মুফতি যুবাইর মাহমুদ রাহমানি
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করার পর ভালো কাজের আদেশ দেন। আর মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। তো আমরা ভালো কিংবা মন্দ যে কাজই করি, তার জন্য রয়েছে কতিপয় সাক্ষী। এসকল সাক্ষী আমাদের পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। সুতরাং আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত সাক্ষীসকল যেন আমাদের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করে, বিপক্ষে সাক্ষ্য না দেয়, আমাদের সে চেষ্টা থাকা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাওফিক দিন।
এ পর্যায়ে আমি কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে হাশরের দিবসের আট সাক্ষী কারা হবে, নিচে তুলে ধরছি।
প্রথম সাক্ষী: জমিন। আমরা যে জমিন বা ভূমিতে পাপকাজ করি, সে জমিন হাশরের দিনে আল্লাহর দরবারে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে,
يومئذ تحدث أخبارها بأن ربك أوحى لها
সেদিন সে (জমিন) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ, আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন। (সুরা যিলযাল: ৪, ৫)
দ্বিতীয় সাক্ষী: সময়। হাশরের মাঠে সময়ও বান্দার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। দিন সাক্ষী হবে, রাতও সাক্ষী হবে। হাদিসে পাকে এসেছে,
ينادى كل يوم يوم جديد وأنا فيما تعمل فى شهيد.
প্রতিটি দিবস ডেকে ডেকে বলে, আমি একটি নতুন দিন। তুমি আমার ভেতর যে আমল করবে, আমি কেয়ামত দিবসে তোমার জন্য তারই সাক্ষ্য দেব।
তৃতীয় সাক্ষী: জবান। হাশরের দিনে জবানও মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। যেমন পবিত্র কুরআন বলছে,
يوم تشهد عليهم ألسنتهم
যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত। (সুরা নুর: ২৪)
চতুর্থ সাক্ষী: শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। শরীরের অন্যান্য অঙ্গও তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে,
وتكلمنا أيديهم وتشهد أرجلهم بما كانوا يكسبون.
আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব। তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে। (সুরা ইয়াসিন : ৬৫)
পঞ্চম সাক্ষী: ফেরেশতা। দুজন ফেরেশতাও মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। যাদেরকে কিরামান কাতিবিন বলে।
وإن عليكم لحافظين، كراما كاتبين، يعلمون ماتفعلون.
অবশ্যই তোমাদের ওপরে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর। (সুরা ইনফিতার: ১০, ১১, ১২)
ষষ্ঠ সাক্ষী: আমলনামা। মানুষের আমলনামাও তার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। মানুষ যখন তার আমলনামা দেখবে, তখন সে বলে উঠবে,
ما لهاذا الكتاب لا يغادر صغيرة ولا كبيرة إلا أحصاها ووجدوا ما عملوا حاضرا ولا يظلم ربك أحدا.
তারা বলবে : হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা! এ যে ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি-সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারও প্রতি জুলুম করবেন না। (সুরা কাহফ: ৪৯)
সপ্তম সাক্ষী: জ্বিন ও ইনসানের নবি হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওপরের ছ' সাক্ষীর তুলনায় সপ্তম সাক্ষী বড় নাযুক! হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সকল উম্মাহর আমলসমূহ ফেরেশতাদের মাধ্যমে প্রতি বৃহস্পতিবার নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পেশ করা হয়। আল্লাহর নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বান্দার নেক আমল দেখে সন্তুষ্ট হন। আর মন্দ আমল দেখে অসন্তুষ্ট হন। فكيف إذا جئنا من كل أمة بشهيد وجئنا بك على هؤلاء شهيدا. আর তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে, যখন আমি ডেকে আনব প্রতিটি উম্মতের মধ্য থেকে অবস্থা বর্ণনাকারী এবং আপনাকে ডাকব তাদের ওপর অবস্থা বর্ণনাকারীরূপে।(সুরা নিসা: ৪১)
অষ্টম সাক্ষী: স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কেয়ামত দিবসে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাও বান্দার বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন। আমরা মনে করছি, বিভিন্ন কিছু আমাদের ওপর সাক্ষী হবে।
কিন্তু খোদ আল্লাহ যে আমাকে দেখছেন, প্রতিটি কর্মের সাক্ষী হচ্ছেন, তা কি কখনও ভেবেছি। দুনিয়ার মানুষ থেকে আমি আমার গুনাহকে গোপন করার চেষ্টা করছি, কিন্তু আল্লাহ থেকে কি তা গোপন রাখতে পারব? পবিত্র কুরআন বলছে, ولا تعملون من عمل إلا كنا عليكم شهودا. কিংবা যে কোন কাজই তোমরা কর অথচ আমি তোমাদের নিকট উপস্থিত থাকি যখন তোমরা তাতে আত্মনিয়োগ কর। (সুরা ইউনুস: ৬১)
লেকক: মুহাদ্দিস, জামিআ হোসাইনিয়া মদিনাতুল উলুম, ভোলা।
-এটি