সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মার ইন্তেকালে পরিবারের পাশে আল্লামা মুফতি তাকি উসমানি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম।। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী পাকিস্তানি নারী বিজ্ঞানী ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকির মা ইসমত সিদ্দিকী ইন্তেকালে তার পরিবারকে শান্ত্বনা দিতে তাদের বাড়িতে গিয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, আল্লামা তাকি উসমানি।

গতকাল শনিবার তার পরিবারের বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডেইলি জং। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইসমত সিদ্দিকি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর ইন্তেকাল করেছেন। আল্লামা তাকি উসমানি তার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎকালে বলেন, তিন চার দিন আগে আমার কাছে একটা ফোন আসে। তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন। ভালো জিজ্ঞেস করে ফোন রেখে দিয়েছেন।

তার ছোট মেয়ে বলেন, তিনি আল্লামা রফি উসামনিকেও ফোন করেছিলেন। আরো বড় বড় আলেমদের সাথে কথা বলেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি বলেছিলেন হুজুর সা. এর দেখতে কত সুন্দর। সম্ভবত তিনি রাসুল সা. কে স্বপ্ন দেখেছেন।

ড. আফিয়া সিদ্দিকি একজন পাকিস্তানি নারী বিজ্ঞানী। তিনি আমেরিকার জেলে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে তার ওপর।

২০০৩ সালের মার্চ মাসে আল-কায়েদার প্রধান এবং নাইন/এলিভেন হামলার কথিত মাস্টারমাইন্ড খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতারের পর ড. আফিয়া সিদ্দিকি করাচি থেকে তার তিন সন্তানসহ নিখোঁজ হন।

এরপর ২০০৮ সালে মার্কিন সরকার দাবি করেছিল যে আফিয়াকে আফগানিস্তানের গজনি শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেখানে তিনি তালেবানের সাথে মিলে হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে আফিয়া সিদ্দিকির ওপর একটি মামলা করা হয়। সেখানে তার ওপর অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি এক মার্কিন সেনার কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে গুলি করেন, কিন্তু ওই সেনা বেঁচে যান।

মার্কিন আদালতে ১৪ দিনের বিচার চলাকালীন আফিয়া সিদ্দিকি বারবার বলেছিলেন যে আমেরিকান সৈন্যরা তার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।

আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটানোর অভিযোগে তাকে আদালত থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে তাকে ৮৬ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার এই কারাদণ্ড ২০৮৩ সালের ৩০ আগস্ট শেষ হবে। সূত্র: ডেইলি জং ও আলকুদস

ড. আফিয়া সিদ্দিকী যিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিখ্যাত একজন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী এবং একজন আলোচিত মহিলা। তিনি করাচীর সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে ১৯৭২ সালের ২ মার্চ জন্ম গ্রহণ করেন।

পিএইচডি ডিগ্রি ধারী এই মহিলাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০০৩ সালে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের করাচির রাস্তা থেকে তার তিন সন্তানসহ গ্রেফতার করে।

পরে প্রচলিত আইনের আওতায় না এনে পাকিস্তানের কারাগারে গ্রেফতার না রেখেই তাকে আফগানিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে তাকে ৫ বছর বন্দি করে রাখা হয়। মার্কিন আদালত তাকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়। বন্দি অবস্থায় তার ওপর ব্যাপক অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ আছে।

সম্প্রতি জানুয়ারি ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের একটি ইহুদি সিনাগগের ভেতর ৪ জন ইহুদিকে জিম্মি করে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ফয়সাল আকরাম। তার দাবি ছিলো কারাগারে বন্দী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তি।

জন্ম ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
জন্ম সূত্রে এই উচ্চ শিক্ষিত মহিলা পাকিস্তানের নাগরিক। শিক্ষা জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রী ধারী (পিএইচডি)। স্বনামধন্য এই স্নায়ুবিজ্ঞানী শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে “নিউরোলজি” বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়াও শিক্ষা লাভের পর তিনি ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। সহকর্মীরা তাকে অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী হিসেবে পরিচয় দেন।

গ্রেফতার ও অপহরণ
পাকিস্তানি এই নাগরিককে করাচির রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পাকিস্তানে কোনো বিচার কার্য না করেই সরাসরি আফগানিস্তানে নিয়ে গেলে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এবং তাকে অপহরনের অভিযোগ ওঠে। তৎকালীন সরকারের এতে হাত রয়েছে বলে মনেকরা হয়।

গ্রেফতারের অভিযোগ ও বন্দী জীবন
আল-কায়দার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয় তিন সন্তান আহমদ, সুলাইমান ও মারিয়মকে সহ। আফগানিস্তানে বন্দি রাখা কালে তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

তাকে মানসিক, যৌন ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হত এবং তাকে দিনের মধ্য কয়েকবার করে ধর্ষন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা অভিযোগ করেছে “নির্যাতনের সময়ে আফিয়ার আত্ন-চিৎকার অন্য বন্দির পক্ষে সহ্য করাও কঠিন ছিলো। ওই নারীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অন্য বন্দীরা অনশন পর্যন্ত করেছিলো।

২০০৮ সালে তাকে স্থানান্তর করা হয় নিউইয়র্কের এক গোপন কারাগারে। বর্তমানে তিনি পুরুষদের সাথে ওই কারাগারে বন্দি। কারাবন্দি নম্বর ৬৫০। চলমান নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেন। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান দাবি করে বলেন তার দু সন্তান ইতোমধ্যেই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে মারা গেছে।

তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ড. আফিয়া সিদ্দিকাকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।

৩৮ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানীকে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়, আদালতে মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে। অভিযোগ আছে যে তাকে ২০০৮ সালে আফগানিস্তানে অজানা রাসায়নিক পদার্থ ও হামলার পরিকল্পনার নোট সহ গ্রেফতার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ৭টা মামলা দায়ের করা হয়।

এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন যে গ্রেফতারের সময় তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মানচিত্রর পাওয়া যায়।

ড. আফিয়াকে ৮৬ বছর কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। অনেকেই মনে করেন তিন সন্তানের জননী হার্ভার্ড পিএইচডিধারী আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্তাসবিরোধী যুদ্ধের আর একটি নির্দোষ শিকার। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করে,বিশ্ব জুড়ে সব জায়গায়তেই অভিযুক্তরা বেনেফিট অব ডাউট বা সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হয়। ফলে সকল সুবিধা পায়। কিন্তু ড. আফিয়া তা পাননি বরং নির্যাতনের শিকার হন।

তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি আলোচিত হয় কারাগার থেকে তার বহুল আলোচিত চিঠিটি লেখার পর। চিঠিটিতে আফিয়া দাবি করেন তার ওপর শারীরিক, পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি একের পর এক ধর্ষন করা হয়। তার একটি কিডনিও বের করে ফেলা হয়েছিলো ফলে তিনি হাঁটতে পারতেন না। তিনি আরো দাবি করেন যে তাকে গুলি করা হয় এবং তার বুকে গুলি আঘাত ছিলো। সূত্র: উইকিপিডিয়া

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ