আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: আধুনিক জীবনে নিত্যদিনের ব্যস্ততা আর জ্যামে আটকে আছি। পড়াশুনা, চাকরি, ব্যবসা, ইত্যাদি কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত যে আমাদের নিজেদের দিকে, বিশেষ করে নিজেদের শরীরের দিকে খেয়াল রাখার কোনো প্রয়োজন মনে করি না।
প্রাণখুলে উপভোগ করতে গেলে নিত্য জীবনযাপনে পুষ্টিকর আহার ও নিয়মিত শরীরচর্চা না করলেই নয়। বেশ কিছুদিন স্বাস্থ্যের খাতিরে ভাবছেন যোগাসন কিংবা জিমে যাওয়া শুরু করবেন। যাদের জিমে যাওয়া সম্ভব হয় না, তাদের জন্য হাঁটা একটি অনেক ভালো ব্যায়াম হতে পারে।
শরীর ভালো রাখতে নিয়মিত হাঁটার বিকল্প নেই। কেবল শরীর নয়, মন সতেজ রাখতেও এর তুলনা হয় না। এছাড়া যারা ওজন কমানো নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন, তাদের জন্যও হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। হাঁটার মাঝে কথা না বলে নিজের জন্য ভালো কথা চিন্তা করলে আরো বেশি কাজ করার জীবনী শক্তি পাবেন। আপনার জীবনে উন্নতি হবেই।
ওজন কমানোই হোক কিংবা শরীর ভাল রাখা। যে কারণেই হাঁটুন না কেন। অন্তত নিয়মিত ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হাটুন। পারলে দু’বেলাই হাঁটুন। এতে স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং শরীরের একাধিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বাড়তি মেদ ঝরানোর পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটলে কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস ও স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে। পাশাপাশি হার্ট, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি ক্যানসারের মতো রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস। কেন আমাদের আরো বেশি হাঁটা প্রয়োজন এবং জেনে নিন হাঁটার উপকারিতা-
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্প্রতি গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনি যত বেশি হাঁটবেন, তত আপনার ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা কম হবে। যিনি সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাঁটেন, তিনি ডায়াবেটিস থেকে তত দূরে থাকেন যিনি প্রতিদিন ৩,০০০ স্টেপ হাঁটেন। গবেষণায় দেখা গেছে, খাবার খাওয়ার পরে মাত্র দুই মিনিট হাঁটলেই রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকখানি কমে যেতে পারে। অনেক দিন ধরেই বলা হয়, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবার খাওয়ার পরে বেশ কিছুটা হাঁটতে। বিশেষ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট সময় না পেলেও মাত্র দুই মিনিট হাঁটলেই শরীর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে শুরু করে।
মানসিক সুস্থতা ভালো থাকে: অফিসে বা কাজে হেঁটে যাওয়া অনেক ভালো একটি উপায়। সকালে হাঁটার অভ্যাসের পাশাপাশি কাজের জায়গায় গিয়ে আপনাকে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করবে।‘ইট দিস ডট কম’ ওয়েবসাইটের এক গবেষণায় অ্যাংলিয়াস নরউইচ মেডিকেল স্কুলের প্রধান গবেষক অ্যাডাম মার্টিন বলেন, যারা গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাদের মানসিক সুস্থতা বেশি খারাপ হয়। আর যারা বেশি হাঁটেন, তাদের মানসিক সুস্থতা ততই ভালো হয়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: খাবার খাওয়ার পর পরই হাটবেন না। বরং ঘন্টাখানেক পর কিছুক্ষণ পায়চারি করুন বা কিছুক্ষণ হাটুন। এই অভ্যেসের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে ও স্থুলতার হাত থেকে রেহাই পাবেন।
হাড় শক্ত হবে: হাঁটলে গোটা শরীরের এক্সারসাইজ হয়। তাই নিত্য জীবনযাপনে হাঁটার অভ্যেস রাখলে শরীরের হাড় ও মাংশপেশী শক্তপোক্ত হয়।
শারীরিক গঠন অটুট রাখতে সাহায্য করে: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদেরকে সারাদিন চেয়ারে, সোফায় কিম্বা গাড়িতে বসে কাজ করতে হয়। এর ফলে শারীরিক গঠনে, বিশেষ করে পিঠে - ব্যথা হতে পারে। চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করা আপনাকে পিঠের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে
বিষণ্ণতা কাটাতে সাহায্য করে: দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে? তা হলে রোজ হাঁটার অভ্যেস করুন। এতে মন ভাল হয় এবং শরীর ও মেজাজ দু’ই ফুরফুরে থাকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের বেলাতে বিষণ্ণতা দেখা যায় বেশি। যতোই সক্রিয় থাকা যায় ততোই ভালো। রক্ত প্রবাহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয় বলে ধারণা রয়েছে। আপনি যদি প্রচুর হাঁটেন, রক্ত প্রবাহের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে সেগুলো কমে যায়। সেটা নাটকীয়ভাবেই হ্রাস পায়। কোন কোন ক্ষেত্রে হাঁটাহাঁটি করা এক ধরনের ভ্যাকসিন বা টীকার মতো কাজ করে। সাহায্য করে বিষণ্ণতা কমাতে।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রভাব পড়ে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। কমে যায় স্মৃতি শক্তি। তাই স্মৃতি শক্তি ভাল রাখতে নিয়মিত হাঁটার অভ্যেস করুন। নিজেকে সুস্থ রাখুন।
সঠিক উপকারিতা পেতে হাঁটার সময় যেসব নিয়ম মেনে চলবেন
হাঁটার মাঝে মাঝে শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক রাখতে লম্বা ও গভীর দম নিন ও ছাড়ুন। নাক দিয়ে দম নিয়ে, মুখ দিয়ে ধীরে ছাড়ুন। এতে আপনার শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও আরো হাঁটার শক্তি পাবে।
হাঁটার ১০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। সারাদিন এক ঘন্টা পর পর এক গ্লাস করে পানি খেলে হাঁটার সময় পানিশুন্যতা হবে না। হাঁটার সময় প্রতি ২০ মিনিটে এক কাপ করে পানি খাবেন। হাঁটার শেষে এক থেকে দুই গ্লাস পানি খাবেন।
অনেক অসুস্থ মানুষও এই হাঁটাকে ব্যায়াম হিসেবে নিতে পারেন। শুরু হোক ধীরে ধীরে। প্রথম দিন ১০-১৫ মিনিট। এরপর গতি বাড়ান, সময় বাড়ান। ২০-৩০ মিনিট। এরপর শীতল হন ১০ মিনিট। পাঁচ-১০ মিনিট ধীরে হেঁটে শীতল হন। ব্যয়বহুল জিম থেকে নিখরচায় হাঁটা অনেক ভালো।
জার্নাল অব হ্যাপিনেস স্টাডিজের একটি গবেষণায় তারা একদল স্বেচ্ছাসেবককে হাঁটার সময় তাদের সামনে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তিনটি কৌশল মেনে চলতে বলেন। প্রথমটি হচ্ছে— তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভালোবাসা-দয়া রাখা; দ্বিতীয়টি হচ্ছে— পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং তৃতীয়টি হচ্ছে— কৌশলে বলা হয় অন্যান্য লোকদের বাহ্যিক উপস্থিতি এবং চেহারা বিবেচনা করতে। গবেষণাটিতে দেখা যায়, এ কৌশলগুলো অবলম্বন করার ফলে তারা কম উদ্বেগ, আরও সুখী, আরও সংযুক্ত, আরও যত্নশীল এবং আরও সহানুভূতি অনুভব করে।
-এএ