হাসান মুরাদ।। প্রতিটি শুরুর শেষ থাকে। থাকে পাওয়ার আনন্দ,হারানোর বেদনা। এইতো সেদিন শুরু হল মাহে রমজান। মুসলিম বিশ্ব ছিল আনন্দে আত্মহারা। সে আনন্দ দিনে দিনে ফুরিয়ে আসছে। বিদায়ের বেদনা দিচ্ছে। সময় এখন প্রত্যাশা-প্রাপ্তির হিসাব মিলানোর।
কি প্রত্যাশা ছিল? কতটুকু অর্জন হলো? অপরাধের ক্ষমা কি করাতে পেরেছি? নাজাতের ফরমান কি লাভ করতে পারছি? আমাদের সংস্কৃতিটা ভিন্ন। রমজান শুরু করি উদ্যোমী হয়ে।
শেষ করি হেলা-অবহেলা করে। শেষ কে কীভাবে শেষ করতে হয় আমরা জানিনা সেটা। অথচ রাসুল স. উম্মতকে শিখিয়েছেন। নিজে করে দেখিয়েছেন।
হযরত আয়েশা রা. রাসুল সা. এর রমজানের শেষ দশকের আমলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সা. অন্য দিনগুলোর তুলনায় রমজানের শেষ দশকে বেশি ইবাদত করতেন। সহীহ মুসলিম- ১১৭৫ তিনি আরো বলেন, রাসুল সা. রমজানের শেষ দশকে পূর্ণ রাত জাগতেন।
পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন এবং নিজে কোমর বেঁধে (গুরুত্বদিয়ে) ইবাদতে মগ্ন হতেন। (সহীহ বুখারী- ২০২৪) হাদীস থেকে রমজানের শেষ দশকের গুরুত্ব স্পষ্ট প্রতিয়মান। মিল অমিলের জায়গাটা এখানেই। রাসুল-সাহবাগণ যখন শেষ দশকে ইবাদতে ভিন্ন গুরুত্ব দিতেন। আমরা তখন শপিং সাংস্কৃতিতে ব্যস্ত। বাড়ির সৌখিন্য,ঘরের সৌন্দর্য বর্ধনে মত্ত। বড়ো,বুড়ো, যুবোক,পৌড়, সকলেই জাগতিক বিষয়ে মশগুল।
আর নারি সমাজ যেন এক ধাপ এগিয়ে! প্রসাধনি যেন না হলেই নয়। ব্যবসায়িরা ব্যবসায় লিপ্ত। রাত-দিন লাভের আশায় আবিষ্ট। শেষ দশক যে আখেরাতের ব্যবসার উপযুক্ত সময় সে কথা ভাববার ফুরসত কই! শ্রমিক তো দিন শেষে প্রারিশ্রমিক পাই।
রোজা থেকে দিনভর না খাওয়ার ক্লান্তি, রাত জাগার কষ্ট। এসবের প্রতিদান তো আল্লাহ শেষ সময়ে দিবেন। অথচ উপযুক্ত সময়ে আমরা বিমুখ হয়ে পড়ি। আমাদের ইবদতে হয় তাড়াপনা।
অনেকে শেষ সময়ে হয় একেবারেই মসজিদ ছাড়া। মানবিক প্রয়োজন মানবের আছে। থাকবে হায়াত পর্যন্ত। তবে সেটাকে রাখতে হবে সীমাবদ্ধ। প্রাধান্য দিতে হবে আখেরাতকে।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, “বরং তোমরা দুনিয়াকে প্রাধান্য দিচ্ছ। অথচ আখেরাত অধিক উত্তম ও চিরস্থায়ী। সুরা আ’লা-(16-16) সাগরের দুটি ধারা বহমান। লবন ও মিষ্ঠ পানি;পাশাপাশি প্রবাহমান । একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয়না। রক্ত,গোবর ভেত করে গাভীর স্তনে দুধ নামে।
দুধ সে রক্ত,গোবর স্পর্শ করে না। এগুলো কোরআনের বর্ণনা। এখানে আছে আমাদের জন্য মাহ শিক্ষা। দুনিয়া আখেরাত দুটো পাশাপাশি। দুনিয়া থেকেই আখেরাত সঞ্চয় করতে হবে।
সাবধানে, সতর্ক হয়ে। দুনিয়ার মায়া,মমতা,লালসাকে স্পর্শ না করে। এখানে আমরা কতটা সফল? শেষ দশকে আছে বরকতপূর্ণ রাত; লায়লাতুল ক্বদর। ‘লাইলাতুল ক্বদর’ হাজার মাস হতে শ্রেষ্ঠ। মহিমান্বিত। সম্মানীত। যে মুমিন ক্বদরের রাত পেল সে ভাগ্যবান।
একবার রাসুল সা. শবে ক্বদরের সন্ধানে রমজানের প্রশম দশক এ’তেকাফ করলেন। কিন্তু পেলেন না। দ্বিতীয় দশক এ’তেকাফ করলেন। এবারও পেলেন না। তারপর শেষ দশক এ’তেকাফ করলেন। অতপর রাসুল সা. বললেন, তোমরা শেষ দশকে বেজোড় রাতগুলোতে ক্বদর অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারী - ২০১৬,। এ রাতে একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নিভৃতে নির্জনে দরবারে ইলাহিতে অশ্রæ ঝরাতে হবে।
আবেগ,অনভূতি, আকুতি, মিনতি হৃদয়ে উজাড় করে মালিকের কাছে চাইতে হবে। হাদীস শরীফ থেকে স্পষ্ট বার্তা পাওয়া যায়; বান্দা যদি পূর্ণ আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, আল্লাহ সেই বান্দাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেন। তবে এ রাতে আমরা কী প্রার্থনা করব? সমস্থ কল্যাণের দোয়া করব। তবে বিশেষ ভাবে হাদীসে শেখানো দোয়াটি করব। একজন সাহাবী বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ,যদি আমি জানতে পারি আজ লাইলাতুল কদর, তাহলে আমি কী দোয়া করতে পারি? রাসুল সা. বললেন,তুমি বলো اَللّهُمّ اِنَّكَ عَفُوّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي (আয় আল্লাহ! আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন)।
তিরিমিজি শরীফ- ৩৫১৩। প্রচলিত অর্থে ২৭ রমজানকে শবে ক্বদর বলে প্রচার করা হয়। মিডয়া এবং দায়িত্বশীলগণ এ বিষয়ে উদাসীন। পুরোনো কথাই প্রচার করে।27 রিমজন উপলক্ষে সরকারি ছুটিও ঘোষিত। যদিও ২৭ তারিখের একটি মত আছে, তবে নির্দিষ্ট নই। তাই আমাদের নির্দিষ্ট করা অনুচিৎ।
প্রবাদ বাক্য প্রসিদ্ধ“শেষ ভালো যার সব ভালো তার” বলা যায় রমজানের সফলতার সূত্রমুল শেষ দশক। তাই আমাদের একান্ত কর্তব্য রমজানের শেষ সময় টুকুর বিষয়ে যতœবান হওয়া। প্রয়োজনীয় কাজ অবশ্যয় সারতে হবে। তবে প্রয়োজন যেন হয় পরিমিত। শেষ দশকের আরো একটি ইবাদত হল এ’তেকাফ।
প্রতি মসজিদে একজন অবশ্যই সুন্নাত এ’তেকাফ করবে।যাদের কিছুটা ব্যস্ততা আছে তাদের জন্যও উচিৎ নফল এ’তেকাফ করা। সেটা হোক এক,দুই বা তিন দিন । নিজেরদের অবস্থা ভেদে।
বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে নফল এ’তেকাফ করা যেতে পারে। শেষ দশকে আমলযোগ্য আরেকটি কাজ হল, সদকাতুল ফিতর আদায় কারা। সামর্থ বানেরা ঈদগায়ে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করবে। কামনা করি নিয়ম প্রথার উর্দ্ধে গিয়ে সকলের শেষ দশক হোক প্রাণবন্ত।
মুসলিমদের প্রতিটি ঘর ভরে উঠুক ইবাদতের জ্যোতিতে। হৃদয়,মন হোক আলোকিত। সকলেই জাহান্নম থেকে মুক্তির সনস নিয়ে হোক চিরস্থায়ী জান্নাতের মালিক। আমিন!
-এটি