সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের নতুন নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখ্যান জাতীয় নাগরিক কমিটির

হিজরী বর্ষের উত্থান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এনায়েতুল্লাহ ফাহাদ: বিদায়ের পথে ১৪৪৩ হিজরী বর্ষ। আসছে ১৪৪৪ হিজরী নববর্ষ। দিনের পরে দিন হারিয়ে বিদায় নিতে চলেছে হিজরী পঞ্জিকার একটি বছর। দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, মাস পেরিয়ে পূর্ণতা পাবে একটি বছর। জীবন থেকে হারিয়ে যাবে একটি বছর। নির্ধারিত হায়াত থেকে ফুরিয়ে যাবে একটি বছর। ঠিক এভাবেই আজ থেকে কিছুদিন পর বছর নিক্ষিপ্ত হবে যুগের গর্ভে। যুগ নিপতিত হবে শতাব্দীর মহা গর্তে। এভাবেই সময়ের স্রোত ধারা প্রবাহমান।

হিজরী নববর্ষ মুসলিম জাতির ঐতিহ্য। ইসলামী পঞ্জিকার নক্ষত্র। মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশেষ স্মারক। হিজরি বর্ষ এমন একটি গৌরবময় বর্ষ, যার সাথে আলিঙ্গন করে আছে মুসলিম উম্মাহর তাহজিব-তামাদ্দুন ও ঐতিহ্যের ভিত্তি। মুসলমানদের রোজা, হজ, ঈদ, শবেবরাত, শবেকদর, শবে মেরাজসহ ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা ইবাদত বন্দেগিতে মনোযোগী হলেও হিজরী বর্ষের তারিখ গণনার ক্ষেত্রে উদাসীন। হিজরী বর্ষের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞাত।হিজরী নববর্ষ একের পর এক আমাদের দুয়ারে হাজির হচ্ছে কিন্তু আমরা তা জানি না। আমরা বলতে পারি না কোন দিন আরবী নববর্ষ। অথচ মুসলিম হিসেবে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী এটা আমাদের জানা ফরযে কেফায়া। তাই আসুন কর্তব্য পালনার্থে জেনে নিই হিজরী নববর্ষের ঐতিহ্যময় ইতিহাস।

হিজরী বর্ষ সূচনার ইতিহাসের সাথে মিশে আছে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর পুণ্যময় জন্মভূমি মক্কানগরী ত্যাগ করে মদিনা শরিফ গমনের ঐতিহাসিক ঘটনা। মহানবী (সা.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর মোতাবেক ২৭ সফর, মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনার উদ্দেশে হিজরত করেন। অতঃপর ২৭ সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ১২ রবিউল আওয়াল মদিনা মুনাওয়ারায় পৌঁছেন। আর এ হিজরতেরই স্মৃতিবহন করে আসছে হিজরি বর্ষ। হিজরতকে কেন্দ্র করেই আরবীতে দিন গণনার প্রক্রিয়াকে "হিজরী বর্ষ" নামে নামকরণ করা হয়েছে।

হিজরী বর্ষের সূচনা। চলছে খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.) এর শাসনামল। ওদিকে প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) ইরাক এবং কুফার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একদিন গভর্নর হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) খলিফা উমরের (রা.) কে প্রাপক করে পত্র লিখেন যে, "হে খলিফা! আপনার পক্ষ থেকে পরামর্শ কিংবা নির্দেশ সংবলিত যেসব চিঠি আমাদের কাছে পৌঁছে তাতে দিন, মাস,সন ইত্যাদি না লেখা থাকায় কোন চিঠি কোন দিনের তা অনুসন্ধান করা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য। এতে করে আমাদের নির্দেশ কার্যকর করতে বিড়াম্বনা দেখা দেয়। অনেক সময় আমরা বিব্রত বোধ করি চিঠির বা ফরমানের ধারাবাহিকতা না থাকার দরুন।"
(সূত্র : প্রাগুক্ত ১/৮)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবু মুসা আশআরীর চিঠি পেয়ে হজরত উমর (রা.) হিজরী সন প্রবর্তন এর সিদ্ধান্ত নিয়ে পরামর্শ সভার আহবান করেন যে, আরবী বর্ষ প্রবর্তন করতে হবে। আর সে তারিখ অনুযায়ী প্রশাসনিক ও ইসলামিক কাজ অনুষ্ঠিত হবে।" উক্ত পরামর্শ সভায় উপস্থিত ছিলেন হজরত উসমান (রা.), হজরত আলী (রা.) ও সাদ বিন আবি ওয়াক্কাছ সহ বিশিষ্ট সাহাবিগণ প্রমুখ। উপস্থিত সকলেই কবে কোন দিন থেকে আরবি তারিখ গণনা শুরু করা যায় এই বিষয়ের উপর অভিমত রাখেন। প্রথমে সাহাবী সাদ বিন আবি ওয়াক্কাছ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। অন্য সাহাবী তালহা (রা.) নবুয়তের বছর থেকে সাল গণনার অভিমত ব্যক্ত করেন। হযরত আলী (রা.) হিজরতের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে বর্ষ গণনার প্রস্তাব দেন। এভাবে বিভিন্ন মতামত আলোচিত হওয়ার পর হজরত উমর (রা.) বললেন, হুজুর (সা.) এর জন্মের মাস থেকে হিজরি সনের গণনা শুরু করা যাবে না। কারণ—খ্রিস্টান সম্প্রদায় হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের মাস থেকেই খ্রিস্টাব্দের গণনা শুরু করেছিল। তাই রাসুলের জন্মের মাস থেকে সূচনা করা হলে বাহ্যত খ্রিস্টানদের অনুসরণ ও সাদৃশ্যতা হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য পরিত্যাজ্য। অপরদিকে হুজুর (সা.)-এর ওফাত দিবসের মাস থেকেও গণনা শুরু করাও যাবে না, কারণ এতে হুজুর (সা.) এর মৃত্যুর ব্যথা আমাদের মাঝে বারবার উত্থিত হবে। পাশাপাশি অজ্ঞ যুগের মৃত্যুর শোক পালনের ইসলামবিরোধী একটি কুপ্রথারই পুনরুজ্জীবন ঘটবে। তবে রাসুলের হিজরত থেকে গণনা শুরু করে যেতে পারে, কারণ রাসূল (সা.) এর মদীনায় হিজরত করার মাধ্যমে ইসলাম প্রসার লাভ করে, মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে পরিণত হয় এবং ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়াও আল্লাহ তা’য়ালা রাসূল (সা.) এর হিজরতের কথা গুরুত্বের সাথে কুরআনে উল্লেখ করেছেন। সূত্র:(উমদাতুল ক্বারি : ১৭/৬৬)

অতঃপর সকলের মতামতের উপর উপযুক্ত বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করা হলো। হজরত ওমর (রা.)-এর দিকনির্দেশনামূলক বিশ্লেষণে সকলেই সহমত পোষণ করলেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা আলী রা. এর অভিমত নকল করে হযরত উমর ফারুক (রা.) সর্বসম্মতিক্রমে হিজরতের বছর থেকেই ইসলামি দিনপঞ্জী গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ। এটাই ছিল আরবী হিজরী বর্ষের সূচনাকালের ঐতিহ্যময় ঘটনা। নতুন হিজরী সন হোক আমাদের জীবনের সাফল্যের একটি বছর। প্রত্যাশার বছরে জীবনের ক্যানভাসে আঁকা হোক নতুন হিসাব-কিতাব।

লেখক: কবি, গীতিকার ও প্রাবন্ধিক।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ