ড. মুফতি হুমায়ুন কবির।।
সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বভিাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ওমরাও হজের মধ্যে ইহরাম শর্ত ও ফরয। তা না হলে মানুষের হজ হবে না। তাই নিম্নে হজ ও ওমরার ইহরামে পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. নখ কেটে নিবে, গোঁফ ছেঁটে নিবে, বগলের নিচে ও লজাস্থানের লোম পরিষ্কার করে নিবে ও স্যাম্পু ইত্যাদি দিয়ে মাথা পরিষ্কার করে নিবে। তা করা মুস্তাহাব। সাধারণত প্রতি সপ্তায় তা পরিষ্কার করা মুস্তাহাব। তা না হলে পনের দিনে একবার করবে। চল্লিশ দিন যাবত তা পরিষ্কার না করা মাকরূহ তাহরীমি।
২. অযূ বা গোসল করা। গোসল করা উত্তম। ৩. দু’টি নতুন বা ধৌত কাপড় পরিধান করবে। একটি লুঙ্গি আরেকটি চাদর। নতুন উত্তম। তবে পুরুষের কাপড় সেলাইবিহীন হতে হবে। তা সাদা হওয়া মুস্তাহাব।
৪. খুশবু লাগাবে। ৫. দু’রাকাত নামাজ পড়া। ৬. মাথায় টুপি থাকলে তা নিয়ে ফেলে ইহরামের নিয়ত করবে। ফরয হজ আদায়ে ইহরামে নির্দিষ্ট নিয়ত জরুরী নয়। তাই সে যদি যে কোনো হজের নিয়ত করে, তখন তাই আদায় হবে। আর যদি মুতলাক (সাধারণ) নিয়ত করে তা দ্বারা ফরয হজ আদায় হবে। ইহরামে নিয়ত করা শর্ত ও ফরয।
৭. দোয়া করবে। দোয়ার পদ্ধতি হলো: الّلهُمَّ إِنِّيْ أُرِيْدُ الحَجَّ فَيَسِّرهُ لِيْ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّيْ তা ইফরাদ হজের ইহরাম হলে। আর কেরানের ইহরাম হলে বলবে,
اَللهُمَّ إِني أُرِيْدُ الحَجَّ وَالعُمْرَةَ فَيَسِّرْهُمَا لِيْ وَتَقَبَّلْهُمَا مِنِّيْ আর ওমরার ইহরাম হলে ওমরার নিয়ত করে দোয়া করবে। তামাত্তুকারী প্রথমে ওমরার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধবে পরবর্তীতে সাত বা আট তারিখ আবার হজের নিয়ত করে ইহরাম বাঁধবে।
৮. বড় আওয়াজে তালবিয়া পড়বে। মনে মনে পড়লে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ইহরামে তালবিয়া পড়া হানাফী মাযহাবে ফরয। তালবিয়া না পড়লে এর স্থলে সম্মানসূচক যিকর তথা তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর তেমনি হাদী পাঠালে তাও তালবিয়া হিসেবে গণ্য হবে। তালবিয়া হলো:
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيكَ لَك
তালবিয়া একবার পড়া ওয়াজিব, তিনবার পড়া সুন্নাত, বারবার পড়া মুস্তাহাব। তালবিয়া মুখে উচ্চারণ করে পড়তে হবে, মনে মনে পড়লে আদায় হবে না। তবে মহিলা নিজে শুনে মত তালবিয়া পড়বে। হানাফী মাযহাবে তালবিয়া আরবীতে না জানলে ভিন্ন ভাষায়ও আদায় করা যাবে। আরবী জানা সত্ত্বেও ভিন্ন ভাষায় পড়া মাকরূহ।
যারা বোবা তারা হানাফী মাযহাব মতে নিয়ত করে জিহ্বা নড়াচড়া করতে হবে। নতুবা তাদের ইহরাম হবে না। তালবিয়া নামাজের পরে নিয়তের সাথে পড়া সুন্নাত। তবে মীকাত পর্যন্ত দেরী করতে পারবে। তালবিয়ার উল্লিখিত শব্দ থেকে কোনো কিছু বাদ দেওয়া যাবে না, বাড়ানো যাবে। তালবিয়া যে কোনো ভাষায় আরবি হোক ফারসী হোক পড়লে যথেষ্ট হবে। তাকবীর, তাহলীল, হামদ ইত্যাদিও এর স্থলাভিষিত্ত হবে।
ইহরামে নিয়ত ও তালবিয়া ফরয, বাকীগুলি সুন্নাত ও মুস্তাহাব। তাই সময় কম থাকলে শুধু নিয়ত করে তালবিয়া পড়লেই মুহরিম হয়ে যায়। তালবিয়ার পরিবর্তে গলায় হার পরিধান করে হাদী নিয়ে যাওয়াও তালবিয়া হিসেবে গণ্য হয়।
-এটি