ড. মুফতি হুমায়ুন কবির:
সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বভিাগ, চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়
হজের ফরয: ১. ইহরাম। (শর্ত)। হজের ইহরাম শাওয়াল মাসের পূর্বে করলেও বৈধ; তবে তা মাকরূহ। ইমাম শাফেয়ীর নিকট ইহরাম রুকন।
২. আরাফাতে অবস্থান। নয় তারিখে (রোকন)। ৩. তাওয়াফে জিয়ারত। দশ, এগারো ও বার তারিখে (রোকন)।
ইমাম শাফেয়ীর নিকট অতিরিক্ত আরও একটি রয়েছে। তাহলো সাফা ও মারওয়াতে সায়ী করা। ইমাম মালেক ও শাফেয়ীর আরেক মত মতে মুজদালিফায় অবস্থানও ফরয।
হজের ওয়াজিব
মৌলিকভাবে হজের ওয়াজিব ছয়টি: ১. তাওয়াফে কুদুম বা জিয়ারতের পরে সাফা ও মারওয়াতে সায়ী করা। ২. দশ তারিখ ফজরের পরে সূর্য উদয়ের পূর্বে মুজদালিফায় অবস্থান করা। ৩. দশ, এগারো, বার ও তের তারিখ মিনাতে মোট সত্তরটি পাথর নিক্ষেপ করা।
৪. তামাত্তু ও কেরানকারীদের জন্য হাদী কুরবানী করা ওয়াজিব। তা সম্ভব না হলে, নয় তারিখের পূর্বে তিনটি ও হজ শেষে সাতটি রোজা রাখতে হবে।
৬. বিদেশীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। (তুহফাতুল ফুকাহা, খ-১, পৃ. ৩৮১)। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি ওয়াজিব রয়েছে।
৭. মীকাতের পূর্বে ইহরাম বাঁধা।
৮. সায়ী সাফা থেকে শুরু করা ওয়াজিব। যদি মারওয়া থেকে শুরু করে তাহলে সাত চক্কর হওয়ার পর অতিরিক্ত আরেকটি চক্কর দিবে। আর প্রথম চক্কর বাতিল ঘোষণা করবে। নতুবা দম দিতে হবে। সায়ীর চক্কর থেকে যদি অধিকাংশ ছেড়ে দেয়, তখন দম ওয়াজিব হবে। আর যদি এক, দুই বা তিন চক্কর ছেড়ে দিলে সদকা ওয়াজিব। (আহসানুল ফতওয়া, খ. ৪, পৃ. ৫২৮)।
৯. দিনের বেলায় আরাফাতে অবস্থান শুরু করলে মাগরিব পর্যন্ত থাকা ওয়াজিব। ১০. তাওয়াফে জিয়ারত দশ তারিখ সুবহে সাদিকের পর থেকে বার তারিখ সূর্য ডুবা পর্যন্ত সময়ে আদায় করা।
১১. দশ তারিখ তামাত্তু ও কেরান কারীদের জন্য পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী ও হালকের মাঝে তারতীব ওয়াজিব। আর ইফরাদকারীর জন্য পাথর নিক্ষেপ ও হালকের মাঝে তারতীব ওয়াজিব। এসব কাজ ও তাওয়াফে জিয়ারতের মাঝখানে তারতীব ওয়াজিব নয়।
১২. তাওয়াফে জিয়ারত অযূর সাথে করা ওয়াজিব।
১৩. প্রতিটি তাওয়াফের পরে দু’রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। ১৪. মক্কাবাসী ও যারা হিলে তথা হারামের বাইরে ও মীকাতের ভেতরে বসবাস করে, যেমন জিদ্দা, তায়েফ ইত্যাদিতে তখন তাদের কেরান ও তামাত্তু না করা ওয়াজিব। যদি করে দম দিতে হবে। যারা সেখানে বাইর থেকে গিয়ে মুকীম হিসেবে বসবাস করে, তাদেরও একই বিধান।
১৫. হজের তিন ফরযে তারতীব পালন ও নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ে আদায় করা ওয়াজিব। নোট: হজের যে কোনো ওয়াজিব ইচ্ছাকৃত বা ভুলে ছুটে গেলে হজ বাতিল হয় না। তবে আদায়ে অক্ষম হলে, তখন দম বা সদকা দিতে হবে। তেমনি হজে যেখানে তারতীব ওয়াজিব সেখানেও আগে পরে করলে দম দিতে হবে।
তবে ওযর ব্যতীত যদি কোনো ওয়াজিব ছেড়ে দেয় তখন পাপ হবে দম দিলেও তা মাফ হবে না; বরং তা মাফ হওয়ার জন্য তাওবা করতে হবে। তবে যদি কোনো ওয়াজিব গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণে ছুটে যায় তখন দমও দিতে হয় না। যেমন, মহিলাদের মাসিকের কারণে যদি বিদায়ী তাওয়াফ ছুটে যায়। তবে পুরুষ বিদায়ী তাওয়াফ ছেড়ে দিলে সর্বাবস্থায় দম দিতে হয়।
হজের সুন্নাত ও মুস্তাহাব
১. ইহরাম ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বাঁধা মুস্তাহাব। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত ইয়ারপোর্টে করে থাকে তা জায়েজ।
২. বিদেশীদের জন্য তাওয়াফে কুদুম সুন্নাত। ৩. দশ তারিখ পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী ও হালকের এসব কাজ ও তাওয়াফে জিয়ারতের মাঝে তারতীব সুন্নাত।
৪. নয় তারিখ দুপুরের পর থেকেই আরাফাতে অবস্থান শুরু করা সুন্নাত। যাতে তাতে বেশি সময় অতিবাহিত হয়। নোট: সুন্নাত ইচ্ছা করে ছেড়ে দেওয়া খারাপ কাজ। তা আদায় করলে পুণ্য ও ছেড়ে দিলে দম দিতে হয় না।
৬. ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ মিনাতে রাত্রি যাপন করা। তাতে আল্লাহর যিকির বেশি বেশি করবে। ৫. আজ (العج) তথা অধিকহারে বড় আওয়াজে তালবিয়া পড়া। আর ছাজ (الثج) তথা কোরবানী করা।
সারকথা হলো হজে ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত যদি যথাযথ আদায় করা তখন সেই হজ হজে মাবরুর হবে ও সকল পাপের কাফ্ফারা হয়ে যাবে।
-এটি