আবদুল্লাহ তামিম
ভারত সরকার দেশের মাদরাসাগুলোর সমীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে। দারুল উলুম দেওবন্দসহ সব মাদরাসায় স্কুল শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। এ ধরণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দারুল উলুম দেওবন্দে এ বিষয়ে মুহতামিম সম্মেলন হয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন মাওলানা সালমান হুসাইনী নদভী। তিনি একজন ভারতীয় বিজ্ঞ আলেম, লেখক ও গবেষক। তিনি লখনউয়ের দারুল-উলূম নাদওয়াতুল উলামা মাদরাসার ডিন হিসেবে খেদমত করে যাচ্ছেন।
তিনি এ সমীক্ষার বিষয়ে বলেন, আমি আজ থেকে প্রায় ২৫/৩০ বছর আগে লিখেছি। আমাদের মাদরাসাগুলোর সিলেবাস কেমন হবে এ বিষয়ে আমার লেখা বইও আছে। আমাদের মাদরাসাগুলোর সিলেবাস আপটুডেট হওয়া অনেক জরুরি। এটাই আমি অনেক বছর আগে বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ২৫ বছর পর এসে দেওবন্দ থেকে এ ঘোষণা আসলো। এর আগে কখনো আমাদের কথা তারা গ্রহণ করেনি।
আমি ২৫ বছর যাবত বলে আসছিলাম যে মাদরাসার সিলেবাসে পরিবর্তন জরুরি। আজ যা হয়েছে সব আমাদের দূরদর্শিতার অভাবেই হয়েছে। আমরা যদি আরো আগে এ বিষয়ে ভাবতাম আজ এমন বিষয়ে সম্মুখিন কখনোই হতাম না।
তিনি আরো বলেন, মাওলানা গিলানির কথা মনে পরে, তিনি বলতেন জেনারেল লাইনেও আমাদের চেষ্টা করতে হবে। আমি এ কথাগুলোই বলেছিলাম আশির দশকে। তিনি আমাদের সত্তরের দশকে সিলেবাস আপডেট করতে বলেছিলেন।
মাওলানা আরশাদ মাদানিকে আমি বলেছিলাম যে সিলেবাস আপডেট করেন। তিনি বলেছিলেন কদিম সিলেবাসই আমাদের যতেষ্ট। এখন তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যারা দেওবন্দে ভর্তি হতে আসবে তারা অবশ্যই স্কুলে পড়ে আসতে হবে।
এ কথাগুলোই আমি ২৫ বছর আগে বলেছিলাম। আমি ওনার ছাত্রের মত। কিন্তু ছাত্রের কথাও শুনা উচিত। মাওলানা তাকি উসমানি বলেছিলেন আমাদের দেওবন্দের প্রয়োজন নেই আমাদের নতুন করে নদওয়াতুল উলামার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আমাদের উম্মুর কুরার প্রয়োজন আমাদের আল আজহারের প্রয়োজন।
এর আগে সরকারি স্বীকৃতিহীন মাদরাসাগুলি নিয়ে সমীক্ষার নির্দেশ জারির কারণে রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দেশের উল্লেখযোগ্য সকল মাদরাসার মুহতামিমদের নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দে একটি জরুরি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সামনের দিনগুলোতে মাদারাসা পরিচালনা পদ্ধতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকনির্দেশনা দেন দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসিন সাইয়্যিদ আরশাদ মাদানি।
এক. শিশুদের অধিকারের কথা মাথায় রেখে ছাত্রদের মারধরের পদ্ধতি আজ থেকে বন্ধ করতে হবে। না হলে মাদরাসাগুলোকে নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে না।
দুই. মাদরাসায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশের যত্ন নিতে হবে, বাথরুম ও টয়লেট পরিষ্কার রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে স্থায়ী লোক নিয়োগ করতে হবে।
তিন. উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত আধুনিক শিক্ষা সকল মাদরাসায় বাধ্যতামূলক করতে হবে। দারুল উলূম দেওবন্দও আগামী বছর থেকে শুরু করবে, ইনশাআল্লাহ।
চার. মাদারিসে ইসলামিয়ার আর্থিক হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিবেচনায় আনতে হবে। নিজস্বভাবে একটি বার্ষিক অডিট পরিচালনা করতে হবে। আগামী বছর থেকে মাদরাসাগুলোতে দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিনিধিরাও বিভিন্ন সময়ে হিসাব পর্যালোচনা করবে।
পাঁচ. মাদারাসার জমি ও সম্পত্তির কাগজপত্র স্থিতিশীল রাখতে হবে এবং এ ব্যাপারে একেবারেই গাফিলতি করা যাবে না৷
ছয়. সাম্প্রতিক জরিপ দেখে আতঙ্কিত হওয়া যান না, তবে জরিপ প্রতিনিধির সাথে বিনয়ী থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
সাত. দেশের যেমন আধুনিক শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন তেমনি জাতিরও প্রয়োজন একজন ভালো আলেম ও মুফতি। একজন ভালো হাফেজ ও ক্বারীর। একজন ভালো ইমাম ও মুয়াজ্জিনের এবং একজন ভালো ধর্মীয় নেতার।
আট. শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে বৈধ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে, প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হতে দেওয়া যাবে না।
নয়. মাদারিসে ইসলামিয়ার কর্মকর্তাদের এবং সংশ্লিষ্টদের সাহস ও পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রাখতে হবে৷
দশ. মাদরাসা ইসলামিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আল্লাহর প্রতি মুতাওয়াজ্জুহ থাকতে হবে৷
সূত্র: মাওলানা সালমান নদভীর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল
-এটি