মুফতি আখতার হুসাইন ফয়জী।।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আজ সমকামিতাকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে। ভারতে সমকামিতা এখন আর অপরাধ নয়। গনমাধ্যম তাদের ভাষায় এই সংবাদকে ‘ভারতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ বলে নিউজ করেছে।
কিন্তু এটা ‘নতুন অধ্যায়ের সূচনা’! নাকি ‘জঘন্য পাপাচারের গজবের সূচনা’? কারন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সমকামিতা বা homosexuality সম্পূর্ণ হারাম করেছেন। এটা স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও অধিকতর নিকৃষ্ট পাপ।
হযরত লুত (আঃ) এর কওমকে (Sodom আর Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সমকামিতার পাপের কারনে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে বলছেন- “আর লূতকে আমি নবী বানিয়ে প্রেরণ করেছি। তারপর স্মরণ করো যখন সে নিজ জাতির লোকদেরকে বললো, তোমরা কি এতদূর নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছো যে, তোমরা এমন সব নির্লজ্জতার কাজ করছো, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা
স্ত্রী লোকদেরকে ত্যাগ করে পুরুষদের দ্বারা নিজেদের যৌন ইচ্ছা পুরন করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা একেবারেই সীমালংঘনকারী জাতি। কিন্তু তার জাতির লোকদের জবাব এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না যে, বের করে দাও এই লোকদেরকে তাদের নিজেদের জনপদ হতে, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র বলে দাবী করে। শেষ পর্যন্ত লূত ও তার ঘরের লোকদেরকে তার স্ত্রী ব্যাতিত যে পছন্দের লোকদের সাথে রয়ে গিয়েছিল, বেছে বের করে নিলাম। সেই জাতির লোকদের উপর এক প্রচন্ড বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। এরপর দেখ ওদের সেই অপরাধী লোকদের কি পরিণাম হলো।” (সূরা আরাফ : ৮০-৮৪)
“সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সাথে কুকর্ম কর?এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (সূরা শুয়ারা, ১৬৫-১৬৬)
স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও।
এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম।” (সূরা নামল, ৫৪-৫৭)
আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।” (সূরা আনকাবুত, ৩১)
রাসুল সা. বলেছেন-আমি আমার কওমের জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে… (তিরমিজি, ১৪৫৭)
তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।” (আবু দাউদ, ৩৮:৪৪৪৭)
আধুনিক ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে নৈতিকতা যেন দিন দিন বই পুস্তকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে! আধুনিক সমাজে মুক্ত যৌনচার সভ্য মানুষকে পশুত্বের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে। বস্তুবাদী সমাজে অশালীন ও অশ্লীল যৌনাচার, নৈতিকতাহীনতা এক ভয়াবহ স্তরে উপনীত হয়েছে। ফলে পরিবার গঠন এবং বিবাহ পদ্ধতি প্রায় যেন বিলুপ্তির পথে।
অবাধ যৌনাচারের উপর কোন ধর্মীয় এবং সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ যেন আজকের সমাজে অনগ্রসরতার প্রতীক! আমরা যাকে সভ্যতা বলে জাহির করতে চাচ্ছি আসলে সেটা যে নৈতিকতার বীভৎসতা, সেই উপলব্ধিটুকুও যেন আজ আমরা হারাতে বসেছি!
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই নিকৃষ্টতম পাপ থেকে হেফাজত করুন।
-এটি