সাঈয়েদা হাবিবা: ফাতেমা আক্তার (ছদ্দ নাম) আশকোনা হাজি ক্যাম্পে এসেছেন দাদা-দাদিকে বিদায় জানাতে। তিনি একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাসটার্সে পড়ছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় মনমরা হয়ে বসে আছেন। শুক্রবারের নামাজ তিনি পড়তে পারছেন না। শুধু ফাতেমা নয় তার মত অনেকেই নামাজের সময় আফসোস করছেন নামাজ পড়তে না পারার কারণে। সবাই হজযাত্রীদের বিদায় জানাতেই এসেছেন।
ফাতেমা আক্তার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা মার্কেটসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু নারীদের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। তাই বেশিরভাগ সময়ই ইচ্ছা থাকলেও বাইরে থাকার কারণে নামাজ পড়া হয় না।
মাসুমা বেগম। তিনি গৃহিনী। হাজিক্যাম্পে এসেছেন শশুড়-শাশুড়িকে বিদায় জানাতে। জুমার নামাজের আজানের পর নামাজের স্থান খোঁজ করছেন। কিন্তু নারীদের কোনো নামাজের স্থান তিনি খুঁজে পাননি। তিনি বলেন, কিছু দিন আগে আমি তুরস্ক ও মালয়েশিয়া থেকে ঘুরে এসেছি। এই রাষ্ট্রগুলোর একটি বিষয় সত্যিই অনেক সুন্দর। অনেক মসদিজেই পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও নামাজের ব্যবস্থা আছে। নারীদের নামাজের ব্যবস্থাও অনেক সুন্দর। পুরুষরা একদিকের গেইট দিয়ে প্রবেশ করে আর নারীরা অন্য দিকের গেইট দিয়ে প্রবেশ করে। এই সব দেশের যে সব নারীরা প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বের হন তাদের নামাজ নিয়ে কোনো প্রকার ভোগান্তিতে পরতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে এমনটা কল্পনাও করা যায় না।
হাজিক্যাম্পর ভিতরে নারীদের নামাজের স্থান থাকলেও করোনার কারণে এবছর শুধু হজযাত্রীরা ছাড়া কেউই ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না। এ বিষয়ে নারী সহযোগী অধ্যাপক সাফওয়ানা জেরিন বলেন, আমি তুরস্কে পিএইচডি করেছি। তখন আমি কাজে বাসার বাইরে গেলে নামাজ নিয়ে কোনো প্রকার চিন্তা করতে হতো না। বাংলাদেশে আসার পর নামাজের বিষয়টি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। আমাকে প্রয়োজনে প্রতিদিনই বাসার বাইরে বের হতে হয়। একটু স্বাচ্ছন্দে অজু করে নামাজ আদায় করবো এমন স্থান নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে দিন দিন মাদরাসা বাড়ছে। বাড়ছে মহিলা মাদরাসার সংখ্যাও। তাদেরও তো বিভিন্ন কাজে বাড়ির বের হতে হয়। কিন্তু মসজিদে নারীদের ওজু ও নমাজের স্থান রাখার কথা কেউই বলেন না।
তিনি আরো বলেন, মসজিদে নারীদের অজু ও নামাজের স্থান রাখার জন্য নারীদেরই আওয়াজ তুলতে হবে। তবে এই ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবো। তার তৈরি কয়েকটি মডেল মসজিদে আমি নামাজ পড়েছি। সেখানে নারীদের জন্য আলাদা করে নামাজের স্থান করা হয়েছে।
মসজিদে নারীদের নামাজের স্থান থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন মাদানি কুতুবখানার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আমিমুল ইহসান। তিনি বলেন, আমি নারীদের প্রত্যেক ওয়াক্তে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার পক্ষে না। তবে প্রতিটি মসজিদে নারীদের আলাদা নামাজের স্থান থাকার পক্ষে। বর্তমানে প্রয়োজনে অনেক নারীই ঘরের বাইরে যান। মসজিদে নামাজের স্থান না থাকায় অনেক নারীই নামাজ সময় মতো নামাজ আদায় করতে পারেন না।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি মসজিদে নারীদের আলাদা ট্রেনিং সেন্টারও থাকতে পারে। প্রতিমাসে এক দিন বা দুই দিন সেখানে নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এতে করে নারীদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে আরো সতর্কতা বাড়বে।
অনেকই বলেন, প্রয়োজনে স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে গেলে আজান হলে মসজিদে নামাজ আদায় করতে চলে যাই। এই সময় স্ত্রীকে মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে সময় কাটাতে হয়। এটা একজন নারীর জন্য খুবই বিব্রতকর। একে তো তিনি ফরজ বিধান নামাজ আদায় করতে পারছেন না। আবার একজন নারীর দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অনেকে ভিন্ন চোখে নারীর দিকে তাকায়।
-কেএল