আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: ইতিহাসের ভয়াবহ বন্যায় গোটা সিলেট যখন বিপর্যস্ত, সারা সুনামগঞ্জ যখন প্লাবিত, দুর্ভোগ-দুর্গতি আর ক্ষুধার জ্বালায় বানভাসি মানুষের হাহাকার যখন ভারি করছিল প্রকৃতি তখন খাদ্য, ওষুধ আর নগদ অর্থ বিতরণের বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে টিম- হাফেজ্জী সেবা।
অনেক ত্যাগ আর সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সুদূর ঢাকা থেকে মোট ৫ ধাপে সিলেটে ১৫ হাজার এবং সুনামগঞ্জে ৩ বারে ৬ হাজার মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে, দুর্গত জনের মুখে অনাবিল হাসি ফুটিয়ে আর্তমানবতার সেবায় উৎকৃষ্ট এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সারা বছর সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সেবা সংস্থাটি।
বন্যার ২য় ধাপ থেকে একাজে তাদের প্রধান সহযোগী সংস্থা হিসেবে, মানবতা, সহমর্মিতা আর উদারতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠপর্যায়ে সশরীরে উপস্থিত থেকে, কাজ করেছে পল্টন-সেগুনবাগিচা ইমাম ও খতিব পরিষদ।
জানা যায়, আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া সিলেটের ১ম বন্যায় জৈন্তাপুর উপজেলার বাউরভাগ উত্তর ও দক্ষিণে ১ হাজার এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং বালির হাওরে বন্যাদুর্গত মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে ১ হাজার বানভাসির খাদ্য এবং ওষুধের ব্যবস্থা দিয়েছে তারা।
২য় ধাপে আবার পল্টন সেগুন বাগিচা ইমাম ও খতিব পরিষদকে নিয়ে গত ২১ জুন মঙ্গলবার, জৈন্তাপুর উপজেলার চারিকাটা ইউপি এবং লক্ষিপ্রসাদ পাতন এলাকার পানিবন্দী চরম বিপদগ্রস্ত ৫ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য, জরুরি ওষুধ এবং অর্থ সহযোগিতা দিয়েছে তারা। এছাড়াও হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটির সিলেট প্রতিনিধির মারফতে ধাপে ধাপে আরো ৫ হাজার ক্ষুধার্তের খাবার যুগিয়েছে খ্যাতনামা সেবা সংস্থাটি।
শুধু সিলেট জেলাতেই নয়, বরেঞ্চ সিলেটের দুর্দিনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সেবামূলক উল্লেখযোগ্য কাজ আঞ্জাম দেবার পর তারা মুভ করেছে বন্যাদুর্গত আরেক জেলা সুনামগঞ্জের দিকে।
জানা যায়, ২৫ জুন, শনিবারে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের খাদ্য সামগ্রীর পাশাপাশি কয়েক শো দুর্গত জনের ওষুধ এবং অর্থ সহযোগিতার ফুল প্যাকেজ নিয়ে টিম- হাফেজ্জী সেবা এবং পল্টন সেগুনবাগিচা ইমাম ও খতিব পরিষদের প্রতিনিধি দল দুর্গতদের কল্যাণে কাজ করেছে ছাতক উপজেলাধীন, দক্ষিণ খুরমা ইউপির মনিপুর, সেনপুর, চান্দারবাড়ি ও নোয়াগাঁও এলাকায়। সেখানে সেনপুর ও চান্দারবাড়ি এলাকায় করুণ পরিস্থিতির শিকার, বন্যাদুর্গত ৫০০ সনাতন ধর্মাবলম্বী হিন্দু মানুষের মাঝে, পরম যত্নসহকারে পৌঁছে দিয়েছে 'সোসাইটি'র ভালবাসার উপহার- জরুরি খাদ্য, ওষুধ ও নগদ টাকা-পয়সা। শুধু তাই নয়, বরং সেখানে বসবাসরত সনাতনীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে আরো কিছু কাজের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে টিম- হাফেজ্জী সেবা। অত:পর স্থানীয় প্রতিনিধির মারফতে পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিলি করে তারা আরো ১ হাজার মানুষের খাদ্য ও পানীয়।
জানা যায়, বন্যাকবলিত অঞ্চলের এই সফরটা শেষ করে, আরো ৫ হাজার মানুষের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে আবারও ফিরছে তারা সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারা বাজার উপজেলাধীন পান্ডারগাঁও ইউপির নলুয়া, জলসি ও সুড়িগাঁও এলাকায়।
বন্যার্ত সিলেট আর তলিয়ে যাওয়া সুনামগঞ্জের ক্ষুধার্ত মানুষের কল্যাণে এভাবেই বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে টিম- হাফেজ্জী সেবা।
কেবল বন্যাদুর্গত সিলেট আর সুনামগঞ্জেই নয় বরেঞ্চ দেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো সময় বড়ো কোনো দুর্যোগ বা বিপর্যয়ে এভাবেই আন্তরিকতার সঙ্গে আর্তমানবতার সেবায় সব সময়ই নিজেদের সঁপে দিয়ে, কাজ করে চলেছে সেবামূলক এই সোসাইটি।
হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ প্রত্যয় ও প্রত্যাশা হলো, যতদিন সামর্থ্যে কুলোবে ততদিন এভাবেই দেশ ও দেশের মানুষের সেবায় কাজ করে যাবে প্রতিনিয়ত। আসছে সোমবার ৫০০ বন্যার্ত পরিবারের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ সেবা নিয়ে সুনামগঞ্জে থাকছে তারা।
-কেএল