আওয়ার ইসলমা ডেস্ক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের দায় সরকার এড়াতে পারে না। এমন বক্তব্যে প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতকেও অস্বতিত্বে ফেলেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য।
শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন জিএম কাদের।
এ সময় জিএম কাদের আরো বলেন, হিন্দু শাস্ত্রমতে শিষ্টের লালন আর দুষ্টের দমনের জন্যই শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব। কিন্তু এখন দেশে চলছে, দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন।
তিনি বলেন, এখন সৎ মানুষ হলে চাকরি মেলে না, আদর্শবান হলে ব্যবসা করতে পারছেন না। বেঁচে থাকার তাগিদেই এখন দেশ ছেড়ে অন্যদেশে যাচ্ছেন সবাই। দেশে দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে। দুর্নীতির সুনামীতে ভেসে যাচ্ছে আদর্শ আর ন্যায়পরায়ণতা।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠনে সরকার উদ্যোগ নিতে পারে। জাতীয় পাটি আইনের খসড়া পেলে বিবেচনা করে সংসদে তুলতে পারবে। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার পাশাপাশি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সকল ধর্মের সমান অধিকার নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার কারণে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গালাগাল দেয়। কিন্তু পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখে বর্তমান সরকার সংবিধানে এটি অপরিবর্তনযোগ্য করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিবছর দেশ থেকে লাখো-কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। কেউ দুর্নীতির সমালোচনা করলে সরকার তাকে ষড়যন্ত্রকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে। সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে, সমালোচনা শুনতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা উঠলে সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে হাস্যকর হিসেবে উড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে সারাবিশ্বের কাছে আমরা মিথ্যেবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মানুষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। আবার প্রতিনিধি পছন্দ না হলে ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করার অধিকার চায়। প্রজাতন্ত্র মানে দেশের মালিকানা সাধারণ মানুষের। দেশের মালিকানা সাধারণ মানুষের না থাকলে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে কখনোই দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব হবে না।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এবছর সরকারকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা ঋণের সুদ দিতে হচ্ছে। ২/১ বছরে আসলসহ সুদের টাকা পরিশোধ করতে হবে। তখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়তে পারে দেশ। বিশেষজ্ঞদের আশংকা, তখন শ্রীলংকার মতো দেউলিয়া হতে পারে দেশ।
তিনি বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ১২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স আর মুনাফার ৪২ হাজার কোটি টাকা সমন্বয় করলেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হতো না। দেশের মানুষের কষ্ট হতো না, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সকল পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প তৈরি করছে, কিন্তু মানুষ বাঁচাতে কোন উদ্যোগ নেই। মানুষ যদি খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে না পারে তাহলে মেগা প্রকল্পের সুবিধা কে ভোগ করবে? তিনি হতদরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পার্টি সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। ভোটের রাজনীতির জন্য কিছু রাজনৈতিক দল উস্কানী দেয়, আবার ধর্মীয় গোড়ামী আর ব্যাক্তি স্বার্থেও কখনো কখনো বিচ্ছিন্নভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিরাপদে ছিল। জাতীয় পার্টি সব সময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে। এদেশ সবার, আমরা সবাই ভাই ও বন্ধুর মতো চলছি। কোন অপশক্তি এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবে না।
কেএল/