বর্তমান সময়ে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মাদরাসা শিক্ষকদের হুট করে চাকরি থেকে অব্যহতি দেয়া হচ্ছে। কোনো নীতিমালা জবাবদেহিতা না থাকায় অনেক কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে হালকা করে দেখেন। যার ফলে অনেক ভুক্তভোগী জুলুমের শিকার হোন। নানামূখী সমস্যায় পড়তে হয় পরিবার নিয়ে। হুট করে কোথাও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের। এ বিষয়ে আসলেই কী কোনো নীতি-মালার প্রয়োজন আছে? বিষয়টি নিয়ে তরুণ আলেম লেখক গবেষকদের সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ তামিম।।
ইমাম খতিব ও কওমি মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ ও বিদায় দিতে এ বিষয়ে অবশ্য নীতিমালা থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন, রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব ও মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল-মাদানী ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় ৫ লক্ষ মসজিদ আছে। ৫ লক্ষ মসজিদে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান। এছাড়া বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজারের মতো কওমি মাদরাসা আছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সুষ্ঠু ও ধারাবাহিক পরিচালনার জন্য নীতিমালা অবশ্যই দরকার। তিনি বলেন, হঠাৎ করে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার শিক্ষক বিদায় ঘটনা অহরহর করছে।
যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে বিশেষ প্রয়োজনে ইমাম ও শিক্ষক পরিবর্তন করার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই বলে কোন ধরনের কারণ দর্শানো ছাড়া এভাবে বিদায় করে দেওয়া অমানবিক আচরণ বৈ আর কিছু আমি মনে করি না।
আমরা জানি বিভিন্ন কওমি মাদরাসার শিক্ষকদের অনেক বেতন বকেয়া থাকে। বিদায়ের সময় অনেকের বকেয়া পরিশোধ করা হয় নাই। যদি নীতিমালা করা হয় শিক্ষক বিদায়ের সময় তার বকেয়া পরিশোধ করে দিতে হবে তাহলে হুটহাট শিক্ষক পরিবর্তনের প্রবণতা অনেক কমে যাবে।
দৈনিক যুগান্তরের সহসম্পাদক, তোফায়েল গাজালি দুইটি ঘটনার অবতারণা করে জানান, আমাদের গ্রামের মাদরাসা-শৈশবে যেখানে আমাদের লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়েছে। এই মাদরাসায় খুবই সহজসরল একজন হুজুর ছিলেন।
মাদরাসার দুর্দিনে তাকে কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করতে দেখেছি আমরা। গত কয়েক মাস আগে হটাৎ আমার এক বন্ধুর মারফতে জানতে পারলাম হুজুরকে মাদরাসা থেকে মুহতামিম এবং কমিটি মিলে বের করে দিয়েছেন।
হুজুরের কাছে ঘটনা জানতে চাইলে হুজুর বললেন, দুই যুগের বেশি সময় মাদরাসায় ছিলাম। ছোট্ট মাদরাসাটিকে বড় করার জন্য জীবন বাজি রেখে মেহনত করেছি। এখন মাদরাসা বড় হয়ে গেছে। আমরা ছোট হয়ে গেছি। তাই মাদরাসায় আমার মতো ছোটদের আর জায়গা হলো না।
আজ দুপুরে আমার এক বন্ধু কল করে কোনো মসজিদের ইমাম খতিবের চাকরির সন্ধান করছিলো। বললাম, তুমি তো বড় মসজিদের খতিব! কেন হটাৎ কী হলো? আফসোস করে বললো, বিগত ৯ বছর মেহনত করে মাটির মসজিদে মার্বেল লাগিয়েছি। কাঁচা দেওয়াল পাকা করেছি।
পুরাতন ঘুনে ধরা মসজিদ এখন নতুনই নয়-আলো জলমল হয়েছে। সময় আমাকে পুরাতন করে দিয়েছে। নতুন মসজিদে পুরাতন ইমাম আর চলে না। তাই কমিটি বিদায় দিয়েছেন।
এ গল্প একজন মাদরাসা শিক্ষক অথবা একজন ইমাম-খতিবের নয়। শতশত মাদরাসা-মসজিদের নিরপরাধ ও মজলুম হাজার হাজার আলেমের।
এ সংকট ও সমস্যার সমাধানে মসজিদ-মাদরাসা নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সময়ের অনিবার্য দাবী। আশা করি দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন।
-এটি