল্লাহ বলেন, আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করো।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১৯) হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো।’ (বুখারি : ৩১৫৩)
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকারগুলো হলো- স্ত্রীর সবচেয়ে বড় অধিকার হলো নিজের স্বামীর অধিকার রক্ষা করা, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর নারীদের ওপর তাদের স্বামীদের যেরূপ স্বত্ব আছে, স্ত্রীদেরও তাদের পুরুষদের (স্বামীর) ওপর তদনুরূপ ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে; এবং তাদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে; আল্লাহ হচ্ছেন মহা পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (সূরা বাকারাহ, আয়াত : ২২৮)
১. স্বামীর আনুগত্য করা। কারণ পুরুষরা হলো নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, আল্লাহ বলেন, পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাযাতকারিনী ওই বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেনে।
আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ করো এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান।’ (সূরা নিসা: ৩৪)
২. স্বামীকে ভোগ- উপভোগ করতে সুযোগ করে দেয়া। স্বামীর তার স্ত্রীর ওপর অধিকার রয়েছে যাতে তিনি তাকে উপভোগ করতে সুযোগ করে দেয়, তাই যদি কেউ একজন মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তিনি সহবাসের যোগ্য হন, তাহলে তাকে অবশ্যই চুক্তির মাধ্যমে তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে।
অর্থাৎ তাকে তার ত্বরান্বিত যৌতুক হস্তান্তর করা এবং প্রথা অনুযায়ী তাকে তার বিষয়টি ঠিক করার জন্য সময় দেয়া যেমন দুই বা তিন দিন যদি সে অনুরোধ করে কারণ এটি তার প্রয়োজন থেকে। এবং যেহেতু এটি সহজ, তাই এটি প্রথাগত। .
সহবাসের সময় স্ত্রী যদি স্বামীর কথায় সাড়া দিতে অস্বীকার করে, তাহলে সে গুনাহের মধ্যে পড়ে এবং একটি বড় গুনাহ করে, যদি না তাকে ঋতুস্রাব, ফরজ রোজা, অসুস্থতা ইত্যাদির মতো বৈধ ওজর দিয়ে মাফ করা হয়।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে , রাসূল সা:বলেন, “যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে এবং সে অস্বীকার করে এবং বিছানায় যায়। তার উপর রাগান্বিত হয়ে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দেয়। (বুখারি : ৩০৩৫)
৩) স্বামী যাকে প্রবেশ করতে অপছন্দ করেন তাকে অনুমতি না দেওয়া: স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার যে, সে যাকে অপছন্দ করে তার সাথে তার ঘরে প্রবেশ করবে না। হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা:বলেছেন: কোন মহিলার জন্য তার স্বামী উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া রোযা রাখা বৈধ নয়। এবং তার অনুমতি ব্যতীত তার বাড়িতে অনুমতি দেওয়া যাবে না (বুখারি ৪৮৯৯)
৪) স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া: স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার। ইমাম শাফিঈ ও হাম্বলী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার অসুস্থ পিতাকে দেখতে বের হওয়ার অধিকার তার নেই এবং তিনি তাকে তা থেকে বিরত রাখতে পারেন; কেননা স্বামীর আনুগত্য করা ফরজ, তাই এমন কিছু দিয়ে ফরয ত্যাগ করা জায়েয নয় যা ওয়াজিব নয়।
৫) শিষ্টাচার শিক্ষাদান: স্বামীর অধিকার আছে তার স্ত্রীকে শাসন করার যখন সে তার আদেশ অমান্য করে ভালোর সাথে, অবাধ্যতার সাথে নয়। আল্লাহ তায়ালা নারীদের শাসনের আদেশ দিয়েছেন পরিত্যাগ এবং মারধরের মাধ্যমে যখন তাদের আনুগত্য করা হয় না।
হানাফি মাযহাবে চার জায়গায় উল্লেখ রয়েছে , যেখানে স্বামীর জন্য স্ত্রীকে প্রহার করে শায়েস্তা করা জায়েয, তা হলো এই -:ক) সাজসজ্জা চাইলে সাজসজ্জা ত্যাগ করা । খ) পবিত্র থাকা অবস্থায় তাকে বিছানায় ডাকলে তার উত্তর না দেওয়া। গ) নামাজ না পড়া, ঘ) তার অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া।
দলিল হলো–আল্লাহ তায়ালা বলেন , এবং যাদেরকে তোমরা তাদের অবাধ্যতার ভয় কর, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদের বিছানায় ছেড়ে দাও এবং তাদের প্রহার কর( সূরা নিসা: ৩৪১) হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর (সূরা তাহরীম: ৬)
৬) স্বামীর সেবা করা: এ ব্যাপারে অনেক ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য রয়েছে, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেছেন: স্বামীর সেবা করা বাধ্যতামূলক, এবং এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হয়। একজন বেদুইনকে সেবা করা গ্রামবাসীর সেবা করার মতো নয় এবং শক্তিশালী ব্যক্তির সেবা করা দুর্বলের সেবা করার মতো নয়। (ফতোয়ায়ে কুবরা (৪/৫৬১)
লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব , বাংলাদেশ কওমী ছাত্রপরিষদ।
-এটি