|| কাউসার লাবীব ||
সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে ‘গণতন্ত্র ও ভোট পদ্ধতি: ইসলামের দৃষ্টিকোণ’ বিষয়টি। আরো আলোচনায় এসেছে ‘প্রচলিত রাজনীতির ভোট পদ্ধতিকে জিহাদ বলা যাবে কি না?’ এ বিষয়ে কয়েক দিন ধরে ইসলামিক স্কলার ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর একটি ভিডিও অনেকের টাইমলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। এরই প্রেক্ষিতে জবাবমূলক ভিডিও আলোচনা আসে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের পক্ষ থেকে।
আরো পড়ুন: ড. এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর বক্তব্য নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা আলোচনা-সমালোচনা
আলোচনায় তিনি বলেন, আমরা অন্যায়ের মোকাবেলা করছি। আমরা আমরা বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষ করি না। বাতিলের বিরুদ্ধে হুংকার ছেড়েছি। সব সময় জানের ভয়, মালের ভয়। মামলার সমন আমাদের সামনে ঝুলতে থাকে। আমাদের কত সাথীরা আন্দোলনে মারা যাচ্ছে। এদিকে আপনারা ফতুয়া দিয়া জান্নাতে চলে যাচ্ছেন। আর আমাদেরকে কাফের বানায়া রাখছেন। ছোট ছোট তলাবাদের কে যা ইচ্ছে তা বলতেছেন।
মুফতি ফয়জুল করীম ফতোয়া প্রদানকারীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এদের ফতোয়ায় পাকিস্তানে মুফতি তাকি উসমানী হাফিজাহুল্লাহ মুশরেক। দেওবন্দীরা মুশরেক। সমস্ত ওলামায়ে কেরাম মুশরিক। নির্বাচন করছেন তো মুশরিক হয়ে গেছেন! এদের ফতুয়ার পেছনের কারণ কি জানেন? দেখেন, এদের ফতোয়ায় আওয়ামী লীগের একটা ভোট কমবে? বিএনপি’র কোন ভোট কমবে? বরং এদের ফতোয়ায় ভোট কমবে ইসলামপন্থীদের।
ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির বলেন, ভোটের ক্ষেত্রেই এদের গণতন্ত্র নিয়ে সংশয় জাগে। জমি কিনতে গেলে যে রেজিস্ট্রেশন করা হয় সেটাও তো গণতন্ত্রের দেশের আইন মেনে করা হয়। যে টাকা ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় প্রয়োজন মিটানো হচ্ছে সে টাকাও তো প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের। বিয়ের কাবিন নামা তো সরকারি আইন মেনেই করা হচ্ছে। মসজিদ বানানোর জন্য যে জমির দলিল করা হচ্ছে সেটাও তো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাতানো পথ অনুযায়ী। আপনি যে পাসপোর্ট করেছেন সে পাসপোর্টে কি লেখা আছে তা কি দেখেছেন? যে আইডেন্টি কার্ড নিয়ে ব্যবহার করছেন সেটি কোথা থেকে এসেছে? যে বাজার করতেছেন তার ‘এল সি’ কোথা থেকে আসছে? এই যে কারেন্ট ব্যবহার করছেন এর ভ্যাট-টেক্স কোথায় দিচ্ছেন? আপনি গণতন্ত্র দেশের নাগরিক। সেখানে থাকছেন, খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন, হাঁটছেন, ঘুরতেছেন, মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন, মসজিদে নামাজ পড়ছেন কোন কিছুতেই আপনার সমস্যা নেই। সমস্যা শুধু গণতান্ত্রিক আন্ডারে নির্বাচনে অংশ নেয়া। গণতন্ত্র আর কোথাও নেই। গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের মধ্যে!
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, আসলে বাতিলপন্থীরা বুঝতেছে নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ ইসলামের দিকে ঝুঁকছে। প্রচলিত দলগুলোকে ছেড়ে ইসলামী দলগুলোকে বেছে নিচ্ছে। তাদেরকে ভোট দিচ্ছে। হাতপাখার বাতাসে লাঙ্গল ভেঙে যাচ্ছে, ধানের শীষ উড়ে যাচ্ছে, নৌকার পাল ছিড়েছে। এ অবস্থায় তাদের মাথা ঠিক নেই। এই মুহূর্তে ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকা থেকে ফতুয়া চলে আসছে নির্বাচন হারাম, গণতন্ত্র জায়েজ নেই।
তিনি বলেন, মজার ব্যাপার হলো মুফতি আমিনী সাহেব রাহিমাহুল্লাহ নির্বাচন করেছেন, তিনি কাফের হননি। হাফিজ্জী হুজুর রাহিমাহুল্লাহ নির্বাচন করেছেন, কাফের হননি। পাকিস্তানের মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেব নির্বাচন করছেন, মুশরিক হননি। দেওবন্দের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ নির্বাচন করে তারাও কাফের না। চরমোনাইওয়ালারা নির্বাচনে এসে কাফের হয়ে গেছে! তারা মুশরিক হয়ে গেছে!
সবশেষে তিনি বলেন, পাকিস্তানের মুফতি তাকি উসমানি হাফিজাহুল্লাহ নির্বাচনকে জিহাদ বলেছেন, তিনি মুশরেক বা মুহার্রিফ নন। হাফিজ্জী হুজুর রাহিমাহুল্লাহ নির্বাচনকে জেহাদ বলেছেন তিনি কাফের হননি। আসলে হাফেজ্জী হুজুরের জামানায় এই আইএস-এর তো জন্ম হয়নি তাই তিনি মুশরেক না হয়ে কবরে যেতে পেরেছেন। তাদের ফতুয়ার শিকার হতে হয়নি। আমিনী সাহেব হুজুর নির্বাচনকে জিহাদ বলেছেন কাফের হননি। আরে, আমরা তো নিজ থেকে কিছু বলিনি। আমাদের মুরুব্বীরা যা বলেছেন আমরা তার অনুসরণ করেছি। তা বর্ণনা করছি।
কেএল/