আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: নিজের আত্মাকে যাবতীয় গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ রাখার নাম আত্মশুদ্ধি। আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে দেহ ও আত্মা এ দুয়ের সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন।
দেহের রয়েছে দুটি অবস্থা_সুস্থতা ও অসুস্থতা। ঠিক তেমনি আত্মারও রয়েছে, সুস্থতা ও অসুস্থতা। দেহ অসুস্থ হলে যেমন চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা করতে হয়, তেমনি আত্মা রোগাক্রান্ত হলে আত্মিক চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে সুস্থ করে তুলতে হয়। আর একেই বলে আত্মশুদ্ধি বা তাজকিয়াতুন নফস।
আল্লাহ তাআলা বলেন; সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে।(সূরা শামস এর ৯ নাম্বার আয়াত)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়। সূরা শামস এর ১০ নাম্বার আয়াত
আত্মশুদ্ধি সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন; ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের চেহারা বা মালের দিকে দেখেন না। বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকে’। [বুখারি ৫১৪৪, ৬০৬৬, মুসলিম ২৫৬৪) কুরআন ও হাদিসের বক্তব্যের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের সবারই অন্তরের চিকিৎসা প্রয়োজন।
এজন্যই তো অন্য এক হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, পুরো শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, পুরো শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সেই গোশতের টুকরাটি হলো অন্তর (কলব)। (সহিহ বোখারি: ৫২)
ইসলামি স্কলারদের মতে, আত্মশুদ্ধির পথ হলো_সহিহ দ্বীনি ইলমচর্চা, হালাল উপার্জন, যথার্থভাবে ফরজগুলো আদায়, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি ও সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ, মৃত্যু ও আখিরাতের চিন্তা, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ, সর্বাবস্থায় ও সব কাজে সুন্নতের অনুসরণ, সুন্দর চরিত্র ও আচরণ, সাহাবিদের জীবনী অধ্যয়ন, বেশি বেশি দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার, সৎ গুণাবলি অর্জন করা।
কিন্তু এই অন্তরের চিকিৎসার জন্য , আত্মশুদ্ধির জন্য অবশ্যই আমাদের নিসবত প্রয়োজন:
এই সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো'(সূরা আত তাওবাহ্ ১১৯ নাম্বার আয়াত) এরজন্য বিজ্ঞ নেককার আলেম ওলামাদের নিকট থেকে আমাদের রুহের খোরাক জোগাতে হবে। বুযুর্গদের সংস্পর্শে থাকতে হবে । আসা-যাওয়া করতে হবে।
জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি রহ. কত সুন্দর করে বলে গিয়েছেন_মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়। আলো দেওয়ার জন্য প্রথম নিজেকেই পুড়তে হয়।
সুতরাং, আত্মশুদ্ধি করার জন্য আমাদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। গুনাহের কাজ থেকে বাঁচার জন্য কষ্ট স্বীকার করতে হবে। আর আমাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হলে মুমিনের অন্তরে হেদায়েতের সুভাস ছড়িয়ে যাবে। যার দ্বারা অন্য মুমিন উপকৃতি হবে।
তবে, তাযকিয়ার সাধনা ও তাহলিয়াকে মৃত্যু পর্যন্ত অবশ্যই অব্যাহত রাখা জরুরি। কিছুদিন পর তা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না। তাহলে আমাদের মূল উদ্দেশ্য অর্জন হবে না। কেননা ,অন্তরকে অসুস্থ রাখা যাবে না।
তাই নফছের বিরুদ্ধে লড়াই করার বড় হাতিয়ার হচ্ছে_ বেশি বেশি জিকির করা: জিকির মানবাত্মার রোগ-ব্যাধি দূর করে, অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। পবিত্র কোরআনে বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরিশেষে হারিরি রহ. এর মতো বলতে চাই কতকাল তুমি তোমার বিভ্রান্তিতে অবিচল থাকবে এবং তোমার বিরুদ্ধাচরণের চারণভূমিকে উপভোগ্য মনে করবে? কখন তুমি তোমার দম্ভের প্রান্তসীমায় পৌঁছবে না? এবং তোমার খেলাধুলা থেকে বিরত হবে না? তুমি তোমার অপরাধ নিকটবর্তী লোক থেক লুকোচ্ছ?
অথচ তোমার প্রভুর কাছে কোন গোপন বিষয় গোপন নেই। তুমি কি ধারণা করছ যে, তোমার বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসবে তখন তোমার অবস্থা তোমার উপকার আসবে?অথবা তোমার কৃতকর্মের জন্য তোমাকে ধ্বংস করবে।
তখন কি তোমার সম্পদ পদবী তোমাকে রক্ষা করতে পারবে? তুমি কেন হেদায়েতের পথে চলছ না এবং তোমার অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করছ না? তুমি তোমার নফছকে বারণ করছ না। অথচ তোমার নফছ তোমার বড় শত্রু!
আল্লাহ তাআলা আমাকেও আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক। আমীন।
-এটি