|| কাউসার লাবীব ||
দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল ১০টি। সম্প্রতি বিএনপি’র সঙ্গ ছাড়ার বিষয়ে তাদের অন্যতম শক্তিশালী জোট ‘জামায়াতে ইসলামী’র আমীরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর থেকে স্যোশাল মিডিয়া ও নানা মহলে চলে আলোচনা-সমালোচনা। যদিও দলটির কার্যকরী পরিষদের সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ জানিয়েছেন, তারা ২০ দলীয় জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত এখনো নেননি।
এদিকে ইতোমধ্যেই ইসলামী দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে কাজ শুরু করেছে ইসলামী আন্দোলন। দলটির পক্ষ থেকে ধর্মভিত্তিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। হচ্ছে সৌজন্য সাক্ষাৎ। গত শুক্রবারও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। সাক্ষাৎ শেষে কল্যাণ পার্টির নেতারা জানিয়েছে চরমোনাই পীরের যে কোন গঠনমূলক উদ্যোগে দলটি সাড়া দেবে।
বর্তমান সার্বিক এই পরিস্থিতিতে দেশের সব ধর্মভিত্তিক দল কি এবার একই ছাতার নিচে আসার সম্ভাবনা আছে? জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এতদিন আমরা জনসম্পৃক্ত কর্মসূচিতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ একটা প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছি। একত্রে কাজ করার পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে সৌজন্য সাক্ষাৎ করছি, কথা বলছি।’
সম্পতি জোট ছেড়েছে জামায়াত। তারা যদি আপনাদের সঙ্গে ঐক্য গড়তে চায় তাহলে আপনাদের পদক্ষেপ কী হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে চট করে এক কথায় এর উত্তর দেয়া মুশকিল। কারণ জামায়াত তো এখন ওপেন পলিটিক্স করছে না। অন্যভাবে বললে, তারা ওপেনে রাজনীতি করতে পারছে না। আগামী নির্বাচনকে ঘিরে আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলছি, আলাপ-আলোচনা করছি তারা সবাই ওপেনে রাজনীতি করছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। এবং তাদের সংগঠন বেশ মজবুত। তাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এ দেশে যারা ইসলামের জন্য মানবতার জন্য রাজনীতি করছে তারা জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য গড়বে কি গড়বে না সেই পরিবেশ জামায়াতকেই তৈরি করতে হবে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী দলগুলোর মাঝে কোনো ঐক্য হচ্ছে কী না? জানতে চাইলে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘মাটি মাটির সঙ্গে মিশে যেভাবে ইট হতে পারে। ইট ইটের সঙ্গে মিশে যেভাবে দেয়াল হতে পারে। দেয়াল দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেভাবে বিশাল অট্টালিকা হতে পারে। ইসলামী দলগুলোর মাঝের ঐক্য হতে পারে। যারা ইসলামী রাজনীতি করেন তাদের জীবনে কোনো ব্যর্থতা নেই। তারা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের জন্য রাজনীতি করেন। এ দুনিয়ায় তারা কোনো সফলতা না পেলেও আখেরাতে এর বদলা পাবে।
তিনি বলেন, দেশের রাজনীতির আকাশে ঐক্য নিয়ে একটি আলোচনা হচ্ছে এটি ভালো দিক। ঐক্য আমাদের জন্য ইবাদত। ঐক্যের মাধ্যমে ইসলামী রাজনীতি শক্তিশালী হয়। ইসলাম আলো ছড়িয়ে মানুষের সামনে উদ্ভাসিত হয়। আসলে আমাদের ব্যর্থতা হলো আমরা আমাদের সমর্থণকে ভোটে পরিণত করতে পারি না। আমাদের সমর্থণকে ভোটে পরিণত করতে হবে। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি কী করা যায়। শীর্ষ নেতারা প্রাথমিক আলোচনা করছেন বিভিন্ন দলের সঙ্গে। এখনো তো নির্বাচনের অনেক বাকি। সামনে হয়তো কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
জামায়াতের সঙ্গে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য হচ্ছে কীনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের তো নিবন্ধন নেই। নির্বাচনকে ঘিরে ঐক্য হয় নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো হচ্ছে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে খেলাফত মজলিস কোনো জোটে যোগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে কি না জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বের হয়ে আমরা এককভাবে আমাদের দলীয় রাজনীতি করছি। জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি পালন করছি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপাতত কোনো জোটে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই। সময় হলে এ বিষয়ে ভেবে দেখব।’
এখন পর্যন্ত যেসব দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের বৈঠক হয়েছে এদের একটি খেলাফত মজলিস। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে ইসলামি দলগুলোর ঐক্যের সম্ভবনা কতটুকু জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলী বলেন, এখনই ঐক্যের সময় নয়। এখন পর্যবেক্ষণের সময়। নির্বাচনের তো এখনো অনেক বাকি। আগামী জুলাই নাগাদ হয়তো কোনো ঘোষণা আসতে পারে। দেশের মানুষ ইসলামী দলগুলোর ঐক্য চায়। আসলে আমরা তো আদর্শের জায়গা থেকে এক। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ইসলামী দলগুলো কখনোই ঐক্য হয়নি।
জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী দেশের বৃহৎ একটি দল এটি সত্য। তবে তারা ইতোপূর্বে কখনোই দেশের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদায় বিশ্বাসী দলগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে মিশতে পারেনি। তারা বড় দলগুলোর সঙ্গে থেকেছে।
ইসলামী আন্দোলনের বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গেও। এ বিষয়ে দলটির নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি দেড় বছর। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে এলে এবং দলগুলোর নেতাদের মধ্যে দূরত্ব কমে এলে জোট গঠনের দিকে যেতে পারি। ইসলামী আন্দোলনের নেতারা আমাদের কার্যালয়ে এসেছিলেন, আমাদের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো ভেবে দেখছি।’
কেএল/