আবদুর রহমান: নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া দক্ষিণ মির্জানগর (দক্ষিন মির্জানগর হাফিজিয়া মাদ্রাসা)-এর মুহতামিম উস্তাদুল হুফ্ফাজ হজরত মাওলানা হাফেজ হাফিজুল্লাহ হাফেজ্জী (বড় হজুর) আর নেই।
১৯১৯ঈ. সালে প্রতিষ্ঠিত এই দ্বীনি এদারার খেদমতে হাফিজুল্লাহ হুজুর নিজের জীবনের অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় ব্যয় করেছেন। সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে দ্বীন-ইসলামের প্রতিষ্ঠা-প্রচার ও দ্বীনের মর্যাদাকে বিজয়ী-সমুন্নত রাখতে তিনি নিজের জীবনের প্রতিটা মূহুর্তকে উৎসর্গিত করে দিয়েছিলেন।
নরসিংদী, ভৈরব ও বি বাড়িয়া অঞ্চলে শিরক-বিদআতের ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করার জন্যে তিনি ওয়াজ-মাহফিলে অংশ নিতেন। জীবনের বিশাল অংশ তিনি নরসিংদী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তারাবীহের ইমাম ছিলেন। দ্বীনি গায়রতের কারণে তিনি রেডিওতে তেলাওয়াতের পূর্ব মুহূর্তে উঠে আসেন, যখন দেখতে পেলেন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অপেক্ষমান শিল্পীদের; যারা তেলাওয়াতের পরে গান-বাজনা শুরুর অপেক্ষায় ছিলেন।
সামগ্রিক সুবিধা সম্বলিত, বিদেশে মোটা বেতনের ইমামতির অফার পেয়েও রয়ে যান অজপাড়া গাঁয়ে। তিলে তিলে রক্ত-ঘাম একাকার করে এককালের ছোট টিনের ঘরের হাফিজিয়া মাদ্রাসাকে বর্তমানে চতুর্পাশে সুদৃশ্য দালান বেষ্টিত দাওরা হাদীস সম্বলিত জামিয়ায় উন্নীত করেন।
তিনি ছিলেন হাজারো হাফেজ আলেমের উস্তাদ। কোথায়ও মাদ্রাসার তাহসীলে গেলে, সাথে হাফেজ ছাত্র রেখে তেলাওয়াত শুনতেন। মাদ্রাসার কৃষিকর্মের সময়ও ছাত্রদের পড়া শুনতে থাকতেন। পড়া-শোনার ব্যপারে এতোটা তৎপর ছিলেন। তাঁর ছাত্রগণ মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানে কুরআনি খেদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১৭ঈ. সালে বড় হুজুরের খেদমতে কুরআনের ৫০সালা পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সম্মেলনে তাঁর হাতে গড়া হাজার হাজার হাফেজ পাগরী ও সনদ গ্রহন করেন।
আজ তিনি নশ্বর এই পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হয়ে গেলেন। বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবী হারালো এক উস্তাদুল হুফ্ফাজকে। আল্লাহ তা'আলা হুজুরের সমস্ত ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের আ'লা মাকাম নসীব করুন, আমীন!
-কেএল