সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ঈদের দিনে করণীয় ও বর্জণীয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি তানভীর সিরাজ

ঈদ মানে আনন্দ। তাই এই আনন্দে মেতে উঠাও মুসলিম উম্মার জন্য সুন্নত। কারণ নবীজিও আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তবে প্রতিটি বিষয়ে যেহেতু কিছু নিয়মনীতির আওতাধীন, তাই ঈদ উদ্যাপনেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কিছু আদাব আছে। ঈদের আদাব দুই প্রকার। এক: করণীয়, দুই: বর্জণীয়। আগে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করা হলো।

ঈদের দিনে করণীয়সমূহ: ১, ঈদের আগের রাতে জামাতের সাথে এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করা, যাতে সারারাত ইবাদতের নেকি পাওয়া যায়। এই দুই ঈদের রাতে ইবাদত- বন্দেগি করে যে ব্যক্তি জীবিত রাখবে (ইবাদতে মশগুল থাকবে) কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকেও জীবিত রাখবেন। তাই ঈদের রাতের মাগরিব, এশা আর ফজর যদি জামাতের সাথে আদায় করা হয় তাহলে সেই রাতকে জীবিত রাখার মতই হবে। হাদিসের কথা। এই আমল সুন্নাহসম্মত।

২, মিসওয়াকসহ সকাল সকাল গোসল করা। সাধ্যমত ভালো বস্তু ব্যবহার করে গোসল করা। বিশেষভাবে হালাল খুশবো সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করা। যাতে শরীর থেকে সুঘ্রাণ আসে। মানুষ আর ফেরেশতাসকল যেন কষ্ট না পায়। তা সুন্নত।

৩, শরীয়তের গণ্ডিতে থেকে তাওফিক অনুযায়ী ভালো পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা। সাজসাজ রবরব সুসজ্জিত হয়ে ঈদের খুশি প্রকাশ করা। আমরা তো এতিম সেই বালকের কাহিনী সবাই জানি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- যাকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আয়েশা র. এর হাতে সুন্দর পোশাক পরিধান করেছিলেন।

৪, আতর: আতর, খুশবো ইত্যাদি ব্যবহার করা। হাদিসে খুশবো ব্যবহারের বেশ গুরুত্ব এসেছে। সৃষ্টিকুলের সেরামানব মুহাম্মদূর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- যেদিকে যেতেন সেদিকে খুশবো বুঁ বুঁ করতো। তাই তা সুন্নত। তবে আমাদের খিয়াল রাখতে হবে এলকোহল যেন এতো বেশি না থাকে, যার ব্যবহার হারামের পর্যায়ে চলে যায়।

৫, ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া:
ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া। ঈদুল আযহাতে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব, তবে খিয়াল রাখতে হবে যে, মুস্তাহাব পালন করতে গিয়ে যেন ওয়াজিব ছুটে না যায়। অর্থ্যৎ ক্ষিধের কারণে যেন নামাযেই অমনোযোগীতা না আসে। ঈদুল আযহায় খালি পেটে থাকতে পারলে ভালো আর না পারলে নামাযের আগে ঈদুল ফিতরের মত কিছু খেয়ে যাবেন। কারণ মুস্তাহাব পালনে নেকি আছে আর না পারলে গোনাহ নেই।

৬, তাকবির: ঈদুল ফিতর বা রমাজানের ঈদে ছোট আওয়াজে তাকবীর বলা আর ঈদুল আযাহা বা কুরবানির ঈদে বড় আওয়াজে তাকবীর বলে বলে যাওয়া। আওয়াজ এত বড় যেন না হয়, যাতে পাশের জনের কষ্ট হয়।

৭, ঈদগাহে যাওয়ার নিয়ম: ঈদগাহে যাওয়ার সময় একরাস্তা দিয়ে যাওয়া আর আসতে আরেক রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। তা মুস্তাহাব বা সুন্নতে যায়েদাহ। এ সুন্নত শহরে পালন করা কঠিন বলে সুন্দর একটি সমাধান হল এই, যাওয়ার সময় রাস্তার একপাশ দিয়ে যাওয়া আর আসার সময় আরেক পাশ দিয়ে আসা। আরো সহজে বলি, যাওয়ার সময় রাস্তার ডান দিয়ে যাওয়া এবং আসার সময় ডান দিয়ে আসা। তা হলে সহজে সুন্নতটি আদায় হবে এবং শহরনগরে সবাই সুন্নতটি আদায় করতে পারবে।

৮, ঈদগাহে যাবে পায়ে হেটে। তবে তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে গাড়ি, বা অন্যভাবেও যাওয়া যাবে।

৯, নামাযে যাওয়া। সূর্য উদিত হয়েই সাথে সাথে ঈদের নামায পড়ে ফেলা ভালো। যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি পড়ার চেষ্টা করা ভালো। যাতে যোহর বা জুমার নামাযে সমস্যা না হয়।

১০, ঈদের নামাজের পূর্বে ফিতরা আদায় করা। এবছর (২০২২ সালে) ফিতরার জন্য জন প্রতি সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে।

ঈদের দিনের বর্জণীয়সমূহ: প্রতিটা বিষয়ের কিছু করণীয় যেমন থাকে তেমনি থাকে কিছু বর্জণীয়। ঈদুল আযাহাও এর ব্যতিক্রম নয়। এবার ঈদুল ফিতরের বর্জণীয় বিষয়ে বলছি।

বর্জণীয়গুলো হলো, ১, ঈদের দিনে রোজা রাখা। ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। হাদিসে পাকে নিষেধ করা হয়েছে। আবু হুরাইরা র. থেকে (মারফুয়ান) একটি হাদিস আছে। তাকে দুইদিন রোজা রাখা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এক: রমজানের ঈদ, দুই: কুরবানির ঈদের দিন। (বুখারী, মুসলিম)

২, বিজাতীয় সংস্কৃতি; বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ঈদ উদযাপন করা। যেমন, নাচ-গান, নানাধরণের ফৌকফেস্টিভাল করা ইত্যাদি বড়ই গোনাহের কাজ।

৩, অবাধ মেলামেশা; যেখানে সেখানে যত্রতত্র অবাধ মেলামেশা করা। না আছে ছেলেমেয়ের অনুভূতি আর না আছে তাদের অভিভাবকদের! আমি মুসলিম। আমার একটা ইতি ঐতিহ্য আছে আমরা যেন ঈদের আনন্দেমেলায় পড়ে তা ভুলে না যাই। শরিয়তি পর্দার খেলাফ যেন না হয় সেদিকে সজাগদৃষ্টি রাখা।

৪, ঈদ উৎসব: ঈদ উৎসব পালন করা ভালো, তবে ঈদী পালনের নামে বেহায়াপনার সয়লাবে আজ দেশ যে কোথায় যাচ্ছে, তা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা সাহিত্যপাঠে হুময়ূন আহমদ চলাফেরা নিয়ে বেশ চমৎকার বলেছেন।

৫, ঈদী; অর্থাৎ বড় ভাইবোন, আত্মীয় সজনের কাছ থেকে ঈদ সালামী নেয়া। যা অনেকসময় আনন্দের স্থানে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সবার অর্থনৈতিক অবস্থা তো আর এক না, ভিন্ন। যে আনন্দে পেরেশানি আছে তা আনন্দের মরিচিকা, মৌলিক কোনো আনন্দ নয়।

৬, নামায কাযা করা বা না পড়া:
ঈদের আনন্দে পড়ে আমরা অনেকে নামায-কালাম বাদ দিয়ে দিই, তা মস্তবড় মূর্খতা। যে আল্লাহ্‌ আনন্দ দান করেছেন আমরা সে আল্লাহ্‌কেই ভুলে গেলাম!
বিশেষভাবে কুরবানির ঈদে যোহরের নামাযে বেলায় নামাযী-বেনামাযীর মাঝে ফারাকটা কমে যায়!

৭,বনভোজন; বনভোজনের নামে আজ দেশে যে রীতি-রেওয়াজ চালু হয়েছে তাতে বেশ অনৈতিক কাজ চলে আর এক্সিডেন্টের কথা কী আর বলব! আপনারা নিজের ছেলেমেয়েকে অহেতুক এই আনন্দ থেকে বাঁচান! যদি ঘরোয়াভাবে হয় ভিন্ন কথা, তাতেও কিন্তু পর্দার বিষয় লক্ষণীয় এবং মান্য করতে হবে শরিয়তের সব বিষয়আশয়।

তাই ঈদের স্বরূপ ও উদযাপনের পদ্ধতি, ঈদকে ‘ওয়ীদ (শাস্তি) না বানাই। সাবধানতা অবলম্বন না করলে সীমালঙ্ঘনে মানুষ পা বাড়াই। আল্লাহ্‌ এই বারের রমজান, এই ঈদে সমস্ত পাপ ক্ষমা করে আগামী ঈদের পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করেন। আমিন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ