বরিশাল ব্যুরো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বরিশালের আগৈলঝাড়ার ছাত্র-জনতাসহ আহতদের মধ্যে অনেকেই এখনও সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি। আহতরা আগৈলঝাড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তিন মাস অতিবাহিত হলেও এদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় অসচ্ছলতার কারণে সুচিকিৎসা করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত আগৈলঝাড়ার ১২ জনের একটি তালিকা গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসেছে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন বলেন, আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমি ওই কাগজপত্র জেলা যাছাই-বাচাই কমিটি কাছে পাঠিয়েছি।
আহতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে রিপন খাঁন ১৫ জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ছাত্রলীগের হামলায় মাথায়, কোমরে ও পায়ে লোহার রড দিয়ে আঘাত পেয়ে গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-৭১ হলের ৭০১০ কক্ষে পঙ্গু অবস্থায় জীবনযাপন করেছেন। বাবা পেশায় একজন দিনমজুর হওয়ায় অর্থের অভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।
রাজধানীর মিরপুর-১ এর প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পয়সা গ্রামের জামাল বখতিয়ারের ছেলে অহিদুল বখতিয়ার মিরপুর-১০ এ গত ১৮ জুলাই দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিছিল চলাকালে ছাত্রলীগের হামলায় মাথায় গুরুতর জখম হয়। পরে রাজধানীর কাফরুল হেলথ কেয়ার ইউরোলজি হাসপাতালে ৫ দিন চিকিৎসা নিলেও এখনো মাথায় জখমের স্থানে ইনফেকশন হওয়ায় পুরোপুরি সুস্থ হননি তিনি।
ঢাকা ইডেন কলেজের মনোবিজ্ঞান ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের আমবৌলা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মেয়ে জান্নাতুল নাঈম জুসি গত ১৫ জুলাই বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মিছিলে ছাত্রলীগ তার পায়ে, হাতে ও পিঠে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে অসুস্থ অবস্থায় জীবনযাপন করেছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের ইসুফ মিয়ার ছেলে রাজধানীর প্রাইভেটকারের চালক করিম মিয়া (২৬)। গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিছিলের মধ্যে পরে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে হাতে ও বুকেসহ শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আহত হয়। বক্ষব্যধি হাসপাতালে ১ মাস চিকিৎসা শেষে বর্তমানে বাসায় রয়েছেন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের লোকমান হোসাইনের ছেলে বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ। গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১৩ এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিছিলের মধ্যে পরে পুলিশের গুলি মাথার পেছনে চামরার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। এতে অচেতন হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে মিরপুর-৬ নম্বর আলোক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে যশোর কুইন হাসপাতালে মনরোগ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসানের অধীনে চিকিৎসাধীন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের শিহিপাশা গ্রামের ইসমাইল হোসেন ছেলে আগৈলঝাড়া সরকারি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান গত ৪ আগস্ট বিকেলে বরিশাল নগরীর হাতেম আলী চৌমাথায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। এ সময় তাদের মিছিলে পুলিশের টিআর সেল নিক্ষেপের সময় চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দৌড়াতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হন।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের শাহ্ জালাল ফড়িয়ার ছেলে আগৈলঝাড়া সরকারি শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইয়াসিন। গত ২৮ জুলাই বিকেলে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। এসময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত হন।
এছাড়াও আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পতিহার গ্রামের আলাউদ্দিন সরদারের ছেলে আল-আমিন সরদার, একই গ্রামের মানিক সরদারের ছেলে হাসান সরদার, একই ইউনিয়নের সুজনকাঠী গ্রামের টিটু মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলাম মোল্লা, শিহিপাশা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে রিয়াদ হোসেন, রাজিহার ইউনিয়নের চেংঙ্গুটিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারীর ছেলে মোশারফ হোসেনসহ অনেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহত হন।
আহতরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আহতরা বর্তমানে দুর্বিসহ জীবনযাপন করলেও এখন পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারিভাবে কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতায় না পাওয়ায় তারা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিহা তানজিন বলেন, আমার কাছে আহতরা ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। বরিশাল জেলা প্রশাসককে আহবায়ক ও জেলা সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতের কাগজপত্র যাছাই-বাচাই করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। ওই কমিটিতে জেলার ১০ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারাও সদস্য হিসেবে রয়েছেন।