ডা. এম শমসের আলী: আমাদের সমাজে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষ্ঠান। ঈদে প্রত্যেক মুসলিম পরিবার সাধ্য অনুযায়ী উৎকৃষ্টমানের খাবারের আয়োজন করে থাকে এবং সবাই ঈদে প্রচুর পরিমাণে উন্নত খাবার-দাবার খেয়ে অভ্যস্ত এবং খেতে পছন্দ করেন।
যেসব ব্যক্তির বয়স ৫০ ঊর্ধ্ব, যারা বিভিন্ন ধরনের জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হার্টের অসুস্থতা ইত্যাদি। তাদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।
যে ব্যক্তিগণ হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা যে, তারা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার খেতে পারবেন না। ফলশ্রুতিতে তারা মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ব্যতীত অন্যান্য খাবার-দাবার খুব অধিক পরিমাণে গ্রহণ করে থাকেন।
উল্লেখ্য, ঈদের সময় যে কোনো খাবার খুব বেশি পরিমাণে খাওয়ার ফলে তাৎক্ষণিকভাবে রোগীর হার্টের অসুস্থতা চরম আকার ধারণ করতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে রোগীর হার্ট অ্যাটাক/হার্টস্ট্রোকের মতো অবস্থায় পতিত হতে পারে এবং অনেকেরই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
এতে কারও কারও জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সুতরাং যারা হৃদরোগে ভুগছেন, তারা অবশ্যই অতিভোজন থেকে বিরত থাকবেন। হৃদরোগীগণ পরিমিত মাত্রায় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও চর্বিবিহীন গরু, খাসির মাংস খেতে পারবেন। তবে এ ধরনের খাদ্যবস্তু অল্প পরিমাণে খাবেন। তাতে যেমন ঈদের আনন্দও ঠিক থাকবে এবং এসব খাদ্য গ্রহণ না করার মনঃকষ্টও দূর হবে।
যেসব ব্যক্তি ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তারাও অনেক সময় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করে এবং ভাত-রুটি ও শাক-সবজি খেয়ে জীবনধারণ করার প্রয়াস পান।
উল্লেখ করা যেতে পারে, ডায়াবেটিস রোগী মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খাবার পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে পারবেন। কারণ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল এ ধরনের খাবারে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তে সুগার বৃদ্ধি ঘটায় না। ডায়াবেটিস রোগী কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অবশ্যই স্বল্পমাত্রায় খাবেন, কারণ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার একটু বেশি পরিমাণে খেলে খুব দ্রুত রক্তের সুগার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
ঈদের সময় পোলাও ভাত বিভিন্ন ধরনের রুটি, সেমাই, সুজি, পায়েস, ফিরনি, হালুয়া, বিরিয়ানি, জর্দা ইত্যাদি খাবার গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান থাকে, ফলে খুব দ্রুত রক্তের সুগার বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
এতে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। প্রায় সবাই জানেন যে, ডায়াবেটিস একবার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে, তা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার বটে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রোটিন জাতীয় খাবার মানবদেহের কাঠামো মেরামতের জন্য সব ধরনের প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। শুধু ভাত, সবজি গ্রহণ করলে রোগী খুব সহজেই তার শারীরিক যোগ্যতা হারাবে বা যোগ্যতা কমতে থাকবে।
যাদের শারীরিক যোগ্যতা কমে যায়, তারা অতি সহজে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা বা রোগে আক্রান্ত হয়। তাই সবাইকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন জাতীয় খাবার অবশ্যই খেতে হবে। ডায়াবেটিস রোগী ঈদের সময় মাংসের তৈরি খাবার কোরমা, কাবাব, রেজালা, রোস্ট, গ্রিল, শিক কাবাব, শামী কাবাব, টিকা কাবাব, বিভিন্ন ধরনের মাছের তৈরি খাবার, কাকলেট, কোফতা, মাছ ভাজা ও ছোট বড় সব ধরনের মাছের তরকারি, ডিম, দুধ, ইত্যাদি স্বল্পমাত্রায় খেতে পারবেন।
যারা উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন কিন্তু ডায়াবেটিস/হার্টের সমস্যা নেই, তারা প্রায় সব ধরনের ঈদের খাবার পরিমিত মাত্রায় (স্বল্প) খেতে পারবেন। তবে যে সব খাবার তৈরিতে প্রচুর পরিমাণে তেল, ঘি অথবা চর্বি ব্যবহার করা হয়, সে সব খাবার বর্জন করবেন। যেমন : হালুয়া, বর্ফি, নেহারি, বিরিয়ানি এসব খাবার হৃদরোগ/ডায়াবেটিস রোগীও অবশ্যই বর্জন করবেন। উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি অতিমাত্রায় লবণযুক্ত খাবার অবশ্যই বর্জন করবেন। খাবারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
উপরে উল্লিখিত রোগীরা বাজারের বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করবেন। তবে পানি, মাঠা, ঘোল, বোরহানি ইত্যাদি খাবার গ্রহণ করতে পারবেন।
উপরে উল্লিখিত রোগীরা ঈদের সময় খাবারের সঙ্গে অবশ্যই অল্প লবণযুক্ত সালাদজাতীয় খাবার খাবেন এবং সঙ্গে অবশ্যই ফলমূল গ্রহণ করবেন। ঈদে উপরোক্ত খাদ্যাভ্যাস মেনে চলুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন, এটাই একান্তভাবে কাম্য।
-কেএল