সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


মানবতার উন্মেষ ঘঠুক ঈদ উৎসবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম।।

ঈদ। আনন্দের দিন। উৎসবের দিন। পরস্পরে সৌহার্দ্য ও প্রীতি বন্ধনের দিন। পৃথিবীতে প্রতিটি জাতি ও প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীদের জন্যই বছরে এমন কিছু দিন নির্ধারিত থাকে—যে দিনগুলোতে তাঁরা তাদের প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দ উৎসব উদযাপন করে থাকে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি মুসলিম জাতিকে বছরে দুটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন—যে দুটি দিনকে আরবী ভাষায় ঈদ অর্থাৎ উৎসবের দিন বলা হয়।
১/ ঈদুল ফিতর
২/ঈদুল আযহা

এই দুটি দিনে মুসলিম নর-নারী, যুবক-বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর সকলের হৃদয়ে আনন্দের এক হিল্লোল বয়ে চলে। শিশু-কিশোররা আনন্দে মেতে উঠে। সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকেই ভালো ও নতুন জামা কাপড় পরিধান করার চেষ্টা করে—এবং প্রত্যেক পরিবারেই কমবেশি ভালো খাবারের আয়োজন হয়।

এই দুটি দিনকে ঘিরে রয়েছে মুসলমানদের অনেক আয়োজন—একসাথে ঈদগাহে যাওয়া, ঈদগাহে ছোট বড় সকলেই সমবেত হয়ে রবের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব বর্ণনা করা। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ বিনিময় ও পরস্পরে সৌহার্দ্য, প্রীতি বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ কে জাগিয়ে তোলা।

ইসলামও আমাদেরকে ঈদের আনন্দ-উৎসব উপভোগ করতে উৎসাহিত করেছে— হয়রত আয়েশা সিদ্দিকা রাযি. বলেন, এক ঈদের দিন হযরত আবু বকর রা. আমার ঘরে এলেন। সেখানে তখন দু'জন মেয়ে বুআস যুদ্ধের গান গাইছিলো। তারা গায়ক ছিলো না। হযরত আবু বকর রা. ওই মেয়ে দু'টোকে শক্ত ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানি বাধ্য! তাও রাসুলের ঘরে! তখন নবীজি বললেন আবু বকর! ওদেরকে ছেড়ে দাও। প্রতিটি জাতিরই ঈদ ও খুশির দিন থাকে। আজ আমাদের ঈদের দিন। (সহিহ বুখারী- ৯৫২)

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা যেন কোনোভাবেই নবীজি সা. এর সুন্নাহ ও ইসলামী সংস্কৃতি বিরোধী অযথা, অশ্লীল, শরিয়ত পরিপন্থী কোনো কাজ বা আনন্দ-উৎসবে না জড়ায়। কারণ এটা অন্যায় ও মারাত্মক গুনাহের কাজ। যা আমাদের ঈমানকে বিপথগামী করে তুলবে।

ঈদ শুধু নিছক আনন্দ-ফুর্তি ও উৎসবের নামই নয়—ঈদ আমাদেরকে দেয় মানবতার বার্তা। আমাদের প্রিয় নবীজি সা. তিনিও স্বয়ং পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ঈদের আনন্দ-খুশি উদযাপন করতেন ঠিকই—কিন্তু তিনি কখনো এতিম, অসহায়-নিস্ব ও বিধবাদের ভুলে যেতেন না। তাদের মাঝেও তিনি বিলিয়ে দিতেন ঈদের অনাবিল সুখ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনও গরীব অসহায় মানুষদের মাঝে ঈদের খুশি বন্টন করে দিতে ধনীদের উপর ফরজ করেছেন যাকাত ও সদকাতুল ফিতরের বিধান।

বর্ণিত আছে—একদা নবীজি সা. ঈদের দিনে ঈদগাহের কোনো এক কোনে বসে এক শিশুকে কাঁদতে দেখলেন। তিনি অবাক হলেন এই খুশির দিনেও কান্না! জেগে উঠলো নবীজির মর্মবেদনা। তিনি ছেলেটিকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে—ছেলেটি বললো আমার বাবা-মা নেই। আমাকে আদর ও ভালবাসা দেওয়ার মতো কেউ নেই। নবীজি সা. তখন তাকে সাথে করে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন—আয়েশা রাযি. কে বললেন, আয়েশা তোমার জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। আয়েশা রাযি. ছেলেটিকে সুন্দর করে গোসল করিয়ে নতুন জামা পড়িয়ে দিলেন। সুগন্ধি মেখে দিলেন। নবীজি বললেন আজ থেকে আমি তোমার বাবা আয়েশা তোমার মা। ছেলেটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল!

আমাদের আশেপাশেও এমন বহু মানুষ বাস করে—যারা ঈদের খুশি থেকে থাকে বঞ্চিত! কত অসহায়, অভাবী, পথশিশু, বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা ঈদের সুখ উপভোগ করা থেকে থাকে বহু দূরে। আমাদের উচিত ঈদ উৎসবে মনবিকতা, সহনশীলতা ও সমবেদনার হাতকে প্রসারিত করা। আমাদের প্রিয় নবীজি সা. সবসময় অসহায়, অভাবী এবং প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে—মহানবী সা. বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে, পরকালে আল্লাহ তায়ালা তাঁর ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তায়ালা তার প্রতি করুনার দৃষ্টি দেন। (মুসলিম, হাদিস ২৫৬৬)

ঈদ আমাদের জীবনে বয়ে আনুক—অনাবিল সুখ। নিছক আনন্দ-ফুর্তিতে না কাটুক। ঈদ খুলে দিক মানবতার ঋদ্ধ দুয়ার! আগত ঈদ আমাদের মাঝে নতুন করে জাগিয়ে তুলোক—পরস্পরের ভ্রাতৃত্ববোধ, সমাজবদ্ধতা, ঐক্য, সাম্য, ন্যয়পরায়নতা ও মানবিকতার মহৎ গুণ। উন্মেষ ঘটুক মানবতার।

লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়াতুল উস্তায শহিদুল্লাহ ফজলুল বারী রহ. মুহাম্মদপুর, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ