মুফতি নাজমুল হাসান।।
ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত, কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামত হিসাবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা‘অালার নিকটবর্তী হতে পারি, কিন্তু আমরা এসবের প্রতি লক্ষ্য না রেখে এমন কিছু কাজ করি যা আল্লাহ তা‘আলার রাগ ও ক্রোধকে ত্বরান্বিত করে; এমন কাজগুলো বর্জন করা আমাদের জন্য অতিব জরুরী৷ এখানে তেমন কিছু বিষয়ে আলোচনা করা হল—
১. আমাদের দেশের অনেকেই ঈদের দিনের ফজরের নামায আদায় করে না, ঈদের জন্য ফজরের নামায জামাতে পড়ার গুরুত্বও দেয় না। অথচ ফজরের নামাযের গুরুত্ব অপরিসীম৷ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তারা ইশা ও ফজর নামাযের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দু'টি নামাযের জামাতে শামিল হত।’ –সহিহ বোখারি: ৬১৫
২. ঈদের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঈদের নামায আদায় করা। প্রকৃতপক্ষে একজন ঈমানদার বান্দা নামায আদায়ের মাধ্যমেই বেশি আনন্দিত হয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজে এমনও কিছু মানুষ রয়েছে যারা নতুন জামা পরে ঈদ উদযাপন করলেও ঈদের নামাযের ধারে-কাছেও থাকে না৷
৩. ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহও বটে৷ তবে কেউ কেউ ঈদের দিন বৃষ্টি হলে বা শীতের প্রকোপ থাকলে গোসলের ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে থাকে, যা বিনা কারণে মোটেও সমীচীন নয়৷
৪. ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। অনেকে অল্প দূরত্বের পথেও নিজস্ব কার বা রিক্সা ব্যবহার করে ঈদগাহে গিয়ে থাকে, এমনটি করা উচিত নয়৷ নামায আদায়ের লক্ষ্যে পায়ে হেঁটে গেলে প্রতি কদমে কদমে সাওয়াব পাওয়া যায়৷
৫. ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার জন্য যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা উচিত৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন এবং এটি আমাদের জন্য সুন্নত৷
৬. ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা মুমিনের বৈশিষ্ট। এ দিনে সকল মানুষ একত্রে জমায়েত হয়, তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত হল তার প্রতি আল্লাহর যে নিয়ামাত, তা প্রকাশ করণার্থে ও আল্লাহর শোকরিয়া আদায়স্বরূপ নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে অনেকে জামা ময়লা হওয়ার আশঙ্কায় উত্তম পোশাক রেখে পুরাতন পোশাক পরে ঈদের নামায আদায় করতে যায়, এমন করা ঠিক নয়৷
৭. ঈদের খোতবা শোনা ওয়াজিব৷ ঈদের নামায আদায় করে খোতবা না শোনেই চলে যাওয়ার অবকাশ নেই৷ খোতবা মনোযোগ দিয়ে শোনতে হবে, খোতবা শোনা ওয়াজিব৷
৮. অনেকে ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে থাকেন, যা হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লান ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে সাব্যস্ত হয়নি। অতএব ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না।
৯. অনেকে ঈদের আনন্দে এমনভাবে উদাসীন থাকেন যে, ফরজ নামায আদায়ে অলসতা করেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়৷ শরীয়তে ঈদের আনন্দ উদযাপনের চেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের গুরুত্ব অনেক বেশি৷
১০. টিভি সিরিয়াল, গান-বাজনায় ঈদ উদযাপন করা সম্পূর্ণ হারাম৷ বিজাতীয় আচরণ মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। ঈদের দিনে এ কাজগুলো অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এসব করা যাবে না।
এনটি