আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটকেদ্রে আসা ভোটাররা বলছেন, ভোট দিতে তুলনামূলক (অ্যানালগ সিস্টেমের তুলনায়) বেশি সময় লাগছে। এছাড়া কোনো কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেছেন রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১০টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ধীরগতির বিষয়টা হচ্ছে, এখানে একজন ভোটার কিন্তু তিনটা ব্যালটে ভোট দেন। তারা ভোট দেয়ার আগে চিন্তা করতে সময় নেন। তাছাড়া এবারই প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন। এসব কারণে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ইভিএমে কোনো কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ মিলছে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রার্থীরা ভোটারের নাম ও স্লিপ দিয়েছেন। যথাযথভাবে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। অনেক সময় রেখার কারণে আঙুলের ছাপ মিলতে সমস্যা হতে পারে। একটু-আকটু সমস্যা হতে পারে। তবে যাদের ফিঙ্গার মিলছে না শেষ পর্যন্ত তারা ভোট দিতে পারবেন বলে আশাবাদী এই রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ইভিএম ডিভাইস ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় কোনো সমস্যা নেই। ছোটখাটো সমস্যা হলে আমাদের মোবাইল টিম তা সলভ করে দেন।
ভোটের পরিবেশ সম্পর্কে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট হচ্ছে বলে সব প্রিসাইডিং অফিসার ও এজেন্টরা জানিয়েছেন। এখনো পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ইভিএম নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেছেন, এবারই কুমিল্লায় ইভিএমে প্রথম ভোট হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ভোট দিতে ভোটারদের সমস্যা হতে পারে। তাই নির্বাচন কমিশন থেকে দুই-একজন এক্সপার্টকে রাখা হোক, কেউ ভোট দিতে সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করার জন্য।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিতে সমস্যা হয়েছিল। ইভিএম ধীর গতিতে কাজ করায় যথাসময়ে সব ভোট গ্রহণ করা যাচ্ছিল না। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইভিএম সম্পর্কে মত জানতে চাইলে আরফানুল হক রিফাত এ কথা বলেন।
আজ বুধবার সকাল ৮টায় কুসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ৬৪০টি বুথে ভোট হচ্ছে ইভিএমে। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুইজন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এবারই কুমিল্লায় প্রথম ইভিএমে ভোট হচ্ছে। এর আগে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন হয় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন প্রার্থী। তাদের মধ্যে আলোচনায় বেশি আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত (নৌকা প্রতীক) এবং গত দুইবারের মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর (টেবিল ঘড়ি প্রতীক) নাম। এই দুজনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্য তিনজন হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (ঘোড়া) ও কামরুল আহসান (হরিণ)। এরমধ্যে মনিরুল হক বিএনপির এবং নিজামউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দুজনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী লড়াই করছেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশের ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য মাঠে রয়েছেন।
নির্বাচনে ইভিএমে কোনো ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য রয়েছেন ৩৫ জন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। প্রতি বুথে (কক্ষে) একটি করে মোট ৬৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ভোট কক্ষের ভেতরে কোনো এজেন্ট কোনো ভোটারকে তার পছন্দের প্রতীকে ভোটদানে প্রভাবিত করলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনটি