মূল: মুফতি তাকী উসমানী।।
ভাষান্তর: মুফতি ফাহাদ হাসান।।
দ্বীনি মাদরাসা খেদমত করা, মাদরাসার সাথে যুক্ত থাকতে পারা অনেক বড় ভাগ্যের। আমাদের আকাবির ও আসলাফ সকলেই তালিম ও তারবিয়াতের সাথে যুক্ত ছিলেন। আকাবির ও আসলাফদের মধ্যে অনেকেই অর্থনৈতিক দৈন্যতা থাকা সত্ত্বেও পেটে ভাতে মাদরাসায় ছিলেন। কখনোও তাদের অভাব-অনটনের কথা বুঝতেও দেননি।
বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে। নবীন আলেমদের ধৈর্য্যও কিছুটা কম। আবার যারা কষ্ট সত্ত্বেও মাদরাসায় আছেন, তারাও নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নানা শর্ত যুক্ত করে দেয়। যেমন: মাদরাসার বাহিরে অন্য কোনও ব্যস্ততা রাখা যাবে না। চব্বিশ ঘন্টা মাদরাসার চৌহদ্দির ভিতরেই থাকতে হবে। ইত্যাদি।
মাদরাসায় চব্বিশ ঘন্টাই অবস্থান করতে হবে, অন্য কোনও কাজ করা যাবে না- এ ধরনের শর্ত করার ক্ষেত্রে শরঈ দৃষ্টিভঙ্গি কী? এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত আলেম দ্বীন ও বিশিষ্ট ইসলামী স্কলার আল্লামা তাকী উসমানী ফতোয়া দিয়েছেন। ফতোয়ার ভাষ্য হলো—
শিক্ষককে (মুদাররিস) পড়ানোর সময় ছাড়া অন্য সময় থাকতে বাধ্য করা শর্তে ফাসেদ। এমনিভাবে ছয় বা আট ঘন্টার পরিবর্তে চব্বিশ ঘণ্টা নির্ধারণ করে শিক্ষককে দিন-রাত থাকতে বাধ্য করা শর্তে ফাসেদ বা অবান্তর শর্ত। কারণ এতে কয়েকটি খারাপ দিক সামনে আসে।
১. শিক্ষক ও গোলামের কাজ ও সময় নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। চব্বিশ ঘণ্টা অবস্থান করা ইজারা তথা ভাড়ার শর্ত। বর্তমানে মাদরাসা সমূহে ইজারা পদ্ধতি প্রচলিত।
২. এটা এমন একটা শর্ত যার উপর আমল করা কঠিনই নয় বরং অসম্ভবও বটে। এজন্য এ শর্ত করা ও তা মানতে বাধ্য করা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার নামান্তর।
৩. এ ধরনের শর্তারোপ করা সালাফে সালেহীনের রীতির বিরুদ্ধ। দারুল উলূম দেওবন্দ, মাযাহেরুল উলূম এবং থানাভবনে এ শর্তের বিপরীত প্রচলন রয়েছে। এবং মুদাররিস তথা শিক্ষকগণ অবসর সময়ে নিজের ব্যস্ততা এমনকি ব্যবসায়িক কাজেও ব্যস্ত থাকতেন। আকাবিরদের ঘটনা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
তবে জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ইজারার সময় এবং কাজের মধ্যে কোনও ধরণের ত্রুটি হতে পারবে না।
ইজারার সময় ব্যতিত অন্য সময়ে শিক্ষক জীবিকা নির্বাহের কোনও কাজ করতে পারবে না— এ ধরণের শর্ত করা শর্তে ফাসেদ। তবে এ কারণে বেতন কমিয়ে দেওয়া ইজাদাদাতা বা মালিকের অধিকার আছে।
(ফাতাওয়ায়ে উসমানী, ৩/৩৭৯-৩৭৪, ফতোয়া নম্বর,৩/৩০)
-এএ