আবদুল্লাহ তামিম: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে। কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’।
রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [বুখারী, ভলিউম ৭, বুক ৬৯,সংখ্যা৪৯৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন।- সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস: ৪০২০; সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস: ৬৭৫৮।
উপর্যুক্ত হাদিসগুলো থেকে বুঝা যায়, ইসলাম কোনোভাবেই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার সমর্থন করে না। বিশেষ করে ঈদের দিনে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে পরিবেশ নষ্ট করা এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজধানী ঢাকার মারকাযুদ্ দিরাসাহ্ আল ইসলামিয়্যাহ্ মাদরাসার মহাপরিচালক, পূর্ব শেওড়াপাড়া চাঁদতারা জামে মসজিদের খতিব মুফতি মামুন আব্দুল্লাহ কাসেমী বলেন, ঈদানন্দের নামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে পরিবেশ নষ্ট থেকে বাঁচতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। এসব বিষয় থেকে সমাজকে বাঁচাতে আমাদের কয়েটি বিষয় মনে রাখতে হবে। ১. রমযানের শেষ জুমায় আলোচনা- ইসলামে গানবাদ্যের ভয়াবহতা। ২. উঠতিবয়সের ছেলেদেরকে নিয়ে পৃথকভাবে বসে তাদের মোটিভেশান। ৩. দ্বীনদার প্রভাবশালী কিছু লোকজনকে সামাজিকভাবে উশৃংখল ছেলেদেরকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করা। ৪. সর্বপরি এটা যে ভারতীয় সংস্কৃতি দ্বরা প্রভাবিত এটা বোঝানো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, ড. মুফতি হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের দিন সঙ্গিত পরিবেশন ও দফ বাজানো জায়েজ। তেমনি ছোটরা যদি নাচে তাও বৈধ। তবে তাতে গান ও বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হারাম। দফ হলো কাঠ দিয়ে গোলাকৃতিতে বানানো হয়। তার এক পাশে চামড়া বেষ্টন করা হয় যাতে আঘাত করলে আওয়াজ বের হয়। অপর পার্শ্ব খোলা থাকে। যা ব্যবহার বিবাহ ও ঈদে প্রমাণিত। তাতে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমান সময়ে নাচ-গান একটি চরিত্র বিধ্বংসী ব্যাধী। যা থেকে উত্তরণ করতে না পারলে মানব সমাজ অধঃপতনের দুয়ারে যাবে। চৌদ্দবছর পূর্ব থেকেই মহানবী (সা.) তদ্বিষয়ে সতর্ক করেছেন।
ইসলামী সঙ্গীত পাঠ নিন্মোক্ত শর্তে বৈধ: ১. কোনো বাদ্যযন্ত্র থাকতে পারবে না। ২. কোনো অশ্লীল বাক্য বা অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করতে পারবে না। ৩. গানের সুর থাকতে পারবে না। ৪. তা দ্বারা কল্যাণমূলক জ্ঞান অর্জনের সময় নষ্ট করা যাবে না।
ইমাম বুখারী বর্ণনা করেন, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, হযরত আবু বকর (রা.) তার নিকট প্রবেশ করলেন তখন তার ফিতর বা আযহার দিনে রাসূলুল্লাহ ছিলেন। তার নিকট দু’জন গায়িকা ছিলেন যারা বু‘আছ যুদ্ধের দিনের ঘটনা নিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করছে। তখন আবু বকর (রা.) দুবার বললেন, তা শয়তানের বাশি। তখন নবী তাকে বললেন, তা ছেড়ে দাও হে আবু বকর নিশ্চয় প্রতিটি জাতির জন্য ঈদ রয়েছে আর আমাদের ঈদ হলো আজ। (বুখারী: ৩৯৩১)
ইমাম বায়হাকী বর্ণনা করেন, হযরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, গান অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে যেমন পানি ক্ষেত জন্মায় আর যিকর অন্তরে ঈমান সৃষ্টি করে যেমন পানি ক্ষেত জন্মায়। (বায়হাকী: ২১০০৭)
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) ছয়টি বস্তু হারাম করেছেন। মদ, জুয়া, বাদ্যযন্ত্র, বাঁশি, ঢোল ও তবলা। (আল মুজামুল আওসাত: ৭৩৮৮)।
বর্তমানে দেখা যায় ঈদের দিনে বিজাতীয় অনুসরণে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গানের মাধ্যমে খুশি উদযাপন করে তা কাম্য নয়। বরং ঈদের দিনের মত খুশি ও ইবাদতের দিনকে কলুষিত করা। যা একজন ঈমানদারের অবশ্যই বর্জন করা উচিত।
রাজধানী ঢাকার পল্লবী ঝিল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের ইমাম ও খতিব মুফতী আহসানুল্লাহ কাসেমী বলেন, ঈদের দিন আনন্দ হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আনন্দ-উল্লাসের নামে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান-বাজনা করা, অবৈধ খেলাধুলার আয়োজন করা এবং টিভি-সিনেমার নোংরা চলচ্চিত্র দর্শন করা, নগ্নতা, বেহায়াপনা প্রদর্শন করা হারাম। কেননা এগুলো মুসলিম সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার ইহূদী-খ্রিষ্টান ও পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক চালু করা অপসংস্কৃতি। তাছাড়া ছিয়াম পালনকারী কোন ব্যক্তি এরূপ করতেই পারে না (ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৪; নাসাঈ, হা/২২১৬; মিশকাত, হা/১৯৫৯)।
সাহাবি ও তাবেঈনদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহের সমষ্টি হলো গান ও বাদ্যযন্ত্র। যথা- ১. নিফাক এর উৎস ২. ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী ৩. মস্তিষ্কের উপর আবরণ সৃষ্টিকারী ৪. কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী ৫. আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী ৬. গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ৭. জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী।
গান সম্পর্কে চার ইমামের ভাষ্য
গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এক ও অভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। সব গান-বাদ্যকে হারাম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
গান-বাজনা, নৃত্য এগুলোর কি কোনো শাস্তি দুনিয়াতে দেওয়া হবে? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ দেওয়া হবে। এরকম অনেকের নিকৃষ্ট শাস্তি দুনিয়াতেই হবে। আর পরকালের শাস্তি তো আরো মারাত্মক। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার শাস্তি খুবই কঠোর।
সর্বোপরি হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আমি ‘বাদ্য-যন্ত্র’ ও ‘মুর্তি’ ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।”
-এটি