মুফতি সাদেকুর রহমান।।
ঈদ খুশির দিন। শ্রমের পারিশ্রমিক প্রাপ্তির দিন। পুরষ্কার লাভের দিন। সন্তুষ্টি ও ক্ষমা প্রাপ্তির দিন। অফুরন্ত দানের দ্বার উন্মুক্ত করার দিন। বড়ত্ব -মহত্ব প্রকাশের দিন। তাই ঈদের কল্পনা করতেই প্রতিটি ঈমানদার নারী- পুরুষের শরীরে সৃষ্টি হয় শিহরণ। পুলকিত হয় তাদের তনুমন। কারণ এদিনের পুরষ্কার লাভের জন্যই তারা দীর্ঘ এক মাস ক্ষুধা ও অনাহারে থেকেছেন,সিয়াম সাধনা করেছেন,তারাবির নামাজ পড়েছেন, কিয়ামুল লাইল করেছেন ও সাহরী খেয়েছেন। মহান মালিকের দরবারে রোনাজারি ও কাকুতি-মিনতি করেছেন।
আর আজ তাদের জন্য মহান মালিক সন্তুষ্টি এবং সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। হযরত আনাস রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ....যখন ঈদের দিন হয় তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! সেই শ্রমিকের পারিশ্রমিক কি হবে যে তার কাজ যথাযথ সম্পাদন করেছে? তারা উত্তরে বললেন,হে আমাদের প্রতিপালক! তার বিনিময় ইহাই যে, তাকে পুরোপুরি পারিশ্রমিক দেওয়া হোক। তখন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার বান্দারা তাদের প্রতি আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে অতপর (ঈদগাহের দিকে) আমার কাছে প্রার্থনা করার জন্য তাকবীর ধ্বনি দিয়ে যাচ্ছে।
আমার ইজ্জত ও বুজুর্গি, সম্মান ও সুউচ্চ মর্যাদার কসম,আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনা কবুল করব। অতপর আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করবেন, তোমরা ফিরে যাও,আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম। তোমাদের পাপগুলোকে পূণ্যে রুপান্তরিত করে দিলাম। ফলে তারা ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে ফিরে যাবে। আল মুজামুল কাবীর লিত তাবারানী, হাদীস নং - ৬১৭, আত তারগীব ওয়াত তারহীব -৫৪৯
তাই মুমিনের কর্তব্য হল, পবিত্র ঈদের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের বাতলানো পথে ঈদ উদযাপন করা। ঈদ আনন্দ উৎসব উদযাপনের নামে বিজাতীয় কৃষ্টি-কালচার অনুসরণে পাপ এবং গর্হিত কাজে লিপ্ত না হওয়া।
যেভাবে আপনি ঈদ উদযাপন করবেন :-
১. সাধ্য অনুযায়ী ঈদের রাতে ইবাদত বান্দেগী করা। রাসুল সা ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় দুই ঈদের রাতে ( ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা) জাগ্রত থেকে ইবাদত- বান্দেগী করবে, তার কলব সেদিন (কঠিন কিয়ামতের দিন) মরবে না (নিস্তেজ হবে না) । যেদিন ( ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে) সমস্ত কলব মারা যাবে ( নিস্তেজ হয়ে যাবে)। সুনানে ইবনে মাজাহ ১/১২৭, হাদীস : ১৭৮২, বায়হাকী - শুআবুল ঈমান, হাদীস :৩৭১১
২. খুব সকালে ঘুৃম থেকে উঠে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করা।
৩. গোসল করা ।
৪. সামর্থ্য থাকলে নতুন পোশাক পরিধান করা।তা সম্ভব না হলে ব্যবহৃত পোশাকের মধ্যে উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৫. খুশবু ব্যবহার করা।
৬. শরীয়তের সীমার ভিতরে থেকে যথাসম্ভব সজ্জিত হওয়া।
৭. ফজরের নামাজের পর খুব দ্রুত ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া।
৮. ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে খুরমা অথবা খেজুর খাওয়া এবং বিজোড় সংখ্যক খাওয়া। খুরমা -খেজুর না থাকলে অন্য কোন মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া।
৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।
হযরত ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজাদারকে অনর্থক কথাবার্তা ও অশ্লীল কাজ কর্ম থেকে পাক করার জন্য এবং গরীব-মিসকিনদের অন্নের ব্যবস্থা করার জন্য সদকাতুল ফিতিরের বিধান দিয়েছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে তা আদায় করবে ,আল্লাহর নিকট তা গ্রহণীয় দান হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর আদায় করবে, তা অন্যান্য সাধারণ দানের মত একটি দান হিসেবে গণ্য হবে। সুনানে আবু দাউদ -১৬০৫
১০.ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়া। ওজর থাকলে মসজিদে আদায় করা যাবে।
১১. ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া।
১২. ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় ফিরে আসা।
১৩. ঈদুল ফিতরে অনুচ্চস্বরে তাকবীর বলা।
১৪. অধিক পরিমাণে দান খয়রাত করা।
১৫. আত্মীয় স্বজনের খোঁজ -খবর নেওয়া।
১৬. তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া এবং তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা।
১৭. অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা।
১৮. সর্বোপরি শরীয়াতের সীমারেখার ভেতরে আনন্দ উৎসব করা। -ফাতাওয়া আলমগীরী ১/১৫০, ফাতাওয়ায়ে শামি ৩/৪৭-৫২
ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে এবং ঈদগাহে গিয়ে নফল নামাজ পড়া মাকরুহ। তবে ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে ঘরে নামাজ আদায় করতে পারবে। ফাতাওয়া শামি ৩/৫২
লেখক: মুশরিফ, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন মাদরাসা, চৌধুরী পাড়া ঢাকা
এনটি