।।মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব।।
বিদায়লগ্নে এসে পৌঁছে গেছে রমযানুল মুবারক। যেন মাত্র সেদিন শুরু হলো। চাঁদ দেখার পর আমরা একে অপরকে রমযানের আগমনী সংবাদ দিলাম। একসাথে তারাবীর জামাতে শরিক হলাম। আশ্চর্য অনুভূতি নিয়ে জেগে উঠলাম সাহরীতে। উপলব্ধিময় প্রতীক্ষায় শরিক হলাম ইফতারের আয়োজনে।
এভাবেই শুরু হলো রমযান। এরপর চলতে থাকল একটি একটি করে দিন। প্রথম দশক চলে গেল। দ্বিতীয় দশকও গেল। এখন চলছে তৃতীয় দশক। হঠাৎই একদিন দেখা যাবে রমযান শেষ। ঈদুল ফিতরের জামাতে যাচ্ছে সবাই...।
অতীতের রমযানগুলোও এভাবেই গেছে। এরপরও মন-অনুভূতি পড়ে আছে অলস নিদ্রায়। অথচ চোখের সামনেই দেখেছিÑ কতজন আমাদের মাঝেই ছিল গত রমযানে। আজ নেই। নিজে শরিক হয়েছি তার জানাযায়। আগামী রমযানেও থাকবেনা অনেকে। তার জানাযাও হবে হয়তো আমাদের সামনে। মন তবু বুঝতে চায় নাÑ আমিও না থাকতে পারি আগামীতে! তখনও রমযান আসবে। চাঁদ উঠবে। তারাবীর জামাত হবে। সাহরীর আয়োজন হবে। ইফতারের প্রতীক্ষা হবে। সবাই থাকবে। শুধু আমি থাকব না...।
সফল তো তারাই যারা রমযানকে কাজে লাগিয়েছে। এই মহিমান্বিত সময়ে তাকওয়ার পথে অগ্রসর হয়েছে। আল্লাহ তাআলার আরও বেশি নৈকট্য লাভ করেছে।
কুরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়ামকে ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’-সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩
এই আয়াত থেকে পরিস্কার বুঝা যায়, রমযানের সিয়াম-সাধনার প্রধান উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। সে হিসাবে যে যত বেশি তাকওয়া অর্জন করেছে সে ততটাই সফলকাম। তাকওয়া শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো, বেঁচে থাকা। বিরত থাকা। পরিভাষায় তাকওয়া বলা হয়, আল্লাহ তাআলার কথা মনে করে আল্লাহ তাআলার নিষেধকৃত কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা। সহজ শব্দে সেটাকেই বলে, খোদাভীতি ও পরহেযগারী। এই গুণের অধিকারী ব্যক্তিকেই বলা হয়, মুত্তাকী।
তাকওয়া অর্জনের এই মহান মাস এখন শেষ প্রান্তে। এখন সময় হিসাব নেওয়ার। কতটুকু তাকওয়া অর্জন হয়েছে আমার? গোনাহ থেকে বাঁচার জন্য আরও কী পরিমাণ তাকওয়া দরকার?
রমযানে অর্জিত তাকওয়ার মাধ্যমে তো বান্দা ভবিষ্যৎ গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবেই। অতীত গোনাহের কী হবে? সে বিষয়ে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিস্কার বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমযান মাসে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে সওয়াবের আশায় কিয়ামে রমযান (অর্থাৎ তারাবীর নামায) আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার পিছনের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।’-সহীহ বুখারী, ২০০৯।
অতীতের সকল গোনাহ ক্ষমা হওয়া যে কত বড় প্রাপ্তি, ধ্যানমনে চিন্তা করা ছাড়া বুঝা কঠিন। রমযানের রোযা ও তারাবীর মাধ্যমে প্রাপ্ত এই মহাসুযোগ বছরে একবারই আসে। আর সতর্ক সচেতন ভাগ্যবান ব্যক্তিরা তাকে যথাযথভাবেই কাজে লাগায়।
এই শেষ সময়ে আমাদের উচিত সর্বশক্তি ব্যয় করে মেহনত করা। আর দীর্ঘ দীর্ঘ দুআ মুনাজাতে আত্মনিয়োগ করা। রমযানের সৌভাগ্য সফলতা ও গোনাহমাফি অর্জন করতে না পারলে যে ধ্বংস অনিবার্য!
উম্মতের সামনে আদর্শ রেখে যাওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। আম্মাজান আয়েশা রাযি. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমযানের) শেষ দশকে সবচেয়ে বেশি মেহনত করতেন।’-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৭৫
তিনি আরও বলেন, ‘শেষ দশক শুরু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারারাত জাগতেন। পরিবারের লোকদেরকেও জাগাতেন। অনেক মেহনত করতেন। এমনকি কোমর বেঁধে নিতেন।’-সহীহ বুখারী, হাদীস ২০২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৭৪
আমাদেরও উচিত শেষ দশককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করা। দুনিয়াবী কাজকর্ম কমিয়ে দেওয়া। কেনাকাটা ও এজাতীয় ব্যস্ততা এড়িয়ে চলা। যথাসম্ভব মসজিদে থাকা। যথাসাধ্য কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা। দুআ মুনাজাতে নিমগ্ন থাকা। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।
-কেএল