।। আলেমা রাবেতা হক ।।
ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর চাহিদা এখন ডিভাইস পুরা করতে পারে। শপিং, ব্যাংকিং, নার্সিং সব সুবিধাই আজ অনলাইন দেয়। তাই ঘরে বসে খুব সহজেই পেয়ে যাই সব ডেলিভারি। বাইরে বের হয়ে সময় নষ্ট করার দরকার কী!
আমার পাশে অনেকেই বসে আছে। কিন্তু কথা বলার কেউ নেই। কারণ সবার হাতে ডিভাইস। কিছু বলতে চাইলে যেন ডিস্টার্ভ হচ্ছে। কারো খোঁজ নেওয়ার তো সময়ই নেই। টাইম লস হবে। খামাখা কষ্ট পোহাতে হবে। এভাবে সবকিছুতেই আমরা অনলাইন নির্ভর হয়ে গেলে একসময় ‘হিউম্যান টাচ’ বা মানবসান্নিধ্য উধাও হয়ে যাবে। আর অসম্ভব নয়- পাশের ঘরে মানুষ মরে লাশ হয়ে থাকবে-দুর্গন্ধ না আসা পর্যন্ত কেউ কারো খবরও জানবে না।
আগে মানুষ ছিল মানুষের। সুখ-দুঃখের অনুভূতি সহসাই বলা যেত। চোখ দেখে মনের কথা বুঝতে পারত। ভালবাসা আর হৃদ্যতায় মন জয় করে ফেলতো। আজ ঘরে ঘরে ঠিকই ডিভাইস জড়ো হচ্ছে, আনন্দ-বেদনা শেয়ার করা যাচ্ছে না। হ্রাস পাচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্ক, ওঠে যাচ্ছে সৌহার্দ্য-সম্পৃতি, লোপ হচ্ছে মানববন্ধন।
সো অনলাইন সবকিছু নয়। তা হয়তো সার্ভিস দিতে পারে, মানবিক বন্ধন তৈরি করতে পারে না। ডিভাইস হয়তো পণ্য দিতে পারে, পূণ্য দিতে পারে না। অথচ মানুষের সাথে দেখা করা, হাসিমুখে কথা বলা, কোশল বিনিময় করা, তা-তো শুধু টাইম পাস নয়, পুণ্য অবশ্যই আছে। মানুষ যদি মানুষের পাশেই না যায়, অন্যের জন্য না হয়, তবে ডিভাইস আর পণ্য দিয়ে কী হবে!
তাহলে কি টেকনোলজি খারাপ? না, খারাপ নয়, তা নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক কাজকে সহজ করেছে। তবে টেকনোলজির নেশা অবশ্যই খারাপ। খেয়াল রাখতে হবে, ডিভাইস যেন আমাদের মানবিক সত্তার মৃত্যু না ঘটায়। আমরা যেন টেকনোলজির দাসে পরিণত না হই। টেকনোলজি হল কাজের জন্য, সম্পর্ক কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। অথচ তা সম্পর্কে এতটা ভয়ঙ্কর ফাটল তৈরি করেছে যে, ঘুম থেকে উঠে বাবা আপন সন্তানের মুখ দেখার আগে স্ক্রিন চ্যাক করে। বিজ্ঞানের রিসার্চে এটাকে ‘মানসিক রোগ’ বলা হয়েছে।
তাই আসুন, পরিবার-মানুষকে সময় দেই। অন্যের খোঁজ খবর নেই, সম্পর্ক বৃদ্ধি করি। প্রয়োজন ছাড়া ডিভাইস থেকে দূরে থাকি।
লেখক- প্রধান শিক্ষিকা, মানারাতুল উলুম মহিলা মাদরাসা, সিলেট।
-কেএল