আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সকল চা বাগানে কাজ বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। নিজ নিজ বাগান এলাকার শহর ও বাজারে অবস্থান নিয়ে কঠোর আন্দোলন করতেও শ্রমিক ও নেতৃবৃন্দদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার (১২ আগস্ট) সকালে ৪র্থ দিনের মতো দুই ঘণ্টা চা শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করে মজুরি বৃদ্ধির কোন সিদ্ধান্ত না পেয়ে এ কর্মসূচি গ্রহণ করে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি।
অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির অন্তর্গত ২৩টি চা-বাগানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন চা শ্রমিকরা।
জানা গেছে, চা শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের করা চুক্তি অনুযায়ী, চা শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ হয়। প্রতি দুই বছর পর পর এ চুক্তি সম্পাদনের কথা রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন হয়। চুক্তিতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি। সম্প্রতি, চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশীয় চা-সংসদ মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়।
তবে নেতারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়ে ১ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে দাবি মেনে নিতে ৭ দিনের সময়সূচি বেঁধে দেওয়া হলেও এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্ত দেশের সকল চা বাগানে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি চলছিল।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দইল ভ্যালি কমিটির সভাপতি ধনা বাউরী বলেন, তাদের আওতাধীন কমলগঞ্জের ২২টি ও কুলাউড়ার ১টি চা বাগানে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল চা বাগানের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করবে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেড়েছে অন্যান্য খরচও। তবে চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী বলেন, মজুরি বোর্ডের কাছে তাদের প্রস্তাব হলো দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করতে হবে। শুক্রবার পর্যন্ত দ্বিপাক্ষীক শ্রমচুক্তি বিলম্বিত হবার প্রতিবাদে ২ ঘণ্টার কর্মবিরতির পরও কোন সমাধান আসেনি। তাই শনিবার থেকে দেশের সকল চা বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবি না মানা পর্যন্ত সারাদেশে চা শ্রমিকরা কঠোর আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম জানান, আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী, মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অনেক বাগান লসে আছে। চায়ের বাজার ভালো নয়। এখন জ্বালানি তেলের দামও বেড়ে গেছে। শ্রমিকদের রেশনের আটা দেওয়া হয়। প্রতি কেজি গমের দাম ১৪ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা হয়ে গেছে। এসবও তো ভাবতে হবে।
-এসআর