আবদুল্লাহ তামিম: সরল নিষ্পাপ কুটিলতাহীন কচি ঘাসের মত এক কোমল আত্মা ও হৃদয় নিয়ে জন্ম নেয় একটি শিশু। তার মোহনীয় কোমল হাসিতে বাবা মার কষ্ট ক্লেষ দূর হয়। আত্মায় আসে প্রশান্তি।
তবে এ শিশুদের ধ্বংস করা হয় একটু বড় হলেই। অনেক সময় বাবা মা’ই হাতে ধরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যান। আমরা বুঝতেই পারি না তারা আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আর স্মার্ট ফোনের আসক্তিতে বা ভার্চুয়াল জগতে মত্ত হয়ে যাচ্ছে।
প্রতিটা বাবা মা ও পরিবারই এখন এ শঙ্কায় দিন পার করেন। আশঙ্কার মধ্যে বেড়ে উঠে প্রতিটা শিশু। এ থেকে উত্তরণের কী উপায়?
শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ছোট শিশুদের কলব কাঁচা দেয়ালের মত। কাঁচা দেয়াল যেমন কিছুর আঁচর লাগলেই দাগ পড়ে যায় তেমনই বাচ্চাদের কলব।
তাই তাদের এ কাঁচা কলবে খুব সাবধানে জিনিসের আঁচর দিতে হবে। আজ তাদের জীবন অন্ধকার করে দিচ্ছে এ মোবাইল ফোন।
মোবাইল ফোনের উপকারের দিক থেকে ক্ষতির দিকটা মারাত্মক। ছোটদের দিয়ে এ ক্ষতিটা শুরু হয়। বাবা মা’ই এ ধংসাত্মক জীনিসটা শিশুর হাতে তুলে দেয়।
আর তারা জীবনভর ক্ষতির মধ্যে হাবুঢুবু খেতে থাকে। তাদেরকে এর থেকে বাঁচানো আর সম্ভব হয় না। তারা নিজেরাও এর থেকে বাঁচতে পারে না।
আজকাল আমরা বাচ্চাকে খাবার খাওয়াতেও মোবাইল দেখার সুযোগ দেই। এতে দুইটা ক্ষতি এক তো আল্লাহ এতে নারাজ হন। দ্বিতীয়ত এ খাবারে কোনো বরকত থাকে না। ফেরেশতা থাকে না।
এতে করে বাচ্চাও মোবাইল ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। পরে এ বাবা মা’ই অনেক চেষ্টা করেও তাদের মোবাইলে আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না। তখন আমরাই মাথা কুটবো কেনো মোবাইল দিলাম তাদের হাতে।
আর বাচ্চারাও আল্লাহর কাছে সহজেই বলবে আমরা তো কিছুই বুঝতাম না। আমাদের বাবা মা আমাদের নষ্ট করেছে। এ ধ্বংসাত্মক মোবাইল ছোটবেলা থেকে আমাদের দিয়েছে।
মোট কথা একটা পরিবার নষ্ট করার জন্য এ মোবাইলই যথেষ্ট। আমরা আজ আামাদের শিশুদের নেচারাল জিনিস না দিয়ে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দিয়ে তাদের মন মানসিকতা নষ্ট করে দিচ্ছি।
কৃত্রিম জিনিস দিয়ে তাদের মন হৃদয় আত্মাকেও কৃত্রিম করে দিচ্ছি। আল্লাহর কুদরত না থাকলে এর অসারতা থেকে বাঁচা খুবই মুশকিল।
হাঁ যখন তাদের বুঝার বয়স হবে তখন প্রয়োজনে কিছু সময় মোবাইল দেয়া যায়। কিন্তু তার কোমলতার সময়টা আমরা যেন নষ্ট করে না দেই।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের মোবাইল ফোনসহ নানান প্রযুক্তি যেগুলোর মাধ্যমে শিশুদের মানসিকতা নষ্ট হচ্ছে সেগুলো থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে আমাদের করণীয় কী এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মাদরাসাতুল মাদীনাহ-বগুড়ার মুহতামিম হাফেজ মুফতি মনোয়ার হোসাইন বলেন, বাচ্চা তো বাচ্চাই। সে কোনো জিনিস জেনে শুনে দুনিয়াতে আসে না। আমরাই তাদের জানাই। আমরা তাদের বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করতে শেখাই।
বাচ্চারা বিরক্ত করবে এটাই তাদের স্বভাব। বাচ্চারা বিরক্ত না করলে কে বিরক্ত করেবে। আমরা বাচ্চাদের বিরক্তি থেকে বাঁচতে তাদের হাতে ফোন তুলে দেই।
কান্না করলে ফোন দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। নিজেরা সময় দিতে পারি না বলে তাদের মোবাইল দিয়ে রাখি। অনেক সময় স্বামী স্ত্রী একান্তে সময় কাটাতেও আমরা তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেই।
এতে যে কতটা ক্ষতি আমরা করছি এটা আস্তে আস্তে আমাদের বুঝে আসবে। তাই শিশুরা ক্রমেই মোবাইল ফোনে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। আমরা টেরও পাই না সে কখন মোবাইলের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে।
আর তার এ মোবাইল আসক্তি তাকে ও তার চিন্তাকে চুষে চুষে শেষ করে দেয়। তাদের চিন্তাটা একটা মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে যায়। ঘুমাতে গেলেও ফোন, খেতে গেলেও ফোন।
হাতে ধরে আমাদের সন্তানদের নষ্ট করি আমরা। কেনো? কোন দরকারে আমাদের এ হৃদয় থেকে আপন মন থেকেও প্রিয় সন্তানদের আমরা নষ্ট করে দিচ্ছি।
কী এমন ক্ষতি হবে আপনার মোবাইল ব্যবহার না করলে। স্মার্ট ফোন ব্যবহার না করলে। হ্যাঁ আমাদের প্রয়োজন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাকে ঘুম পাড়িয়ে তার আড়ালে আমোদের কাজগুলো শেষ করতে পারি। আর সবসময়ের জন্য আমরা ছোট ফোন চালাতে পারি।
আমাদের একটু কষ্ট আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে। আজকে এ স্মার্ট ফোন পুরো জাতির জন্য ক্ষতির হয়ে যাচ্ছে। ক্রিয়েটিভিটি হারিয়ে যাচ্ছে।
বাঁচার উপায় আজ একটাই- স্মার্ট ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। বিনোদনের জন্য ব্যবহার না করা।
বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, তাদের কে সময় দেয়া। বাসায় তাদের কাছে কাছে থাকা।তাদের সঙ্গে খেলা করা। তাদের আত্মীয় স্বজনের বাসায় নিয়ে যাওয়া। ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। এগুলো থেকে মোবাইল আসক্তি দূর হতে পারে সহজেই।
আমাদের বাচ্চা সন্তান আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন। আল্লাহ আমদের এ ধ্বংসাত্বক মরণব্যাধী আসক্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
কেএল